নিউক্লিয়ার বর্জ্য সংরক্ষণ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে

একটি পারমাণবিক চুল্লিছবি: রয়টার্স

একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি থেকে শক্তি সংগ্রহ করা হয়। শক্তিসংগ্রহের পর যে অবশিষ্ট বর্জ্য থাকে, তা লাখ লাখ বছর ধরে তেজস্ক্রিয় থাকে। এই বর্জ্যের সবচেয়ে বড় সমস্যা সৃষ্টিকারী উপাদানের মধ্যে একটি আয়োডিন-১২৯ বা আই-১২৯। এটি একটি শক্তিশালী আইসোটোপ, যা সহজে ক্ষয় হয় না। এই উপাদান মানবদেহের মধ্যে বিশেষ করে থাইরয়েডে প্রবেশ করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এ কারণেই আই-১২৯ নিউক্লিয়ার বর্জ্য মোকাবিলাকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলা হয়।

বর্তমানে বিভিন্ন দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। কিছু দেশ বর্জ্যকে মাটির গভীরে পুঁতে রাখে। আবার অন্য অনেক দেশ ফিল্টার করে পরিবেশে ছেড়ে দেয়। ফ্রান্স সরাসরি সমুদ্রে ছেড়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটিসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় গবেষণাগার বিভিন্ন কৌশলের মধ্যে তুলনা করেছে। গবেষকেরা আই-১২৯ পরিবেশে নিঃসরণ করলে কীভাবে মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে, তা নিয়ে তথ্য বের করেছেন।

আই-১২৯ এমন কিছু নয়, যা আমরা দেখতে ও গন্ধ নিতে পারি। অনুভব করা যায় না। আই-১২৯ নিউক্লিয়ার বর্জ্যের একটি বড় সমস্যা। এটি দীর্ঘকাল ধরে টিকে থাকে। আই-১২৯ উপাদানের অর্ধজীবন প্রায় ১ কোটি ৫৭ লাখ বছর। আই-১২৯ মাটি ও পানির মধ্য দিয়ে সহজে ভ্রমণ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে বর্জ্য সংরক্ষণ নিরাপত্তা পরিকল্পনায় আই-১২৯ বর্জ্যকে একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা পানিতে আই-১২৯ পরিমাণ প্রতি লিটারে মাত্র ৫ দশমিক ৬৬ ন্যানোগ্রাম পর্যন্ত সীমিত করেছে। যেকোনো তেজস্ক্রিয় উপাদানের জন্য নির্ধারিত সর্বনিম্ন সীমা এটি।

বিভিন্ন দেশে নিউক্লিয়ার বর্জ্য ও পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় ভিন্নতা দেখা যায়। ফ্রান্স তাদের খরচ হয়ে যাওয়া পারমাণবিক জ্বালানি পুনর্ব্যবহার করে। সেখানে প্রতিবছর প্রায় ১৫৩ কিলোগ্রাম আই-১২৯ সমুদ্রে নিষ্কাশন করা হয়। নিয়ন্ত্রক সীমার মধ্যে থাকলেও গবেষকেরা দেখেছেন, এই পদ্ধতিতে জ্বালানিতে ব্যবহৃত আই-১২৯ উপাদানের প্রায় ৯০ শতাংশ পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে নিউক্লিয়ার বর্জ্যকে পাত্রে সিল করে মাটির গভীরে পুঁতে দেওয়া। এ ছাড়া অনেক দেশে আই-১২৯ উপাদানকে অগভীর ভূগর্ভস্থ স্থানে সংরক্ষণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে অনেক ঝুঁকি থাকে। শত শত বছর পরে মানুষ ভুলবশত ভূগর্ভস্থ স্থান খনন করলে আরও ঝুঁকি বাড়বে।

নিউক্লিয়ার বর্জ্য সংরক্ষণ নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বাড়ছে। ভবিষ্যতে কোনো ব্যর্থতার কারণে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। বিজ্ঞানী হারুকো ওয়েনরাইট বলেন, আই-১২৯ সংরক্ষণ জরুরি। কিছু দেশ বিপুল পরিমাণে আই-১২৯ পরিবেশে ছেড়ে দিচ্ছে। পরিবেশ সুরক্ষার ইতিহাসে ১৯৬০ দশক থেকে পারমাণবিক বর্জ্য নিক্ষেপ ও নিঃসরণ নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে। বায়ু ও পানিতে বর্জ্য মুক্ত করার কারণে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

সূত্র: আর্থ ডটকম