বেসিসের এজিএম স্থগিত করতে ডিটিওর নির্দেশ

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের প্রতীকসংগৃহীত

১৬ মার্চ অনুষ্ঠেয় দেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজন স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক বাণিজ্য সংগঠন (ডিটিও)। বেসিসের সদস্য সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ডাকাতিয়ার স্বত্বাধিকারী মো. ফাইকুজ্জামানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এজিএম স্থগিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। চিঠিতে সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অডিট কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পন্ন করে এজিএম আয়োজনের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বেসিসের নিরীক্ষা প্রতিবেদন (অডিট রিপোর্ট) যথাযথ নিয়ম মেনে করা হয়নি বলে অভিযোগ এনে ১০ মার্চ ডিটিও বরাবর আবেদন করেন মো. ফাইকুজ্জামান। সেই আবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি এক নোটিশে ১৬ মার্চ বেসিসের ২৫তম এজিএম আহ্বান করা হয়েছে। ৪ মার্চ সব সদস্যকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন পাঠানো হয়। তবে সেটি নির্বাহী কমিটি অনুমোদিত নয়। গত বছর অনুষ্ঠিত ২৪তম সাধারণ সভায় মিজান অ্যান্ড কোং নামের একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অডিট ফার্মকে হিসাব নিরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানানো হয়। কিন্তু পরে অধিকারী অ্যান্ড কোং নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বেসিসের নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

মো. ফাইকুজ্জামানের আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নিয়ম না মেনে বেসিসের কার্যনির্বাহী পর্ষদের অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে অডিট করানো হয়েছে। সেই প্রতিষ্ঠানের সম্পন্ন করা নিরীক্ষা প্রতিবেদন নির্বাহী পর্ষদের সভায় অনুমোদন না করিয়ে সদস্যদের কাছে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে নির্বাহী পর্ষদের তিন সদস্য আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) জানিয়েছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে বেসিসের সংঘবিধি ২০.৩ মেনে সঠিকভাবে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে এজিএম আহ্বানের জন্য ডিটিওর নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মো. ফাইকুজ্জামান বৃহস্পতিবার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, অডিট নিয়মতান্ত্রিকভাবে সম্পন্ন হয়নি। এ কারণেই ডিটিওর মধ্যস্থতা ও নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। সঠিক নিয়মে অডিট প্রতিষ্ঠান নিয়োগ এবং সেই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পুনরায় নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি ও নির্বাহী পর্ষদে তা অনুমোদন করে তবেই এজিএম আহ্বান করা উচিত।

ডিটিওর কাছ থেকে এজিএম স্থগিতের নির্দেশনার ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, রমজান মাসের নির্ধারিত কর্মদিবসের পর বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ৪৬ মিনিটে এজিএম স্থগিতের ই-মেইল বেসিসে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এর পরদিন শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি। তাই এক দিন পর শনিবার এজিএম বন্ধ করা কীভাবে সম্ভব? তবে এরই মধ্যে আমরা ডিটিও বরাবর চিঠি (ই-মেইল) পাঠিয়েছি। আশা করি, ডিটিও আমাদের চিঠির উত্তর দিয়ে শনিবারের আগেই সহযোগিতা করবে। আমরা ডিটিওর নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছি।’

রাসেল টি আহমেদ প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা বিস্মিত হয়েছি। সুনির্দিষ্ট কোন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এজিএম স্থগিত করতে বলা হয়েছে, সেটির বিস্তারিত আমরা এখনো জানি না। সাধারণত ডিটিওর কাছে খুব সাধারণ বিষয় নিয়ে অভিযোগ করলেও সেটার শুনানি করা হয়। কিন্তু এখানে কোনো শুনানি ছাড়াই এক তরফা সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। বেসিসের দুই হাজারের বেশি সদস্য এজিএমের জন্য অপেক্ষায় আছেন।’
প্রসঙ্গত, নির্বাচনের মাধ্যমে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দুই বছর মেয়াদি কার্যনির্বাহী পর্ষদ গঠিত হয়। গত জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের কারণে বেসিসের পরবর্তী কমিটির নির্বাচন কিছুটা পিছিয়ে আগামী মে মাসে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।