প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ল্যাপটপ উপহার পেলেন কাকরকান্দির তৃষ্ণা দিও

কাকরকান্দিতে তৃষ্ণা দিওর হাতে ল্যাপটপ তুলে দিচ্ছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী
ছবি: সংগৃহীত

আজ বৃহস্পতিবার। ঘড়িতে তখন সকাল নয়টা। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দিতে গারো সম্প্রদায়ের ফ্রিল্যান্সার তৃষ্ণা দিওর বাড়িতে অনেকেই অপেক্ষা করছেন। পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজনদের পাশাপাশি এই বাড়িতে এসেছেন আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ফ্রিল্যান্সাররা। সবারই অপেক্ষা সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রীর জন্য।

আজ সকাল ৯টা ২০ মিনিটে তৃষ্ণার বাড়িতে এসে পৌঁছালেন আইসিটি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ। তিনি তৃষ্ণার জন্য সঙ্গে করে এনেছেন একটি ল্যাপটপ কম্পিউটার। তৃষ্ণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার। সেটা তৃষ্ণার হাতে তুলে দিলেন প্রতিমন্ত্রী।

তৃষ্ণার বাড়িতে সমবেতদের উদ্দেশ্যে জুনাইদ আহমেদ বলেন, ‘আজ আমরা তৃষ্ণা দিওর সফলতায় আনন্দিত। ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প আসলে তরুণদের উৎসর্গ করা হয়েছিল। কাকরকান্দির মতো গ্রামে বসে তৃষ্ণা দিও ডলার আয় করছেন—এটাই আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ। কাকরকান্দি গ্রামে ডিজিটাল ল্যাবসহ ডিজিটাল ভিলেজ স্থাপন করা হবে।’

গত ২৩ আগস্ট প্রথম আলো অনলাইনে ‘কাকরকান্দি গ্রামে বসেই ডলার আয় করেন তৃষ্ণা দিও’ শিরোনামের প্রতিবেদনে ফ্রিল্যান্সার তৃষ্ণা দিওর বরাতে উল্লেখ করা হয়েছিল কাকরকান্দি গ্রামে প্রতিদিনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। ফলে আইপিএস ব্যবহার করেও ল্যাপটপ বা কম্পিউটার দীর্ঘক্ষণ চালানো যায় না। তৃষ্ণা দিও বলেছিলেন, ‘বিদ্যুৎ থাকলে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করে মাসে আমার আয় হতো দুই লাখ টাকা।’

নিজের বাড়িতে অতিথিদের সঙ্গে তৃষ্ণা দিও। (বাঁ দিক থেকে—সুবীর নকরেক, জুনাইদ আহমেদ, তৃষ্ণা দিও)
ছবি: সংগৃহীত

এর পরপরই তরুণ ফ্রিল্যান্সারদের টানা কাজ করার জন্য শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি গ্রামে বিদ্যুতের লোডশেডিং কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২৭ আগস্ট ২০২২ ফলোআপ করা হয় ‘শেরপুরের কাকরকান্দি গ্রামে বিদ্যুতের লোডশেডিং কমল’ শিরোনামে প্রথম আলোতে আরেকটি খবর প্রকাশিত হয়। আজ গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল এখনো তুলনামূলকভাবে কাকরকান্দিতে লোডশেডিং কম।

২০১৯ সালে রাজধানীর এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) সম্পন্ন করে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে মানবসম্পদ বিভাগে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন তৃষ্ণা দিও। কাজের ধরনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারায় কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে চলে যান নিজ গ্রাম কাকরকান্দিতে। গ্রাম থেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জীবনবৃত্তান্ত নিয়মিত পাঠাতে থাকেন। তবে কোনো সাড়া পাননি। এমন সময় পরিচিত একজনের কাছে জানতে পারেন, ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করা যায়। দেরি না করে ময়মনসিংহের নকরেক আইটি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন গ্রাফিকস ডিজাইন কোর্সে। প্রতি শুক্র ও শনিবার গ্রাম থেকে ময়মনসিংহে যেতেন ক্লাস করতে। টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চলের গারো সম্প্রদায়ের তরুণ সুবীর নকরেক এই ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা। নকরেক আইটি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েই তৃষ্ণা ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শুরু করেন।

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সুবীরকে ধন্যবাদ জানাই যে সারা বাংলাদেশে তরুণদের দক্ষ করে তুলছে। আমরা ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্য ব্যবস্থা করছি। আজ তৃষ্ণা দিওকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ উপহার দিলাম এবং খবরটি পড়ার পর ইন্টারনেটের যে সমস্যা ছিল, সেটার সমাধান করেছি। আমি ধন্যবাদ জানাই প্রথম আলোর রাহিতুল ইসলামকে, যিনি এই সংবাদ লিখেছেন।’

ল্যাপটপ পাওয়ার পর তৃষ্ণা দিও প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি প্রথমেই ধন্যবাদ জানাব প্রথম আলোকে। যেখানে আমার ফ্রিল্যান্সার হয়ে ওঠার কথা উঠে এসেছে। আজ প্রতিমন্ত্রী আমাদের বাড়ি এসেছেন। এটা আমাকে আরও বেশি অনুপ্রেরণা দেবে। নকরেক আইটির সুবীর নকরককে অনেক ধন্যবাদ, আমাকে দক্ষ করে তোলার জন্য।’

নকরেক আইটি ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা সুবীর নকরেকও আজ ছিলেন কাকরকান্দিতে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তৃষ্ণা দিওর মতো অনেক তরুণ–তরুণীকে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। বন থেকে পাহাড়ে নিজ উদ্যোগে গিয়ে সেমিনার করে ১০ হাজার তরুণ-তরুণীকে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে ধারণা দিয়েছি। যাঁদের মধ্যে এক হাজার ২০০ ছেলেমেয়ে ভালো আয় করছেন।’