সার্টিফিকেশন কোর্স কী, কেন, কাদের জন্য
তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে পেশাগত দিক থেকে দক্ষ হওয়ার বিকল্প নেই। কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়াশোনার বিষয় থাকলেও পেশাগত জীবনে নানা রকম পেশাদার সনদপত্রের প্রয়োজন পড়ে। সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম বা কোর্স সাধারণত কোনো বিষয়ের ওপর দক্ষতা অর্জনের বিশেষ প্রশিক্ষণ। কেউ চাইলে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষ কোনো বিষয় শিখে একটি সনদ অর্জন করতে পারেন। এই সনদ দেশের প্রতিষ্ঠানে যেমন গুরুত্ব পায়, তেমনি বিদেশি প্রতিষ্ঠান, অনলাইন মার্কেটপ্লেস কিংবা যেকোনো প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য বিশেষায়িত দক্ষতার স্বীকৃতি দেয়।
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের একাধিক প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে দক্ষ কর্মী বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সনদপ্রাপ্ত কর্মীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এসব সনদ অর্জনে আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় বলে কর্মীর দক্ষতা যাচাই হয়ে যায় বলে কর্মীর কদর বাড়ে।
সার্টিফিকেশন কোর্স কী ও কেন প্রয়োজন
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বেশ কিছু স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান বা ভেন্ডর তাদের সেবা, পণ্য, সফটওয়্যার বা প্রযুক্তির ওপর যাঁরা দক্ষ হয়ে ওঠেন তাঁদের পরীক্ষার মাধ্যমে বিশেষ সনদ দিয়ে থাকে। প্রযুক্তি বা সেবার ওপর দক্ষতা অর্জনের পর ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই আন্তর্জাতিক মানের এই পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়। মাইক্রোসফট, ওরাকল, রেডহ্যাট, সান জাভা, আইবিএম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান মূলত ভেন্ডর হিসেবে পরিচিত।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, মূলত পেশাজীবীদের জন্যই সার্টিফিকেশন কোর্সগুলো বেশি কাজে লাগে। কিন্তু কেউ যখন কম্পিউটার সায়েন্স বা সমমানের কোনো বিষয় থেকে পড়াশোনা করে বের হন, তখন চাকরি ক্ষেত্রে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি পেশাদার সনদকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ জন্য পেশাদার সনদ অর্জন ও দক্ষতা অর্জন জরুরি। কেউ যদি নেটওয়ার্কিংয়ে আগ্রহী থাকেন, তবে তাঁর জন্য নেটওয়ার্কিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ, কেউ যদি সার্ভার, সিকিউরিটি বা আইটি অডিট বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে চান, তবে তিনি সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।
কোথায় প্রশিক্ষণ পাওয়া যায়
দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রথমত স্থানীয়ভাবে এ প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়। এরপর আন্তর্জাতিক সনদ অর্জন করতে অনলাইনে পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে হয়। এই সনদ অর্জন করতে পারলে বিশ্বের সবখানেই মর্যাদা ও গুরুত্ব পাওয়া যায়। প্রতিটি পরীক্ষার জন্য যোগ্যতা ও পরীক্ষা পদ্ধতি আলাদা। এ খাতসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোন সার্টিফিকেশন কোর্স করবেন তা নির্ভর করে ব্যক্তির আগ্রহের ওপর। কারও নেটওয়ার্কিং দক্ষতা থাকলে তার এ বিষয়ে কোর্স করাটা বেশি দরকারি হবে।
বাংলাদেশের জন্য এখন জনপ্রিয় কয়েকটি সার্টিফিকেশন হচ্ছে নেটওয়ার্কিংয়ের ক্ষেত্রে সিসকো, জুনিপার, মাইক্রোটিক।
সার্ভারের ক্ষেত্রে মাইক্রোসফট, ওরাকল, জাভা, কম্পসিয়া, আইবিএম, ডেল, রেডহ্যাটের সার্টিফিকেশন কোর্স রয়েছে। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সিইএইচ, সিআইএসএসপি, সিআইএসএম, সিসা, সিসিএসপি প্রভৃতি। যারা ডেটাবেজ নিয়ে কাজ করতে চান তাঁরা ওসিপি, ওসিএ, ওসিএম সার্টিফিকেশন নিতে পারেন।
প্রোগ্রামার বা ডেভেলপারদের জন্য এমসিএসডি ও এমসিআইটিপি কাজে লাগতে পারে। ভেন্ডর অনুসারে নিবন্ধন ফি কম–বেশি হয়। তবে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে অনেক সার্টিফিকেশন কোর্সে নিবন্ধন করা যায়।
কাজের সুযোগ কোথায়
যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি সনদ অর্জন করেন এবং নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলেন, তিনি পড়াশোনা শেষ করতে না করতেই বড় বড় প্রতিষ্ঠানের তথ্যপ্রযুক্তি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট দক্ষতাসম্পন্ন পোষ্টে নিয়োগ পান। বাংলাদেশের বাজারে এ ধরনের কর্মীর বেতন ৩০ হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পেশাদার সার্টিফিকেশন কোর্স করার নানা কারণ রয়েছে। এ ধরনের সনদ মূলত কর্মীকে প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের আস্থা অর্জনে সহায়তা করে। নিজের জীবনবৃত্তান্তে এ সনদ একটি অর্জন হিসেবে দেখানো যায়। এ ছাড়া এ খাতের বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরা সম্ভব হয়। কাজের জন্য যথোপযুক্ত দক্ষতা প্রমাণের জন্য সার্টিফিকেশন কোর্স তাই গুরুত্বপূর্ণ।
আছে প্রশিক্ষণদাতারাও
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উপযোগী বেশ কিছু সার্টিফিকেশন কোর্সের চাহিদা এখন অনেক বেড়েছে। ডেটা সায়েন্স, বিগ ডেটা, আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) অ্যান্ড মেশিন লার্নিং, ক্লাউড কম্পিউটিং, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, বিজনেস ইনটেলিজেন্স, নেটওয়ার্কিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডেভওপস, সাইবার নিরাপত্তা ও ডিজিটাল মার্কেটিংসহ বিভিন্ন খাতের দক্ষ কর্মী খুঁজছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। দেশের বাইরেও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। তিন মাস থেকে ছয় মাস মেয়াদি এসব কোর্স সম্পন্ন করতে ১০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।