ইলন মাস্ক ও পরাগ আগরওয়ালের কথোপকথনে যা ছিল

পরাগ আগরওয়াল ও ইলন মাস্ক
ছবি : রয়টার্স

সম্প্রতি একটি মামলার নথিতে মার্কিন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক এবং টুইটারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পরাগ আগরওয়ালের মধ্যে আদান-প্রদান হওয়া কিছু বার্তা ফাঁস হয়েছে। ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে টুইটার কেনার প্রস্তাব ফিরিয়ে নেওয়ার পর টুইটার কর্তৃপক্ষ ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে মামলা করে। নথিতে ফাঁস হওয়া ওই বার্তাগুলোতে দেখা যায়, ইলন মাস্ক ও পরাগের সম্পর্কের শুরুটা বেশ গাঢ় হলেও পরে তা উল্টোদিকে মোড় নেয়।

গত মার্চ মাসের শেষে ইলন মাস্ক টুইটারের শেয়ার কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখান এবং টুইটারের পরিচালনা পর্ষদে বসার একটা সম্ভাবনা প্রকাশ পায় বার্তাগুলো থেকে।

গত ২৭ মার্চ ইলন মাস্কের সঙ্গে পরাগ প্রথম যোগাযোগ করেন। প্রথম পাঠানো মেসেজে পরাগ লেখেন, ‘হাই ইলন! সরাসরি যুক্ত হতে পেরে দারুণ লাগছে। কথা বলতে পারলে ভালো হতো।’

এরপর পরাগের মেসেজে একটি লাইক রিঅ্যাকশন ইলন মাস্ক লেখেন, ‘হয়তো আজ রাত আটটায়?’

এর মধ্যে তাঁদের চুক্তি দ্রুত অগ্রসর হওয়ার সুবাদে ৩১ মার্চ নাগাদ সান হোসে শহরের আশপাশে এক নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।

বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন ইলন মাস্ক টুইটারের একজন সদস্য হতে চলেছেন--এমন সম্ভাবনা দেখে পরাগ আগরওয়াল বেশ উৎফুল্ল হন। মাস্কের সঙ্গে দেখা করে আগরওয়াল যে বেশ খুশি হন, সেটা ওই বার্তায় প্রকাশ পায়।

এসব ঘটনার কিছুদিন পরেই ইলন মাস্ক টুইটারের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ঘোষণার পর আগারওয়াল মাস্ককে আরেকটি বার্তা পাঠিয়ে তিনি বিষয়টি নিয়ে ‘বেশ উত্তেজিত’। যেহেতু ততক্ষণে টুইটারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ঘোষণাটি ছড়িয়ে পড়েছে ফলে বিভিন্ন মহল থেকেই মাস্কের কাছে বার্তা আসতে থাকে।

পডকাস্টার জো রিগ্যান এক বার্তায় মাস্কে জিজ্ঞেস করেন যে, তিনি (মাস্ক) টুইটারকে ‘সেন্সরশিপ হ্যাপি মোব’ থেকে বের করে আনবে কি না। উত্তরে মাস্ক বলেন, ‘আমি কিছু পরামর্শ বা উপদেশ দেব, যা টুইটার মানতেও পারে, নাও মানতে পারে।’

পরবর্তীতে ৫ এপ্রিল টুইটারের সাবেক প্রধান নির্বাহী জ্যাক ডোর্সি মাস্ককে একটি বার্তায় বলেন, পরাগ আগরওয়াল একজন অসাধারণ প্রকৌশলী হলেও টুইটার বোর্ডের অবস্থা অনেকটাই শোচনীয়।

তবে এদিকে ৭ এপ্রিল নাগাদ আগরওয়াল ও মাস্ক কোডিং ক্রেডেনশিয়ালস নিয়ে কাজ শুরু করলে আপাতদৃষ্টিতে তাঁদের মধ্যে সন্তোষজনক পেশাদার সম্পর্কের শুরু হয়।

পরবর্তীতে মাস্ক একটি বার্তায় লেখেন, ‘আমি বিগত ২০ বছর ধরে “হেভি সফটওয়্যার” নিয়ে কাজ করেছি। তবে প্রোগ্রাম ম্যানেজারদের চেয়ে হার্ডকোর প্রোগ্রামিংয়ে এমন দক্ষ প্রকৌশলীদের সঙ্গে আমি কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।’

এই কথার জবাবে আগরওয়াল লেখেন, ‘আমাদের পরবর্তী কথোপকথনে একজন প্রধান নির্বাহীর বদলে আমাকে একজন প্রকৌশলী বলে বিবেচনা করবেন। এরপর দেখা যাক আমরা কাজ নিয়ে কতদূর এগিয়ে যেতে পারি।’

মাস্ক এতে সায় দিয়ে লেখেন, ‘আপনি বিষয়টি ধরতে পেরেছেন।’

তবে এরপর থেকেই ছন্দপতন ঘটতে থাকে।

৯ এপ্রিল ইলন মাস্ক তাঁর টুইটে এমন কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেন যাদের টুইটারে সর্বোচ্চ সংখ্যক ফলোয়ার আছে। এসব ব্যক্তিরা টুইটারে কেন সরব নয়—এমন প্রশ্ন তুলে মাস্ক বলেন, ‘টুইটার কি তাহলে মারা যাচ্ছে?’

মাস্কের এমন টুইট দেখার পর আগরওয়াল ক্ষিপ্ত হোন। এরপর আগরওয়াল মাস্ককে একটি বার্তা পাঠিয়ে বলেন, ‘টুইটার কি তাহলে মারা যাচ্ছে?’—এটা টুইট করার ব্যাপারে আপনার স্বাধীনতা আছে। এমনকি টুইটার সম্পর্কে যেকোনো কিছুই বলতে পারেন। তবে আমার এটা বলা দায়িত্ব যে, এ ধরনের কাজ বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় টুইটারের উন্নতির জন্য কোনোভাবেই সাহায্য করবে না।’

আগরওয়াল আরও বলেন, ‘পরেরবার যখন আমাদের কথা হবে, তখন অভ্যন্তরীণ ক্ষোভের বিষয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আপনাকে বলব এবং এই বিষয়টা আমাদের কর্মদক্ষতা কীভাবে নষ্ট করে সেটাও বলব।’

তিনি কী করবেন আর কী করবেন না—সেটা বলে দেওয়ার বিষয়টি ইলন মাস্ক একদমই পছন্দ করলেন না। বিশেষ করে, কোন কোন বিষয়ে তিনি টুইট করবেন এটা বলা।

পর্দার আড়ালে কী ঘটছে, সেটা পুরোপুরি নিশ্চিত না হওয়া গেলেও ফাঁস হওয়া বার্তাগুলো দেখে তা অনেকটাই বুঝা যায় যে, ইলন মাস্ক এই ব্যপারে বেশ ক্ষিপ্ত হয়েছেন। এর কয়েক ঘণ্টা পরই তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে আগরওয়ালকে বেশ কিছু বার্তা পাঠান।

এসব বার্তার মধ্যে ইলন মাস্ক বলেন, ‘আমি এই বোর্ডে যোগ দিচ্ছিনা। এটা শুধু শুধু সময় নষ্ট। তবে টুইটারকে প্রাইভেট কোম্পানি করার প্রস্তাব দিতে পারি।’

এই মেসেজগুলো দেখে আগারওয়াল কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েন।

এরপর থেকেই ইলন মাস্ক আর টুইটার কর্তৃপক্ষের সম্পর্কের ক্রমাগত অবনতি হয়। এর ধারাবাহিকতায় গত জুলাই মাসে মাস্ক টুইটার ক্রয়ের চুক্তি থেকে সরে আসতে উদ্যত হন। তবে টুইটার কর্তৃপক্ষ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টুইটার বিক্রির জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে।

অক্টোবরের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ডেলওয়ারের আদালতে চলমান মামলার রায়ে সিদ্ধান্ত হবে যে, মাস্ককে ছাড় দেয়া হবে নাকি প্রতিষ্ঠানটি কিনতে বাধ্য করা হবে।

তবে ফাঁস হয়ে যাওয়া বার্তাগুলো থেকে এটা পরিষ্কার যে, টুইটারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আর ইলন মাস্কের মধ্যে চলা শীতল যুদ্ধ অনেক দূর গড়িয়েছে৷

মাস্ককে যদি টুইটার কিনতে বাধ্য করা হয় তাহলে পরাগ আগরওয়াল এই প্রতিষ্ঠানে ভবিষ্যতে বহাল থাকবেন না সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে তাঁদের ফাঁস হয়ে যাওয়া কথোপকথন।

সূত্র: বিবিসি

আরও পড়ুন