৫ ডলারের কাজে ব্যর্থ হয়েছিলেন, ২৫ বছর বয়সী ফ্রিল্যান্সার রনির আয় এখন মাসে হাজার ডলার

খুলনার রনি হোসেন সফল একজন ফ্রিল্যান্সার
সংগৃহীত

রনি হোসেনের বয়স ২৫ বছর। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন খুলনা নগরের দৌলতপুর থেকে। মাসে আয় করেন গড়ে এক হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লাখ টাকার বেশি। এই রনিই প্রথমে মাত্র ৫ ডলারের (৫০০ টাকার মতো) একটি কাজ পেয়েছিলেন, সেটি সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ভেবেছিলেন ফ্রিল্যান্সিং তাঁকে দিয়ে হবে না। এরপরও হাল ছাড়েননি। দিনের পর দিন লেগে থেকে এখন তিনি সফল ফ্রিল্যান্সার।

শুরুটা মোটেও সহজ ছিল না। একটি বেসরকারি সংস্থার ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে কিনেছিলেন কম্পিউটার। এ–ও জানতেন নিম্নবিত্ত বাবা ঋণের টাকা শোধ করতে পারবেন না। সেটা জেনেও ঝুঁকিটা নিয়েছিলেন। প্রথম কাজে ব্যর্থ হয়ে ঘুরে দাঁড়ান ধীরে ধীরে।

আরও পড়ুন

খুলনার সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন রনি হোসেন। এর আগে যশোরে কেশবপুরের কাটাখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে এসএসসি এবং ২০১৭ সালে অভয়নগরের ভবদহ মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। বাবা জামিরউদ্দীন একজন কৃষক। তাঁর দুই মেয়ে এক ছেলের মধ্যে রনি হোসেন মেজ। গতকাল মঙ্গলবার মুঠোফোনে রনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এইচএসসির পর হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে পড়াশোনা করার জন্য খুলনায় থাকতে শুরু করি। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির আগে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। এমনকি অনলাইন থেকে আয় করা যায়, এটাও বিশ্বাস করতাম না।’

করোনাকালের আগে প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাতজনকে পড়াতেন। নিজের পড়াশোনা চালানোর পাশাপাশি রোজগার করতে হতো তাঁকে। কেননা, পরিবারে সচ্ছলতা ছিল না। করোনাকাল শুরু হলে টিউশনি বন্ধ হয়ে যায়। তখন রনির মাথায় আসে কীভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। একদিন ফেসবুকে স্কিলআপার নামের একটা গ্রুপের খোঁজ পান। অনলাইনে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের দেওয়া–নেওয়ার ওয়েবসাইটে (মার্কেটপ্লেস) যেসব কাজ পাওয়া যায়, সেগুলো শেখানো হয় স্কিলআপারে। সেখানে অনলাইনে কয়েকটি কোর্স করেন রনি। মূলত ডিজিটাল বিপণন শেখেন তিনি। ২০২০ সালেই জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস ফাইভআরে নিজের একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। ধীরে ধীরে কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে তেমন আয় না হলেও পরে নিয়মিত কাজ পেতে থাকেন। কাজ শিখতে শিখতে আরও দক্ষ হয়ে বড় বড় প্রকল্প পেতে থাকেন বিদেশের গ্রাহকদের কাছ থেকে। একটা সময় কম্পিউটার কেনার ঋণের টাকা শোধ করেন। তাঁর বাবার তিন লাখ টাকার একটা ঋণও পরিশোধ করে দেন।

আরও পড়ুন

রনি বলেন, ‘একটা বিষয় উপলব্ধি করলাম, ফ্রিল্যান্সিংয়ে আয় করার পাশাপাশি নিজের যে একটা স্বাধীনতা রয়েছে, এটি অন্য কোনো চাকরিতে নেই।’ রনি এখন নিজের ও পরিবারের সব চাহিদা পূরণ করছেন নিজেই। তিনি রনি বলেন, ‘এটা সম্ভব হয়েছে ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্যই। তবে এই ক্ষেত্রে কাজ করতে ও সফল হতে দক্ষতা জরুরি। সঙ্গে নিজের আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ হয়ে এই পেশায় আসা ভালো। হতে পারে গ্রাফিকস, এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা ডিজিটাল বিপণন)—একটা বিষয়ে দক্ষতা থাকতে হবে, সঙ্গে ধৈর্য। তবেই সফলতা আসবে।’ রনির ইচ্ছা বেকার কিন্তু অদম্য মানসিকতার তরুণদের ফ্রিল্যান্সিংয়ে উৎসাহিত করা।