১৪৪ বছর ধরে চলছে যে বৈজ্ঞানিক গবেষণা

বৈজ্ঞানিক প্রকল্পের গবেষক মার্জোরি ওয়েবারের হাতে ১৪৪ বছরের পুরোনো বীজের বোতলমার্জোরি ওয়েবার

বিজ্ঞানীদের ধৈর্য বেশি বলে বেশ সুনাম রয়েছে। অনেক বিজ্ঞানী বছরের পর বছর একই বিষয়ে গবেষণা করে যান। সবাই সফল হন, তা কিন্তু নয়। তারপরও বিজ্ঞানীরা থেমে থাকেন না। এমনই এক রহস্যময় বৈজ্ঞানিক গবেষণা চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। ১৪৪ বছর ধরে উদ্ভিদের বীজ নিয়ে চলছে এ গবেষণা। ১৮৭৯ সালে শুরু হওয়া এ গবেষণার শুরুতে উদ্ভিদবিদ উইলিয়াম বিল মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ২০টি কাচের বোতলে ভেজা বালু ও ২৩ প্রজাতির ৫০টি বীজ ভরে মাটিতে পুঁতে রাখেন। বীজ অঙ্কুরিত হবে কি না, তা দেখতে ২০ বছর পর একটি করে বোতল মাটি থকে বের করে আনা হয়।

এ বিষয়ে শতবর্ষের বেশি সময় আগে উদ্ভিদবিদ উইলিয়াম জেমস বিল জানিয়েছিলেন, গবেষণার জন্য বিভিন্ন ধরনের ২৩টি গাছের ৫০টি সদ্য জন্মানো বীজ নির্বাচন করা হয়েছে। ভবিষ্যতের গবেষণার জন্য ২০টি বোতলে আলাদা করে রাখা হয়েছে বীজগুলো। মাঝারি আর্দ্র বালুতে ভালোভাবে মিশিয়ে বোতলে রাখা হয়েছে বীজগুলো।

১৯১০ সালে বিল ৭৭ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করেন। তখন গবেষণার দায়িত্ব নেন উদ্ভিদবিদ এইচ টি ডার্লিংটন। দীর্ঘদিন ধরে চলা এ বৈজ্ঞানিক প্রকল্পের গবেষক মার্জোরি ওয়েবার বলেন, প্রথম দিকে উদ্ভিদবিদ বিল প্রতি পাঁচ বছর পর একটি করে বোতল মাটি থেকে বের করতেন। ১৯২০ সাল পর্যন্ত আটটি বোতলের খোঁজ মেলে। সেসব বোতলের বীজের অঙ্কুরোদ্‌গমের হার ছিল বেশ ভালো। পরবর্তী সময়ে বিলের উত্তরসূরি বিজ্ঞানীরা শুরুতে ১০ বছর পরপর একটি বোতল বের করেছেন। ১৯৮০ সাল থেকে ২০ বছর পর একটি বোতল বের করে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

মাটির নিচে থাকা বোতলগুলোর অবস্থান বিজ্ঞানীরা বেশ গোপন রেখেছেন। ২০২১ সালে তাঁরা ১৬তম বোতল বের করেন। বোতলে থাকা বীজগুলো আপাতদৃষ্টে মৃত বীজের মতো মনে হলেও অঙ্কুরিত হয়েছে। এই বীজের কার্যকারিতা নিয়ে আমেরিকান জার্নাল অব বোটানিতে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়েছে, ১৬তম বোতলে ভারবাস্কাম থ্যাপসাস ও ভারবাস্কাম ব্লাটারিয়া প্রজাতির বীজের মিশ্রণ রয়েছে। ভারবাস্কাম নামের হলুদ ফুলের বীজ প্রায় দেড় শ বছরের বেশি পুরোনো হলেও সফলভাবে অঙ্কুরিত হয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে।

উদ্ভিদবিদ বিল সব বোতলে বীজ ভরার সময় আলাদাভাবে কোনো বীজ সংরক্ষণ করেননি। ফলে একসঙ্গে থাকা দুটি প্রজাতির বীজ এক হয়ে নতুন জেনেটিক মিশ্রণ তৈরি করেছে। ২০৪০ সালের পর আরও একটি বোতলের বীজ অঙ্কুরোদ্‌গমের চেষ্টা করা হবে। প্রকল্পের গবেষক ডেভিড লরি বলেন, ‘আর মাত্র চারটি বোতল অবশিষ্ট আছে। এ কারণে আমরা গবেষণাটি দীর্ঘায়িত করতে চাই। ২০৪০ সাল থেকে ৩০ বছর পরপর বাকি বোতলগুলো পরীক্ষা করা হবে। পুরোনো বীজের মাধ্যমে কীভাবে উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা যায়, সে বিষয়টি জানতেই এ গবেষণা চলছে।’

সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস