টিকার দ্বিতীয় ডোজ চার মাস পরে নিলেও চলবে?

করোনার টিকা
ছবি: রয়টার্স

প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার ১৬ সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ চিন্তাভাবনা করছে। আমাদের দেশের জন্য এটা ভালো একটি উদ্যোগ। কারণ, কয়েক লাখ ডোজ টিকার অভাব রয়েছে। প্রথমে বলা হয়েছিল এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে হবে। পরে আট সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ টিকার ব্যবস্থা হয়। এখন আরও আট সপ্তাহ বা প্রায় দুই মাস বাড়ানোর চিন্তাভাবনা চলছে। অনেক দেশের বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে গবেষণা করছেন। যুক্তরাজ্য, কানাডা প্রভৃতি দেশে অবশ্য চার সপ্তাহের ব্যবধানেও দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হচ্ছে।

আমাদের দেশেও যদি দ্বিতীয় ডোজের জন্য চার মাস, অর্থাৎ দুই মাস তো প্রায় চলে গেল, আরও দুই মাস সময় পাওয়া যায়, তাহলে আমরা হয়তো এই সময়ের মধ্যে অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সংগ্রহ করতে পারব। আপাতত আমাদের দরকার প্রায় ১৫ লাখ ডোজ টিকা। এটা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভারত বা অন্য কোনো দেশ থেকে সংগ্রহের চেষ্টা আমাদের চালিয়ে যেতে হবে।

তবে আরেকটি সম্ভাবনার কথাও আমরা মনে রাখতে পারি। যদি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সংগ্রহ করা সম্ভব না হয়, তাহলে ফাইজার, চীনের টিকা বা অন্য কোনো দেশের টিকা দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে নেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে বিভিন্ন দেশে গবেষণা চলছে। কোনো কোনো দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, অন্য টিকায় দ্বিতীয় ডোজ, অর্থাৎ সমগোত্রের মিশ্র টিকা গ্রহণ করা সম্ভব। গবেষণায় যদি এ ধরনের টিকায় সুনির্দিষ্ট সুফল পাওয়া যায়, তাহলে হয়তো আমরা সেই সম্ভাবনাও কাজে লাগাতে পারব। এ বিষয়ে গত সপ্তাহের নিবন্ধে উল্লেখ করেছি।

কিন্তু সবটাই নির্ভর করে আমাদের টিকা সংগ্রহের সাফল্যের ওপর। সরকার চেষ্টা করছে। আমরা যদি প্রয়োজনীয়সংখ্যক টিকা সংগ্রহ করতে পারি, তাহলে দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।

দুই ডোজ টিকায় সুরক্ষার মেয়াদ কত দিন

করোনাভাইরাসের নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য এখনো আমরা আবিষ্কার করছি। অনেক কিছুই অজানা। প্রতিনিয়ত এর রূপ বদলাচ্ছে এবং সম্প্রতি ভারতীয় ধরনের করোনাভাইরাস সবার জন্যই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় দুই ডোজ টিকায় সৃষ্ট অ্যান্টিবডির মেয়াদ সম্পর্কেও কেউ সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারছেন না। তবে সাধারণভাবে বলা হয়, সম্পূর্ণ দুই ডোজ টিকা নিলে দেহে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ‘সম্পূর্ণ দুই ডোজ’ বলতে বোঝায় দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের দুই সপ্তাহ পর। এরপর সুরক্ষা সুনিশ্চিত হয়। কিন্তু কত দিন? সেটা কোনো বিশেষজ্ঞের মতে অন্তত ছয় মাস, কেউ বলেন অন্তত এক বছর। আবার কেউ বলেন আরও বেশি। এ সম্পর্কে আরও গবেষণা চলছে। হয়তো দ্রুতই আমরা জানতে পারব।

তৃতীয় ঢেউ রুখতে হবে

এখন আমরা একধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি। ঈদের পর অনেকেরই আশঙ্কা যে তৃতীয় ঢেউ শুরু হতে পারে। তাহলে সেটা হবে আমাদের জন্য এক মহাবিপদ। যদি ভারতের মতো অবস্থায় পড়তে হয়, তাহলে সামনে ঘোর দুর্দিন। এ অবস্থায় ভারতের সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় যেসব সতর্কতা নেওয়া হয়েছে, তা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। সম্প্রতি টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কয়েকটি এলাকায় লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। এটা খুবই ভালো পদক্ষেপ। এ ধরনের নীতি দেশের অন্য কিছু এলাকায়ও নেওয়া যেতে পারে। বিশেষভাবে, যেসব এলাকায় করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেশি, সেখানে সাময়িক লকডাউন সুফল দিতে পারে। দেশের বিশেষজ্ঞেরা এ বিষয়ে সুচিন্তিত অভিমত দিতে পারেন।

* আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
[email protected]