অ্যান্টার্কটিকার বরফের নিচে অদ্ভুত কাঠামোর সন্ধান
পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার ডটসন আইস শেল্ফের মানচিত্র তৈরির সময় বরফের নিচে অদ্ভুত একাধিক কাঠামোর সন্ধান পেয়েছে চালকবিহীন একটি সাবমেরিন। তবে সন্ধান পাওয়া একাধিক কাঠামোর তথ্য পাঠানোর পরপরই বরফের ১০ মাইল গভীরে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে গেছে সাবমেরিনটি। ‘রান’ নামের সাবমেরিনটির সন্ধান পাওয়া কাঠামোগুলোর নকশা বরফ গলে যাওয়ার প্রচলিত বৈজ্ঞানিক মডেলকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। সমুদ্রের উষ্ণ স্রোত কীভাবে নিচে থেকে বরফের স্তরকে ক্ষয় করে ও এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে কী প্রভাব পড়ে, সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছিল সাবমেরিনটি।
সোনার প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাবমেরিনটি ডটসন আইস শেল্ফের নিচের অংশের যে মানচিত্র তৈরি করেছে সেখানে সমতল মালভূমি, ধাপযুক্ত সিঁড়ি ও বিশাল সব গর্ত দেখা গেছে। এসব কাঠামো নিচ থেকে বরফ গলে যাওয়ার ফলে তৈরি হয়েছে, যা আগে কখনো শনাক্ত হয়নি। গবেষণার নেতৃত্ব দেওয়া সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আন্না ওয়াহলিন জানিয়েছেন, যোগাযোগহীন অবস্থায় রানকে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময়ের জন্য বরফের অন্ধকার অতল গভীরে যেতে দেখা অত্যন্ত ভীতিকর ছিল। নিখোঁজ হওয়ার পর অনেক তল্লাশি চালিয়েও এর কোনো সংকেত বা ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি বা বরফের পাহাড়ের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে এটি গভীর সমুদ্রে হারিয়ে গেছে।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, সাবমেরিনটি বরফের স্তরে বিশাল ফাটল খুঁজে পেয়েছে, যা নিচ থেকে গলে গিয়ে আরও চওড়া ও মসৃণ হয়ে গেছে। এই ফাটল উষ্ণ পানির গোপন পথ হিসেবে কাজ করে। বরফের পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে স্তরে স্তরে সাজানো সিঁড়ির মতো ধাপও দেখা গেছে। যখন উষ্ণ পানির স্রোত ধীরে প্রবাহিত হয়, তখন বরফকে সমান্তরালভাবে ক্ষয় করে এই সিঁড়ির মতন কাঠামো তৈরি হয়। পশ্চিম দিকে স্রোত বেশি তীব্র হওয়ায় সেখানে ড্রেজিং বা খনন করার মতো গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে; কিছু গর্ত প্রায় ৯৮৪ ফুট লম্বা ও ১৬৪ ফুট গভীর।
বরফের নিচে রেডিও তরঙ্গ বা জিপিএস কাজ করে না। তাই সম্পূর্ণ নিজস্ব নেভিগেশন সিস্টেমের ওপর নির্ভর করে চলা সাবমেরিনটি হারিয়ে গেলেও অদ্ভুত কাঠামোগুলো বিজ্ঞানীদের নতুন তথ্য জানার সুযোগ করে দিয়েছে। পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে যাওয়ার ফলে ১৯৭৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ০.৫৫ ইঞ্চি বৃদ্ধি পেয়েছে। রানের পাঠানো তথ্য থেকে এখন বোঝা যাচ্ছে, সমুদ্রের উষ্ণ পানি কতটা জটিলভাবে বরফের তলদেশে আঘাত করছে।
সূত্র: আর্থ ডট কম