যুক্তরাজ্য মাসে মাসে রকেট পাঠাবে আকাশে, চলবে কেরোসিনে!

কাজাখস্তান থেকে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান ওয়ানওয়েবের একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হচ্ছে। ২৭ ডিসেম্বর ২০২১
রয়টার্স

প্রযুক্তি দুনিয়ার চায়ে আড্ডায় এখনো চাঁদের গল্প চলছে। আগের আর্টেমিস চন্দ্রাভিযানের সঙ্গে ভারতের চন্দ্রযান-৩ নামার গল্পে মেতে আছে সবাই। আমেরিকা-চীন কিংবা রাশিয়া-ভারত সবাই যেন মহাকাশে নিজেদের পতাকা স্থাপনে ব্যস্ত। সেই গল্পে নাম লেখানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। প্রতি মাসে মহাকাশে রকেট পাঠানোর কথা জানিয়েছে তারা। আর এসব রকেট নাকি চলবে কেরোসিন-পারঅক্সাইড জ্বালানিতে!

প্রায় ৫০ বছর আগে যুক্তরাজ্য মহাকাশে রকেট পাঠানোর যাত্রা শুরু করে। যে দেশ বিশ্বের নানা অঞ্চল-দ্বীপ-পর্বত আবিষ্কার করেছে, গত কয়েক শতক ধরে সেটি কেন মহাকাশ দৌড়ে পিছিয়ে, তা নিয়ে বড় শক্তির দেশের মানুষেরা কম হাসাহাসি করে না। ব্রিটিশরা মহাকাশে চা পান করতে পারবে না বলেই নাকি নভোযানে উঠতে ভয় পায়, এমন রসিকতা চালু আছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য অস্ত যায় না, মহাকাশে গেলে তো সূর্যোদয় দেখতে হবে, সারাক্ষণ এমন রসিকতাও শোনা যায়। সেই রসিকতার গালগপ্প পাশে রেখে নতুন চ্যালেঞ্জে নামছে দেশটি।

যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ব্রিটিশ ভূখণ্ড থেকেই সরাসরি স্যাটেলাইট পাঠানোর চেষ্টা করছে। অন্যের ঘাড়ে মানে অন্য দেশের উৎক্ষেপণ কেন্দ্র আর ব্যবহার করতে চায় না যুক্তরাজ্য।

স্কটল্যান্ডভিত্তিক স্কাইরোরা রকেট তৈরি নিয়ে কাজ করছে। শেটল্যান্ডের স্যাক্সাভর্দ এলাকা থেকে আগামী বছরই রকেট উৎক্ষেপণের কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। স্কাইরোরার রকেট প্রকল্প দলের সদস্য ইউয়ান ক্লার্ক জানান, ১৯৭১ সালে যুক্তরাজ্য ‘ব্ল্যাক অ্যারো’ পাঠায়। এটাই এযাবৎ আমাদের সেরা সাফল্য। সেটি উৎক্ষেপণের ৫০ বছর পর আমরা আবারও রকেট পাঠানোর চেষ্টা করছি। স্কাইরোরার অফিসে ব্ল্যাক অ্যারো স্যাটেলাইটের অংশ বিশেষ প্রবেশপথে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নতুন করে অনুপ্রেরণা পাওয়ার জন্য।

এ ছাড়া অরেবক্স প্রাইমও রকেট পাঠানো নিয়ে কাজ করছে। সাদারল্যান্ড স্পেসপোর্ট থেকে রকেট পাঠানোর পরিকল্পনা আছে তাদের। এসব কোম্পানির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের আবারও আকাশ দখলের নেশার মূল কেন্দ্রবিন্দু হ্যাডরিয়ান ওয়াল অঞ্চলের বিভিন্ন খেয়া উৎক্ষেপণ কেন্দ্র। আগের আমলে খেয়াযানের আকার ছিল গাড়ির মতো, আকাশে পাঠানোয় প্রয়োজন হতো বিশাল লঞ্চার। এখনকার স্যাটেলাইটের আকার কোনো কোনো সময় তো জুতার বাক্সের মতো, ছোট ব্যাচেলর ঘরের সমান জায়গা থেকেই পাঠানো যায়। স্কাইরোরা এক্সএল রকেটের আকার মাত্র ২২ মিটার যেখানে, অ্যাপোলো খেয়াযান পাঠানোর স্যাটার্ন ফাইভ রকেটের উচ্চতা ছিল ১১০ মিটার।

তিন মাত্রার স্কাইরোরা এক্সেল রকেটে যে ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে, তা থ্রিডি প্রিন্টারে প্রিন্ট করে বানানো। স্কাইরোরা ব্রিটিশ আইলস এলাকা থেকেই এসব রকেট আগামী বছরে পাঠানো শুরু করবে বলে জানিয়েছে। এমনিতেই এসব এলাকা জনশূন্য, যে কারণে রকেট উৎক্ষেপণ করা হবে উন্মুক্ত জলরাশির ওপর দিয়েই। এসব রকেটে যুক্ত স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর জলবায়ু ও মেরু গবেষণায় ব্যবহৃত হবে।

স্কাইরোরার রকেট প্রকল্প দলের সদস্য ইউয়ান ক্লার্কের মতে, ‘আমরা পরিবেশের ওপর চোখ রাখতে পারে এমন স্যাটেলাইট পাঠাব, যা যোগাযোগের জন্যও কাজে আসবে। প্রতিটি রকেটে ৩০০ কেজি পাঠানো যাবে, আর প্রতি কেজি পাঠাতে খরচ পড়বে ৩০ থেকে ৩৬ হাজার পাউন্ড। এসব রকেটে ১ হাজার কিলোমিটার পাঠাতে ৫০ হাজার লিটারের মতো জ্বালানি লাগে। প্রকৌশলীরা পরিকল্পনামাফিক চললে আগামী বছর থেকে প্রতি মাসে রকেট পাঠাতে পারবেন বলে জানিয়েছেন।

এসব রকেট চলবে কেরোসিন-পারঅক্সাইডের তরল জ্বালানিতে। কেরোসিন তো সেই কোন আমলে কুপি বাতি জ্বালানোর জন্য ব্যবহৃত হতো। ব্রিটিশদের কেরোসিনের জ্বালানিতে রকেট পাঠানোর সংবাদে অনেকেই হাসাহাসি করবেন। কেরোসিনের চেয়ে ভিন্ন কেরোসিন-পারঅক্সাইডের তরল জ্বালানি কম দূষণ তৈরি করে। এ ছাড়া এই জ্বালানি রকেটে সংরক্ষণ করা বেশ সহজও বলা যায়। এখন প্রচলিত রকেটে অক্সিজেননির্ভর জ্বালানি ব্যবহার করা হয়। রকেটে পাঠাতে দেরি হলে জ্বালানির সক্ষমতা কমতে থাকে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ধরনের জ্বালানি বেশ কার্যকর বলে তাঁরা দাবি করেছেন। প্রতিষ্ঠানটি ইউকে স্পেস এজেন্সি ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির অর্থায়নে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর বাইরে আবর্তিত যেসব স্যাটেলাইট আছে, তার উন্নয়নে কাজ করবে জানিয়েছে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান