ভালো নেই ব্যাঙেরা

গজিলা বা অস্ট্রেলিয়ান গ্রিন টাইগার ব্যাঙরয়টার্স

শেষ কবে আপনি ব্যাঙ দেখেছেন? নিয়মিত বাগানে যাওয়ার সুযোগ থাকলে হয়তো একটি-দুটি ব্যাঙের সন্ধান পেয়েছেন। প্রকৃতিতে ব্যাঙের সংখ্যা কমলেও টিকটক বা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিওতে ব্যাঙের ভিডিও শেয়ার হয় অনেক। ব্যাঙের ইমোজি বা মিমস শেয়ার করছেন ব্যবহারকারীরা।

ইশপের উপকথায় ব্যাঙের চরিত্র দেখা যায়। কুকুর বা অন্যান্য পোষা প্রাণীর সঙ্গে মানুষের ইতিহাস অনেক দিনের। একইভাবে ব্যাঙের সঙ্গেও মানুষের সম্পর্ক পুরোনো। পেশি ও স্নায়ু অধ্যয়নের জন্য ব্যাঙ অনেক বছর ধরেই বিজ্ঞানীদের কাঁচির নিচে পড়ছে। ইতালীয় বিজ্ঞানী লুইগি গ্যালভানি আঠারো শতকের শেষের দিকে ব্যাঙ নিয়ে বিখ্যাত পরীক্ষা পরিচালনা করেন। তিনি ব্যাঙকে বিদ্যুৎ পরিবাহী বলে মনে করেছিলেন। এমন সব পরীক্ষার জন্য ব্যাঙ বৈজ্ঞানিক বস্তু হিসেবে মূল্যবান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এখনো শ্রেণিকক্ষে ব্যাঙের কাটাকুটি চলছে, যা অমানবিক বলে অবশ্য সমালোচিত হচ্ছে।

১৯৯০ সাল নাগাদ সারা বিশ্বের ব্যাঙের সংখ্যা কমে যাওয়ার মাত্রা ছিল প্রবল। কৃষিজমির বিকাশের কারণে ব্যাঙের আবাস ধ্বংস হচ্ছে। কাইট্রিড ছত্রাকের কারণে বিশ্বব্যাপী উভচর মহামারি দেখা যায়। ব্যাঙের বংশ সেই ছত্রাকের কারণেও কমে যায়। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক প্রজাতির জীবন কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

২০২২ সালে উভচর প্রজাতির ৪০ শতাংশ বিলোপের ঝুঁকিতে ছিল। যার মধ্যে ব্যাঙের দল সবচেয়ে বড়। ব্যাঙ রক্ষায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন গবেষণা চলছে। উভচরদের ভবিষ্যৎ ভাগ্য নিয়ে কাজ করছেন গবেষকেরা। প্রায় ৩৬ কোটি বছর আগে জল থেকে স্থলে চলে আসে ব্যাঙসহ বিভিন্ন উভচর। উভচররা আমাদের প্রাচীন পূর্বপুরুষের আগে থেকেই ভূমিতে বসবাসকারী প্রথম মেরুদণ্ডী প্রাণী। হার্ভার্ড র‌্যাডক্লিফ ইনস্টিটিউটের হার্ডি ফেলো ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সত্যভামা দাস ব্যাঙ রক্ষায় কাজ করছেন। তার সঙ্গে যুক্ত আছেন গবেষক সোনালি গর্গ। তারা জানান, স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ আর সরীসৃপদের মধ্যে ২১ দশমিক ৪ শতাংশ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে। আর পাখিদের ১২ দশমিক ৯ শতাংশ ঝুঁকির মধ্যে আছে। সেখানে প্রায় ৪১ শতাংশ উভচর প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। মাঠে–প্রান্তরে খুঁজে খুঁজে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও উপমহাদেশের অন্যান্য অংশ থেকে এক শতাধিক নতুন ব্যাঙের প্রজাতির খোঁজ পেয়েছেন তাঁরা। যেকোনো মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী আট হাজারের বেশি উভচর প্রজাতি হারিয়ে যাবে। প্রতি পাঁচটি উভচর প্রাণীর মধ্যে দুটি বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা বাড়লে নতুন করে উভচরদের ইতিহাস লিখতে হবে।

ভারতের ফ্রগম্যান হিসেবে আলোচিত সত্যভামা দাস বলেন, ব্যাঙ বৈচিত্র্যপূর্ণ একটি প্রাণী। এগুলো খরা, বন্যা, ঝড়সহ পরিবেশের আকস্মিক পরিবর্তনে খুবই সংবেদনশীল আচরণ করে। পরিবেশ বা বাস্তুতন্ত্রের থার্মোমিটার স্কেল বা ব্যারোমিটার বলা যায় ব্যাঙদের। ভারতীয় উপমহাদেশে ৪৬০টির প্রজাতির ব্যাঙ আছে। চা, কফি, মসলা ও অন্যান্য ফসল চাষের জন্য ব্যাঙের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। গবেষক গার্গ বলেন, ‘সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হচ্ছে, অনেক ব্যাঙ শনাক্ত হওয়ার আগেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি ব্যাঙের প্রজাতিকে চিনতেই না পারি, তাহলে তাদের সংরক্ষণ করার জন্য কী করতে হবে, তা জানতে পারব না।

ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় ফিল্ড ওয়ার্কের সময় বেশ ছোট একটি ব্যাঙের খোঁজ পাই। সেটি আঙুলের ডগায় বসতে পারে। আমি কখনোই ভাবিনি ব্যাঙ এত সুন্দর হতে পারে। আবিষ্কার করার মতো অনেক কিছু আছে, যদিও অনেক প্রজাতি হারিয়ে গেছে। আবার আমরা হারিয়ে যাওয়া ব্যাঙেরও খোঁজ পেয়েছি। ১৩৬ বছর আগে গুন্থার নামের একটি ব্যাঙ হারিয়ে যায়। সম্প্রতি বন্য অঞ্চলে পুনরায় সেই ব্যাঙের খোঁজ পাই আমরা। শুধু আতঙ্কিত হলেই চলবে না, প্রকৃতি নিজেও নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করছে। আমাদের আরও গুরুত্ব দিয়ে ব্যাঙসহ প্রাণীদের রক্ষার কৌশল বের করতে হবে।’
সূত্র: ফিজিস ডট অর্গ ও হার্ভার্ড নিউজ