আরেকটু হলেই হারিয়ে যেত মানুষের পূর্বপুরুষ

শিল্পীর চোখে পাহাড়ের গুহায় আদিম মানুষের বসবাস। ক্রোয়েশিয়ার নিয়েনদেরথাল জাদুঘরে ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তোলারয়টার্স

অনেক সময় বিপদের মাত্রা বোঝাতে আমরা বলে থাকি, ‘কানের পাশ দিয়ে গুলি গেল। আরেকটু হলে লাগত গুলিটা।’ প্রায় আট লাখ বছর আগে মানুষের পূর্বপুরুষেরাও ভয়ংকর এক বিপদের মুখোমুখি হয়েছিল। সেই বিপদের কারণে আরেকটু হলেই মানুষের পূর্বপুরুষেরা পৃথিবী থেকে পুরোপুরি হারিয়ে যেত। বলা যায় গুলিটা কানের পাশ দিয়েই গিয়েছিল তাদের। জিনোমিক্সের তথ্য বলছে, প্রায় আট লাখ বছর আগে মানুষের পূর্বপুরুষ বিলোপের মুখে পড়েছিল। এ অবস্থা চলে ১ লাখ ১৭ বছর ধরে। এরপরই মানুষের পূর্বপুরুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। নতুন গবেষণা বলছে, সেই সময় হুট করে প্রজননক্ষম মানুষের সংখ্যা ছিল মাত্র ১ হাজার ৩০০। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ভয়ানক কোনো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের পূর্বপুরুষের সংখ্যা কমে যায়।

স্যাপিঞ্জা ইউনিভার্সিটি অব রোমের নৃবিজ্ঞানী অধ্যাপক গিওরজিও মাঞ্জি বলেন, ‘সে সময় আমাদের পূর্বপুরুষেরা বিলোপের মুখে পড়েছিল। এতে অবশ্য বেশ কিছু ইতিবাচক ঘটনাও ঘটেছিল। আমরা মনে করছি, সেই সংকটের কারণে হোমো হাইডেলবার্গেনসিসের উদ্ভব ঘটে। হাইডেলবার্গেনসিসেরা কিন্তু আমাদের দূরসম্পর্কের পূর্বপুরুষ। তাদের থেকে পরবর্তী সময়ে নিয়ান্ডারথান ও ডেনিসোভানসদের বিকাশ ঘটেছে। আমাদের কপাল ভালো যে সেবার মানুষের পূর্বপুরুষেরা টিকতে পেরেছিল। সেই হাজারখানেক মানুষ থেকেই আমাদের বিকাশ ঘটেছে।’

আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের আগে পূর্বপুরুষেরা কেমন ছিল, তা নিয়ে নানাভাবে গবেষণা করা হচ্ছে সারা বিশ্বে। সেই সময়কার ডাইনোসরের সংরক্ষিত ফসিল পেলেও নানা কারণে আদি মানুষদের তথ্যসংকট রয়েছে। সংরক্ষিত ফসিলের অভাবে মানুষের বিবর্তনের গল্প পুরোপুরি পড়তে পারছেন না নৃবিজ্ঞানী ও জীবাশ্মবিদেরা। সে সংকটের কারণে গাণিতিক মডেলনির্ভর বিশ্লেষণগুলো নিয়ে কাজ করছে গবেষক দল। সেই সময়ের আদি মানুষেরা আফ্রিকা অঞ্চলের দিকে বেশি বাস করত বলে সেখানকার ফসিল নিয়েই গবেষণা চলছে।  

বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৮০০ কোটির বেশি। চারদিকে মানুষ আর মানুষ। কিন্তু সেই আট লাখ বছর আগে পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খুঁজেও মানুষের সন্ধান পাওয়া যেত না। সে সময়ের নামকরণ করা হয়েছে প্লেইস্টোসিন কাল। সায়েন্স নামের বৈজ্ঞানিক সাময়িকীতে প্রকাশিত তথ্যমতে, সে সময় পৃথিবীর কার্বন ডাই–অক্সাইডের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গিয়েছিল।

এ বিষয়ে লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের হিউম্যান অরিজিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ক্রিস স্ট্রিঙ্গার বলেন, ‘আমাদের কাছে ৯ লাখ থেকে ৬ লাখ বছর আগের তেমন কোনো ফসিলের তথ্য নেই। ৮ লাখ বছর আগে ইউরেশিয়া অঞ্চলে মানবচিহ্ন ছিল। নতুন গবেষণা আসলেই চমক জাগানো। আমরা বুঝতে পারছি, ছোট কোনো জলবায়ুকেন্দ্রিক ঘটনায় মানবসভ্যতা কতটা বিপদে পড়তে পারে। মহামারি কিংবা অগ্ন্যুৎপাতের মতো ঘটনায় সবাই বিলোপ হতে পারে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, সে সময়েই সমুদ্রের তাপমাত্রা কমছিল, আর আফ্রিকা ও ইউরেশিয়াতে খরা শুরু হয়েছিল।’
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান