জানেন কি, আপনার কান নীরবতাও শুনতে পায়

ছবি: রয়টার্স

নিস্তব্ধ শ্রেণিকক্ষ। চলছে পরীক্ষা। এরই মধ্যে হয়তো আপনি ফিসফিস করে বন্ধুর কাছে জানতে চাইছেন প্রশ্নের উত্তর। আপনাদের ফিসফিস শব্দ দূর থেকে শুনে শিক্ষক হুংকার দিয়ে বসলেন। আপনি অবাক হতেই পারেন, শিক্ষক কীভাবে সব শুনতে পান? ফিসফিস শব্দ কি এত দূর থেকে কেউ শুনতে পায়?

কত কিছুরই না শব্দ আমরা শুনি। বহু দশক ধরে মানুষ সন্ধান করে চলছে শব্দ নিয়ে। আমরা কি শুধু শব্দই শুনি? আমি কি নিস্তব্ধতা শুনি না? সেই নীরবতা নিয়ে গবেষণা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তাঁরা জানাচ্ছেন, নীরবতাকেও নাকি আমরা শুনতে পারি। তাঁদের দ্য পারসেপশন অব সাইলেন্স নামের গবেষণাপত্র জানাচ্ছে, ভ্রান্তির কারণে আমরা নাকি নিস্তব্ধতাও শুনতে পাই। বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষক রুই ঝি ঘো জানান, আমরা সাধারণভাবে ধরেই নিই, শোনার সঙ্গে শব্দের সংযোগ আছে। নিস্তব্ধ পরিবেশে কোনো শব্দ হয় না, শব্দের অনুপস্থিতি আমরা বুঝতে পারি। আমাদের গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে, আপনি শব্দের অনুপস্থিতিতেও শুনতে পারেন।

ব্যান্ডশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু তাঁর বিখ্যাত গানে বলেছেন, ‘হাসতে দেখো, গাইতে দেখো/অনেক কথায় মুখর আমায় দেখো/ দেখো না কেউ হাসি শেষে নীরবতা।’ সেই নীরবতাকে বোঝার দিন চলে এসেছে। জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক শ্যাজ ফায়ারস্টোন জানান, ‘দার্শনিকেরা অনেক বছর ধরে নিঃশব্দের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন। তাঁদের সেই প্রশ্ন নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করেছি আমরা। আমরা জানার চেষ্টা করেছি, আমাদের মস্তিষ্ক শব্দের প্রতি যেমন আচরণ করে আর শব্দহীনতা বা নিঃশব্দের প্রতি কেমন আচরণ করে।’

মরুভূমিতে গেলে আমরা মরীচিকা দেখি। মরীচিকা চোখের বিভ্রান্তি। নির্ধারিত পরিবেশে আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের ফল হিসেবে আমরা মরীচিকা দেখি। ঠিক তেমনি শ্রবণকেন্দ্রিক ধারণা অনেকটা আপেক্ষিক বলে জানাচ্ছেন গবেষক দল। অপটিক্যাল ইলিউশন বা চোখের ভ্রান্তি আমাদের অনেক কিছু উল্টোপাল্টা দেখায়।

তেমনি শ্রবণভ্রান্তির কারণে আমরা অনেক কিছু শুনতে পাই। এক হাজারজনের ওপর পরীক্ষা করে এমনটাই জানাচ্ছে গবেষক দল। অংশগ্রহণকারীরা প্রথমে ব্যস্ত রেস্তোরাঁ, মার্কেট কিংবা রেলস্টেশনের শব্দ শুনতে থাকেন। তারপর সেখানে কয়েক মুহূর্ত বিরতি দেওয়া হয়। এরপরে আবারও তাঁরা শব্দ শুনতে থাকেন। সেই বিরতির মুহূর্তেও তাঁরা শব্দ শুনতে থাকেন বলে মনে করেন।

জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়ান ফিলিপস জানান, ‘আমরা শুধু শব্দই শুনি না, শব্দ যখন থেমে যায়, তখন তার যে রেশ থাকে, তা-ও শুনতে পাই। এই ভ্রান্তি বা ফলাফল থেকে আমরা বুঝতে পারি, আমাদের মস্তিষ্ক নিস্তব্ধ পরিবেশেও অনুধাবন করতে পারে। এই গবেষণার মাধ্যমে শব্দশূন্যতা বা অনুপস্থিতির বিষয়টি নতুন করে জানার সুযোগ পাব আমরা।’ ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স-এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

সূত্র: সায়েন্টিফিক আমেরিকান