আফ্রিকায় শতাধিক প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতির খোঁজ

আফ্রিকায় নতুন প্রাণী ও উদ্ভিদের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা
ছবি: সায়েন্টিফিক রিপোর্টস

দুই দশকের বেশি সময় ধরে পরিশ্রমের পর আফ্রিকায় শতাধিক প্রাণী ও উদ্ভিদের খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। জৈবিক জরিপ আর ৩০টির বেশি বৈজ্ঞানিক অভিযানের পর আফ্রিকার দক্ষিণ অঞ্চল থেকে প্রাণী ও উদ্ভিদের খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই গবেষণায় সারা বিশ্ব থেকে প্রায় শতাধিক প্রাণিবিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ যুক্ত রয়েছেন। বিজ্ঞানীরা আনুষ্ঠানিকভাবে আফ্রিকার দক্ষিণ অঞ্চলকে একটি নতুন প্রাণের আবাসস্থল হিসেবে প্রস্তাব করেছেন। নতুন এলাকার নাম রাখা হয়েছে দক্ষিণ–পূর্ব আফ্রিকা মাউন্টেন আর্কিপেলাগো বা এসইএএমএ। এই অঞ্চলের বিভিন্ন পর্বত উত্তর মোজাম্বিক থেকে মালাউইয়ের মাউন্ট মুলানজে পর্যন্ত প্রসারিত। মাউন্ট মুলানজে আফ্রিকার দক্ষিণ অংশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত।

অক্সফোর্ড ব্রুকস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী জুলিয়ান বেলিসের নেতৃত্বে এই সব প্রাণী ও উদ্ভিদের খোঁজ মিলেছে। বেলিস বলেন, গবেষণার মাধ্যমে ১২৭টি উদ্ভিদ প্রজাতি ও ৯০টির বেশি প্রজাতির উভচর, সরীসৃপ ও পাখির দেখা মিলেছে। বেশ কিছু প্রজাপতি ও মিঠাপানির কাঁকড়ার খোঁজ মিলেছে। এসব প্রজাতি পৃথিবীতে আর কোথাও পাওয়া যায় না। এই অঞ্চলের বিভিন্ন পর্বত লাখো বছর আগে গঠিত হয়েছিল। এই অঞ্চলে মধ্য-উচ্চতার রেইনফরেস্টের পাশাপাশি জৈবিকভাবে অনন্য মাউন্টেন তৃণভূমি দেখা যায়। উঁচু পর্বতের ওপরে যে তৃণভূমি থাকে, তাকে মাউন্টেন তৃণভূমি বলে।

গবেষণার প্রধান অধ্যাপক বেলিস বলেন, ‘নতুন জীব অঞ্চল ব্যাপকভাবে বিশ্বের অন্য জায়গায় প্রাণ ও উদ্ভিদ সংরক্ষণের জন্য নতুন তথ্যাদি দিচ্ছে আমাদের। এই অঞ্চলের বিশাল ভূমি বা পানির আধার আছে, যা নতুন ধরনের প্রাণী ও উদ্ভিদের ভৌগোলিকভাবে উপস্থিতি নিশ্চিত করছে। নতুন জীব অঞ্চলের খোঁজ পাওয়া বেশ বিরল একটি ঘটনাই বটে। বহু বছরের গবেষণা অনুসরণ করে এই আলাদা অঞ্চলের খোঁজ মিলেছে। আমরা শত শত প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ নথিভুক্ত করেছি। এই এলাকার বাস্তুতন্ত্রের ভূতত্ত্ব, জলবায়ু ও জেনেটিক ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেছি।’

মোজাম্বিকের লুরিও বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী হারিথ ফারুক বলেন, ‘আরও প্রজাতি আবিষ্কার করা বাকি রয়েছে। এই অঞ্চলে আলাদাভাবে রেইনফরেস্ট, পাহাড়ি তৃণভূমি ও গুল্মভূমি দেখা যায়। সবাই অনন্য বৈশিষ্ট্যের উদ্ভিদ ও প্রাণী ধারণ করছে। আবিষ্কারের জন্য আরও অনেক কিছু বাকি আছে। আমরা সব প্রাণীর তথ্য রেকর্ড করার আগেই বেশ কিছু প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।’

বিশ্বব্যাপী নানা কারণে বিভিন্ন জীব অঞ্চল মারাত্মক হুমকির মধ্যে রয়েছে। বিজ্ঞানীরা প্রায় ২০ বছর আগে এই অঞ্চলে তাঁদের জরিপ শুরু করেছিলেন। লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের বিজ্ঞানী গ্যাব্রিয়েলা বিটেনকোর্ট বলেন, সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন পাহাড় থেকে রেইনফরেস্ট পাঁচ ভাগের এক ভাগ হারিয়ে গেছে। কোনো কোনো এলাকায় প্রায় অর্ধেক বন উজাড় হয়েছে।

উচ্চ জীববৈচিত্র্যের এই এলাকা ক্রমেই হুমকির সম্মুখীন। এখানকার মাবু বন দক্ষিণের বৃহত্তম রেইনফরেস্ট। মাবু পর্বতের মতো কিছু বন স্থানীয় সম্প্রদায় কার্যকরভাবে সুরক্ষিত রাখছে। অন্য সব পর্বত যেমন মাউন্ট লিকো বেশ দুর্গম। অনেক জায়গা আনুষ্ঠানিক সুরক্ষার অভাবে রয়েছে। কৃষিকাজ, প্রাণী শিকার আর জ্বালানি ও কাঠের চাহিদার জন্য বন ও পর্বত চাপে রয়েছে।

সূত্র: ফিজিস ডট অর্গ