ওষুধপ্রতিরোধী জীবাণু নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে

ওষুধপ্রতিরোধী জীবাণুর আক্রমণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বিজ্ঞানীরারয়টার্স

একধরনের জীবাণুকে বশ করতে না করতেই আরেক ধরনের জীবাণুর আক্রমণ বেড়ে যায়। বেশির ভাগ জীবাণুকে ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও অনেক জীবাণু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের পরিবর্তন করে আরও শক্তিশালী হয়ে আক্রমণ করতে থাকে। কোভিড মহামারির সময় বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই দেখা গেছে। সে সময় যতই দিন গেছে ততই নিজেদের ধরন বদলে আগের তুলনায় শক্তিশালী হয়ে আক্রমণ করেছে কোভিড। কোভিড মহামারি শেষ হলেও বর্তমানে নতুন ধরনের বেশ কিছু ওষুধপ্রতিরোধী জীবাণুর আক্রমণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বিজ্ঞানীরা। এসব জীবাণুকে সুপারবাগ বলে ডাকা হয়।

সুপারবাগ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করে যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানী ডেম স্যালি ডেভিস বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অনেক জীবাণুর সংক্রমণে লাখো মানুষ মারা যেতে পারে। বর্তমান ওষুধপ্রতিরোধী সুপারবাগের সংখ্যা নতুন শঙ্কা তৈরি করছে। মানবজাতির সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তখন কোভিড-১৯ মহামারিকে ছোট মনে হতে পারে। দুই বছর আগে আমার মেয়ে জীবাণুর সংক্রমণে মারা যায়। আগামী দশকের মধ্যে এই সমস্যা মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের মতোই সুপারবাগের আবির্ভাব আরও বড় ঘটনা। ওষুধপ্রতিরোধী সংক্রমণের কারণে সারা বিশ্বে প্রতিবছর কমপক্ষে ১২ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছেন।’

বর্তমানে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ও অন্যান্য পরজীবী থেকে অনেক সংক্রমণের ঘটনা ঘটছে। ওষুধের কারণে এসব জীবাণুর ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়। ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে চিকিৎসা ও ওষুধব্যবস্থাও দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আগামী ১০ বছরে এ ধরনের সমস্যার সমাধান করা না গেলে ভয়ংকর অনেক ঘটনা ঘটতে পারে।

মানুষ ও প্রাণী উভয় ক্ষেত্রেই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের ব্যবহার কমানোর প্রতি গুরুত্ব দিতে যুক্তরাজ্য সরকার সম্প্রতি একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওষুধপ্রতিরোধী জীবাণু সংক্রমণের ওপর নজরদারি জোরদার করার পাশাপাশি নতুন ওষুধ ও ভ্যাকসিন তৈরির জন্য গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মারিয়া কাউলফিল্ড বলেন, ‘কোভিডের সময় আমরা স্বাস্থ্যব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ দেখেছি। নতুন জীবাণুর আক্রমণে পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হচ্ছে। যাদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী অনেক শিশুও আছে।’ সাম্প্রতিক বছরে কিছু নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করা হয়েছে, যা সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলছে। আবার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি অ্যান্টিবায়োটিক খামারের প্রাণীদের মধ্যে ব্যবহার করা হয়। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে সব। ওষুধপ্রতিরোধী জীবাণুর কারণে মৃত্যুর হার কমাতে কাজ চলছে। কৃষিতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ব্যবহার কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কমানোর জন্যও কাজ করা হচ্ছে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান