শাহরিয়ার মনজুর
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি কত বছর বয়সে আইসিপিসির চূড়ান্ত পর্বের বিচারক নির্বাচিত হয়েছিলেন?

শাহরিয়ার মনজুর: তখন আমার বয়স ছিল ২৬ বছর। 

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনিই কি তখন সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন?

শাহরিয়ার মনজুর: বিদেশিদের দেখে তাঁদের বয়স তো আর বোঝা যায় না। তবে ধরে নেওয়া যায় সর্বকনিষ্ঠ না হলেও কম বয়সীদের একজন ছিলাম আমি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বিচারক হলেন কীভাবে?

শাহরিয়ার মনজুর: কায়কোবাদ স্যার (অধ্যাপক ড. এম কায়কোবাদ) একটি ই–মেইল কয়েকজনকে ফরোয়ার্ড করেছিলেন ২০০২ সালে। আইসিপিসির চূড়ান্ত পর্বের জন্য প্রশ্ন (প্রবলেম) পাঠানোর মেইল ছিল সেটা। আমিও প্রশ্ন পাঠাই। আমারটা ২০০৩ সালের জন্য সিলেক্ট হয়ে যায়। ২০০৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড ফাইনালসের বিচারক ছিলাম। 

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: এবারও কি আপনি বিচারক?

শাহরিয়ার মনজুর: না। এবারের জন্য আমি প্রশ্ন জমা দিইনি, যদিও এবার নিজের দেশে হচ্ছে। 

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আইসিপিসির ফাইনালে ভালো করার জন্য প্রতিযোগীদের আসলে কী দক্ষতা দরকার?

শাহরিয়ার মনজুর: শুরুতে সমস্যা বা প্রশ্নগুলো বেশি কারিগরি ছিল। উত্তর দেওয়ার জন্য অনেক লম্বা কোড লিখতে হতো। এখন অনেকটাই জ্ঞানভিত্তিক। ফলে অনুশীলন অনেক বেশি প্রয়োজন। 

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ঢাকার আয়োজনটি কেমন হবে?

শাহরিয়ার মনজুর: বাংলাদেশের আইসিপিসি সংস্কৃতি দীর্ঘদিনের। অবশ্যই আমাদের এখানে সফল আয়োজন হওয়া উচিত। আয়োজক ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া–প্যাসিফিক, আইসিটি বিভাগ তো অনেক আগে থেকেই চাচ্ছে এটা  করতে। ফলে তাদের প্রস্তুতিও ভালো। দেশে ভালো ভালো হোটেলও আছে বিদেশি প্রতিযোগী ও কোচদের থাকার জন্য।  কায়কোবাদ স্যার, আবুল এল হক স্যার নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। আমিও আমার অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছি। জে আর সি (অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী) স্যার যখন ছিলেন, আমি তাঁর সঙ্গে অনেক কথাও বলেছি। সব মিলিয়ে ঢাকার ওয়ার্ল্ড ফাইনালস আয়োজন ভালো হবে আশা করি। 

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বাংলাদেশের দলগুলো কেমন করবে, স্বাগতিক হিসেবে বাড়তি কোনো সুবিধা পাবে?

শাহরিয়ার মনজুর: বাংলাদেশের প্রতিযোগীদের ক্ষমতা অনেক। তবে ফোকাস থাকে না। কারণ আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার প্রায় এক বছর পর চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এই দীর্ঘ সময় টানা চর্চা করা আমাদের প্রতিযোগীদের জন্য সম্ভবও হয় না। অনেকে স্নাতক হয়ে চাকরিবাকরিতে ঢুকে যান। দিনে দিনে প্রতিযোগিতা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। আগে সাত–আটটা প্রশ্ন থাকত, এখন ১৩–১৪টা থাকে। এই প্রতিযোগিতায় স্বাগতিকেরা আলাদা তেমন সুবিধা পান না। তবে ঢাকায় হওয়ায় আমাদের প্রতিযোগীদের বিমানের ভ্রমণজনিত ক্লান্তিটা থাকবে না। আর নতুন জায়গা নতুন পরিবেশের সঙ্গেও খাপ খাওয়াতে হবে না। 

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আইসিপিসিতে এখন পর্যন্ত আমাদের সেরা ফল হলো ১১তম। ২০০০ সালে বুয়েটের মনিরুল আবেদীনদের দল এটা করেছিল। এর থেকে ভালো ফল পরে আমরা দেখিনি। কেন?

শাহরিয়ার মনজুর: আইসিপিসির গ্রোথ যেমন হয়েছে, আমাদের তেমন হয়নি। আমাদের ও অন্যদের মেধা হয়তো একই রকম, কিন্তু জ্ঞান, জানাশোনা, অনুশীলনের দিকে আমরা পিছিয়ে আছি। আমার এক চীনা বন্ধু আছেন, তিন সারা দিনই প্রশ্নের সমাধান করতে থাকেন। যেটা বাস্তব কারণেই হয়তো আমাদের পক্ষে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। আইসিপিসিতে পদক পেতে যন্ত্রের মতো প্রশ্নের সমাধান করতে হয়। এমন রোবোটিক বৈশিষ্ট্যও আমাদের চরিত্রে নেই। 

আইসিপিসিতে আমাদের পদক পেতেই হবে, এমন আমি মনে করি না। এটা ক্রিকেটের মতো না। এই যে আমরা নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোনোরকমে জিতলাম। হয়তো হেরেও যেতে পারতাম। তবে হারাটা আমাদের জন্য খারাপ হতো। প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা তেমন না। আমরা হয়তো পদক পেলাম না, কিন্তু আমাদের প্রোগ্রামার দরকার। তা তো পাচ্ছি। প্রোগ্রামার যত বেশি হবে, তত ভালো দেশের জন্য। তারা ইন্ডাস্ট্রিতে অবদান রাখবে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে।  

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বাংলাদেশ আইসিপিসির সঙ্গে ২৫ বছর ধরে আছে। এর কি কোনো প্রভাব পড়েছে?

শাহরিয়ার মনজুর: দেশের কম্পিউটারবিজ্ঞান শিক্ষায় অনেক ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে আইসিপিসি। 

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বাংলাদেশ থেকে এবারই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দল আইসিপিসির চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিচ্ছে। প্রতিযোগীদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

শাহরিয়ার মনজুর: হ্যাঁ, এবার দেশ থেকে আটটি দল অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো চূড়ান্ত পর্বে। বাকিদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। যেহেতু দেশের মাটিতে হচ্ছে, তাই সর্বোচ্চ দক্ষতাটাই দেখাতে হবে সবাইকে। শেষ মুহূর্তের অনুশীলন গুরুত্বপূর্ণ।