সয়াবিন কেন জনপ্রিয়

সয়াবিন বীজরয়টার্স

টেকসই ফসল হিসেবে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই সয়াবিন চাষ করা যায়। নানা প্রয়োজনে সয়াবিনের নানা রকমের ব্যবহার দেখা যায় এখন। প্রায় ৯ হাজার বছর আগে চীনে সয়াবিন ব্যবহারের নমুনা পাওয়া যায়। সয়াবিন এখন স্বাদের ক্যান্ডি থেকে শুরু করে ছবি আকারে ক্রেয়নেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

আমরা যা খাই প্রায় সবকিছুতেই সয়া পাওয়া যায়। দোকানে হরেক স্বাদের হুমাসে উদ্ভিজ্জা তেলে সয়া ব্যবহার করা হয়। চকলেট বারে নানাভাবে সয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি আপেলের বাইরে প্রতিরক্ষার জন্য সয়া ব্যবহার করা হয়। সব প্রক্রিয়াজাত খাবারের ৬০ শতাংশের বেশি পণ্যে সয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। মার্কিনরা যে ক্যালরি গ্রহণ করে তার প্রায় ৭ শতাংশ শুধু সয়াবিন তেল থেকে আসে। সয়াবিনের সবুজ গাছটি তিন থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। প্রতিটি গাছে প্রায় ১০০ মটরশুঁটির মতো সয়াবিন দানা উৎপাদিত হয়। কানাডার ম্যানিটোবার কঠিন পরিবেশ থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকার তৃণভূমিতে সয়াবিনগাছ দেখা যায়।

৬ থেকে ৯ হাজার বছর আগে চীনে গ্লাইসিন সোজা নামের গাছের মাধ্যমে চাষের মাঠে সয়াবিন আনা হয়। সয়াবিন খরার চরম সময়কালেও ভালো ফসল দিত বলে জনপ্রিয় ছিল। সয়া দানার নানা ব্যবহারের ইতিহাস আছে। হাজার বছর আগে চীনা চিকিৎসকেরা ওষুধ হিসেবে সয়াবিনগাছ ব্যবহার করতেন। সয়া নুডলস, টোফু, টেম্পেহ ও সয়া সস হিসেবে চীনা ইতিহাসে বহুল পরিচিত। সয়াবিন আঠারো শতকের যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরেই অর্থকরী ফসল হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

সয়া সসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ইংল্যান্ডে পাঠানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমে সয়াবিন রোপণ করা হয়েছিল। এখন তো ব্রিটিশ হেঁশেলে সয়া নিত্যপণ্যের একটি। ১৮৬০–এর দশকে মার্কিন গৃহযুদ্ধের সময় কফির বিকল্প হিসেবে রোস্টেড সয়াবিন ব্যবহার করা হতো। দ্য রুরাল নিউ ইয়র্কার পত্রিকায় ১৮৯৩ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সয়া কফি তাঁদের জন্য, যাঁরা অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যে ভালো চান। বিখ্যাত উদ্ভাবক ও মডেল টি গাড়ির উদ্ভাবক হেনরি ফোর্ড বিশ্বাস করতেন, সয়াবিনের রয়েছে বিশ্বকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা। তিনি সয়াবিন তেল থেকে বাড়ির রং, সাবান ও গাড়ির জন্য এনামেল তৈরি করেন। তিনি নিজেই সয়া দানাকে গাড়ির যন্ত্রাংশ হিসেবে ব্যবহার করেন। ফোর্ড সয়াবিন নিয়ে ভোজসভা আয়োজন করে আলোচিত হয়েছিলেন। সেই ভোজসভায় সয়াবিনের পিউরি, সয়াবিন ক্র্যাকারস, টমেটো সসসহ সয়াবিন ক্রোকেট, মাখনযুক্ত সবুজ সয়াবিন, সয়াবিন পনিরের সঙ্গে আনারসের রিং, সয়াবিন মাখনের সঙ্গে সয়াবিন রুটি, আপেলের সঙ্গে সয়াবিন রুটি, রোস্টেড সয়াবিন কফি ও সয়ামিল্ক আইসক্রিম পরিবেশন করেছিলেন।

সয়াবিন প্রোটিনের একটি পুষ্টিকর উৎস হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়। বহুমাত্রিক ব্যবহারের জন্য সয়াবিন ক্রেয়নের মোম ও সংবাদপত্র ছাপার কালিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রোটিন পাওয়ার হাউস হিসেবে সয়াবিন গুরুত্বপূর্ণ। এক কাপ কাঁচা সয়াবিনে ৬৭ গ্রাম প্রোটিন ও ১৭ দশমিক ৩ গ্রাম আঁশ থাকে। এ কারণে সয়াবিন পশুখাদ্য হিসেবে জনপ্রিয়। যুক্তরাষ্ট্রে মুরগি সবচেয়ে বেশি সয়া খায়, তারপরে গরু ও মাছ। সয়াভিত্তিক পণ্য যেমন টফু, টেম্পেহ নিরামিষাশীদের জন্য প্রধান খাবার। এক কাপ রান্না করা টফুতে এক কাপ রান্না করা মুরগির সমান পরিমাণ প্রোটিন থাকে।

সয়াতে মানবদেহের প্রয়োজনীয় ৯টি দরকারি অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন জেনেটিক্যালি মডিফায়েড সয়াবিন চাষ হয়। বিশ্বব্যাপী মাংসের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সয়াবিনের চাহিদাও বেড়েছে। সয়াবিন ১৬০০ শতকে ভারতে জাপান থেকে আনে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সয়াবিনের চাহিদা বাড়ছে। ২০৩০ সালে সয়াবিন তেলের বৈশ্বিক বাজার হবে প্রায় ৭ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের।

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক