ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলায় সর্বশেষ প্রযুক্তিতে আগ্রহ

ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলায় শেষ দিনে দর্শকদের ভিড়
ছবি: প্রথম আলো

তিন দিনের ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার শেষ দিন আজ। সকাল থেকেই তাই দর্শনার্থীদের ভিড়ে জমে উঠেছে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মেলা প্রাঙ্গণ। ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বশেষ বিষয়গুলো জানতে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগ দর্শকের।

আজ দুপুরে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগসহ বেশ কয়েকটি স্টলে শিশুদের ডিজিটাল ক্লাসরুম, শিক্ষা উপকরণ ও প্রযুক্তির সঙ্গে সরাসরি পরিচিত করানো হচ্ছে। মেলা দেখতে আসা বীর মুক্তিযোদ্ধা কৃষিবিদ মো. নুর হোসাইন চেীধুরী বলেন, ‘দেশ স্বাধীন করে একসময় হতাশা বোধ করতাম। কিন্তু এখন দেশের এই অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও কানেক্টিভিটি দেখে আবার আশার সঞ্চার হচ্ছে মনে। ডিজিটালের মতো সময়মতো আমরা স্মার্টও হব আশা করি।’

মেলার তিন দিন জুড়ে ছিল বেশ কটি সেমিনার। এসব সেমিনারে মানুষের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি। আজ ‘স্মার্ট সিটি বিনির্মাণ ও প্রযুক্তির মহাসড়কে বাংলাদেশ’ শীর্ষক শেষ সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘করোনাকালে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধাগুলো ভোগ করেছি। বাংলাদেশের মতো বড় জনসংখ্যার দেশে সম্পূর্ণভাবে নাগরিক সুবিধা সবার কাছে পৌঁছে দিতে হলে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। ঢাকা শহরকে ঢেলে সাজিয়ে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তর করতে হবে। এ জন্য বড় রাস্তা, খেলার মাঠে এবং প্রতি মহল্লায় একটি করে মানসম্মত প্রাইমারি স্কুল গড়ে তোলা হবে। নতুন প্রজন্মকে প্রযুক্তিবান্ধব করে গড়ে তোলার বিকল্প নেই।’

তরুণদের উদ্ভাবন ছিল ইনোভেশন জোনে
ছবি: প্রথম আলো

সেমিনারের সূচনা বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা থেকে একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন। এই মেলা শিক্ষা বা জ্ঞান অর্জনের একটি জায়গা। শিশু থেকে শুরু করে প্রবীণ মানুষেরাও এই মেলায় এসেছেন এবং নতুন নতুন অভিজ্ঞতা নিয়েছেন।

সেমিনারে নারায়াণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রকল্প বাস্তবায়নে দপ্তরগুলোর সমন্বয়হীনতার সমালোচনা করেন। একটি ঘনবসতিপূর্ণ শহর এবং একটি পৌরসভাকে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তর করার বাধাগুলোকে চিহ্নিত করে পরবর্তী পরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানান তিনি।

টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষক টি আই এম নূরুল কবিরের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের কারণে এই দেশ একটি ডিজিটাল সরকার পেয়েছে। জনগণ ডিজিটাল সুবিধাগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত হতে পেরেছে। আমরা সাবমেরিন কেব্‌লের মাধ্যমে ব্যান্ডউইডথ বাড়ানোর কাজ করছি।’

সেমিনারে আলোচক হিসেবে আরও ছিলেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ইমদাদুল হক, এমটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অব.) প্রমুখ।

ইনোভেশন জোনে তরুণদের উদ্ভাবন

তিন দিনের ডিজিটাল মেলায় সবচেয়ে জমজমাট ছিল ইনোভেশন জোন। এখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ৬৬টি প্রকল্প প্রদর্শন করেছেন। এই জোনে পরিবেশবান্ধব, নবায়নযোগ্য একটি বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং স্টেশন আগত দর্শনার্থীদের দেখাচ্ছিলেন ‘ইকো-চার্জ’ নামে একটি উদ্যোগ। প্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা মোহাম্মাদ সাহেদ হোসেন জানান, তাঁদের উদ্ভাবিত উদ্যোগটি  বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং স্টেশন তৈরি করেছে। এটি স্বল্প ক্ষমতার বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম। মূলত সৌরবিদ্যুৎকে প্রথমে ব্যাটারিতে ধারণ করা হবে। পরে সেই ব্যাটারি দিয়ে গাড়ি চার্জ করা হবে। যখন সৌরবিদ্যুৎ যথেষ্ট পরিমাণ থাকবে না, তখন জাতীয় গ্রিড থেকে গাড়ি চার্জ হবে। কাজটা হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে।

‘হিল হোমস’ নামের আরেকটি উদ্যোগ ই-স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে। এর উদ্যোক্তারা জানান, স্বাস্থ্যসেবা হাতের মুঠোয় নিয়ে আসার জন্য কাজ করছে নতুন এ উদ্যোগ। সময় ও অর্থ বাঁচিয়ে ঘরে বসেই সব রকম সুবিধা পাওয়া যাবে হিল হোমস অ্যাপের মাধ্যমে। রোগীদের প্রাধান্য দিয়ে বাসায় চলে যাবে ল্যাব। নমুনা সংগ্রহ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরীক্ষা সম্পন্ন করার পর রিপোর্টও অ্যাপের মাধ্যমে রোগীর কাছে পাঠানো হবে। সাধ্যের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে হিল হোম‍স। ঢাকায় ১০টির বেশি ল্যাবের মাধ্যমে বিশেষ ছাড়ের সুবিধাও দিচ্ছে সংস্থাটি।

মেলার মূল আয়োজক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। বাস্তবায়ন সহযোগী হিসেবে ছিল ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)।