সূর্যেও বৃষ্টি হয়, তবে

সূর্যেও বৃষ্টি হয়, তবে তা ভিন্ন ধরনেরছবি: রয়টার্স

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কম আবার কোথাও বেশি। আমাদের সৌরজগতের প্রাণভোমরা সূর্যেও বৃষ্টি হয়, তবে তা ভিন্ন ধরনের। বিজ্ঞানীরা এই বৃষ্টিকে সৌরবৃষ্টি নামে ডাকেন। বিশালাকার সূর্যের বায়ুমণ্ডলে সৌরশিখার তৈরির সময় অদ্ভুত বৃষ্টি ঝরে পড়ে। বিজ্ঞানীরা বহু দশক ধরে এই বৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা করতে হিমশিম খাচ্ছেন। আমাদের পৃথিবীর মতো সেখানে জলীয় বৃষ্টি হয় নয়, সূর্যের মধ্যে উত্তপ্ত প্লাজমা বৃষ্টি হয়।

সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডল করোনা নামে পরিচিত। এটি এমন একটি স্তর যা খুবই কম ঘনত্বের কিন্তু অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রার। যখন সৌরশিখা বা ফ্লেয়ার তৈরি হয় তখন চুম্বকীয় আর্ক বা লুপ উত্তপ্ত প্লাজমা দিয়ে পূর্ণ হয়। এই প্লাজমা ভীষণ উত্তপ্ত গ্যাসীয় হয় বলে পরমাণু ইলেকট্রন হারিয়ে ফেলে। এরপর বিকিরণের মাধ্যমে প্লাজমা ঠান্ডা হতে শুরু করে। তখন মেঘের মতো ঘনীভূত হয়ে ফোঁটা ফোঁটা আকারে সূর্যের পৃষ্ঠের দিকে ফিরে আসে। এই প্রাকৃতিক বিষয়কে বিজ্ঞানীরা সৌরবৃষ্টি বলে থাকেন।

বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে সৌর বৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করছেন। সৌরশিখার সময় এই কোরোনাল বৃষ্টি দ্রুত তৈরি হয়। চুম্বকীয় আর্ক বরাবর পুঁতির মালার মতো দ্রুত বেগে পড়তে থাকে। প্রচলিত সৌর মডেল সূর্যের বায়ুমণ্ডলকে একটি নির্দিষ্ট রাসায়নিক মিশ্রণ হিসেবে গণ্য করে। সেই সব মডেল দিয়ে এই দ্রুতগতি ব্যাখ্যা করা কঠিন। নতুন এক মডেল বলছে, ধীরে ধীরে তাপমাত্রার স্থিতিশীল পরিবর্তনের মাধ্যমেই কেবল ঘনীভবন হওয়া সম্ভব সেখানে। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমির গবেষক লুক ফুশিমি বেনাবিতজ এই ধাঁধার সমাধান করেন। তিনি ফ্লেয়ার লুপের তথ্য জানতে কম্পিউটার মডেল তৈরি করেন।

আরও পড়ুন

নতুন গবেষণা বলছে, প্লাজমার রাসায়নিক উপাদানে পরিবর্তন ঘটলে ঠান্ডা হওয়ার হারেও পরিবর্তন আসে। এই নতুন মডেলে লোহা, সিলিকন ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো উপাদান কোনো লুপের শীর্ষে বেশি পরিমাণে জমা হয় তখন বিকিরণ বৃদ্ধি পায়। তখন তাপমাত্রা দ্রুত কমে গেলে ঘনীভবন শুরু হয়। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী বেনাবিতজ বলেন, বর্তমান মডেল মনে করে করোনার মধ্যে বিভিন্ন উপাদানের বিতরণ স্থান ও সময়জুড়ে স্থির থাকে। বাস্তবে এমন ভাবনা স্পষ্টতই সঠিক নয়। কম্পিউটার সিমুলেশন করা বৃষ্টি এখন টেলিস্কোপে রেকর্ড হওয়া বৃষ্টির গতির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, সৌরশিখার সময় ক্রোমোস্ফিয়ারিক ইভাপোরেশন প্রক্রিয়ায় উত্তপ্ত উপাদান চুম্বকীয় ক্ষেত্র বরাবর ওপরের দিকে ওবং লুপের অভ্যন্তরে প্রবাহিত হয়। এই প্রবাহের সময় তা লোহার মতো বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে করোনার কিছু অংশকে সমৃদ্ধ বা লঘু করে দিতে পারে। যখন লুপের শীর্ষস্থানে এমন উপাদানের পরিমাণ সামান্য বৃদ্ধি পায়, তখন সেই অঞ্চলে বিকিরণ প্রতিবেশী অঞ্চলের তুলনায় বেড়ে যায়। এই ভারসাম্যহীনতা প্লাজমাকে তুলনামূলকভাবে শীতল ও নিম্নচাপের পকেটগুলোর দিকে ঠেলে দেয়। এতে ঘনত্ব বাড়ে ও ঠান্ডা হলে দ্রুত সৌরবৃষ্টির সৃষ্টি হয়।

সূত্র: আর্থ ডট কম

আরও পড়ুন