ম্যালেরিয়ার মশার বিরুদ্ধে কাজ করবে রান্নাঘরের সাবান

গবেষণাগারে কাজ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় এল পাসোর বিজ্ঞানীরাফিজিস ডট অর্গ

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় এল পাসোর বিজ্ঞানীরা মশার বিরুদ্ধে সাবান ব্যবহারের কৌশলে সাফল্য পেয়েছেন। তাঁরা দেখেছেন বিশেষ কয়েকটি কীটনাশকে অল্প পরিমাণে তরল সাবান যোগ করলে কীটনাশকের ক্ষমতা দশ গুণ বেড়ে যাচ্ছে। ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে দশকের পর দশক যুদ্ধ চলছে। সেই যুদ্ধে বিজয়ের কৌশল হিসেবে সাবানের ব্যবহার নিয়ে দারুণ এক গবেষণার কথা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ‘পিএলওএস নেগলেকটেড ট্রপিক্যাল ডিজিজ’ সাময়িকীতে একটি নতুন গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে এ নিয়ে। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় এল পাসোর বিজ্ঞানীরা এরই মধ্যে বাস্তবে সাবানের ব্যবহার নিয়ে কাজ করছেন।

এই আবিষ্কারের ফলাফলকে মাঠপর্যায়ের গবেষকেরা আশাব্যঞ্জক বলে মনে করছেন। বিজ্ঞানী কলিনস কামডেম বলেন, ম্যালেরিয়া বহনকারী মশা বর্তমানে ব্যবহৃত কীটনাশকরোধী হয়ে উঠেছে। মশার প্রতিরোধক্ষমতা বেড়েছে। গত দুই দশকে মশারা নিজেদের বদলে ফেলেছে। বেশির ভাগ কীটনাশকের বিরুদ্ধে মশার দৃঢ় প্রতিরোধ দেখা যাচ্ছে। নতুন কীটনাশক তৈরি করা সহজ কাজ নয়। এই বিজ্ঞানী আগে ক্যামেরুনের সেন্টার ফর রিসার্চ ইন ইনফেকশাস ডিজিজেজে গবেষণা করতেন। সেখানেই তিনি কীটনাশক পরীক্ষা করার সময় প্রথম সাবানের বুস্টিং করার ক্ষমতা টের পান।

ল্যাবরেটরি ও মাঠপর্যায়ের পরীক্ষায় সাবানের কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা নিওনিকোটিনয়েডস নামের কীটনাশকের সক্ষমতা সাবানের মাধ্যমে বাড়ানোর মাত্রা পরিমাপ করেছেন। নিওনিকোটিনয়েডসের মাধ্যমে সাধারণভাবে মশাকে মারা যায় না। সাবানের মাধ্যমে এই কীটনাশকের ক্ষমতা বাড়ানোর পরে ভিন্ন ফলাফল দেখা যায়।
গবেষণা দলের সদস্য বিজ্ঞানী ক্যারোলিন ফুয়েট বলেন, সাবান হলো বুস্টিং পদার্থ। এ কারণে কীটনাশকের ক্ষমতা বেড়ে যায়। ম্যালেরিয়া একটি ধ্বংসাত্মক মশাবাহিত রোগ। সাব-সাহারান আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকায় বহু মানুষ এই রোগে মারা যায়। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হলে জ্বর, ক্লান্তি, মাথাব্যথা এবং ঠান্ডা লাগে। যেকোনো সময় এই রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অনুসারে ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী ম্যালেরিয়ায় ৬ লাখ ২৭ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। আর আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে ২৪ কোটি ১০ লাখের মতো। বেশ কিছু কীটনাশকের প্রতি মশার সংবেদনশীলতা খেয়াল করা যায়। তা নিয়ে পরীক্ষা করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষ নিয়মকানুনও আছে। সেই নিয়ম অনুসারে গবেষণার সময় তেলজাতীয় নানান পদার্থ ব্যবহার করেন বিজ্ঞানী কলিন্স কামডেম। তখন তরল সাবান ও কীটনাশকের মিশ্রণের প্রতি মশার বিশেষ আচরণ খেয়াল করেন তিনি। সাবানের ব্যবহারের কারণে কীটনাশকের মাধ্যমে মশার মৃত্যুহার বাড়তে দেখা যায়।

বিজ্ঞানী কামডেম জানান, ‘রান্নাঘরে ব্যবহৃত তরল সাবান আমরা কীটনাশকের সঙ্গে ব্যবহার করি। আমরা কোনো ফলাফল পাবো, এমনটা ভেবে পরীক্ষা করিনি। কিন্তু ব্যবহারের পরে বেশ ভালো কার্যকারিতা খেয়াল করেছি। আমরা তিসি তেলভিত্তিক তিনটি কম দামের সাবান ব্যবহার করি। এ ধরনের সাবান সাব-সাহারান আফ্রিকা এলাকায় বেশ প্রচলিত। মাইত্রে স্যাভন ডি মার্সেই, ক্যারোলিন স্যাভন নয়র এবং লা পের্ড্রিক্স স্যাভন নামের তিনটি প্রচলিত সাবান পরীক্ষা করি। চারটি ভিন্ন নিওনিকোটিনয়েডস ধরণের কীটনাশক আমরা সাবানের সঙ্গে যুক্ত করি। অ্যাসিটামিপ্রিড, ক্লোথিয়ানিডিন, ইমিডাক্লোপ্রিড ও থায়ামেথক্সাম কীটনাশক ব্যবহার করা হয়।  সাবান ব্যবহারের কারণে কীটনাশকের কার্যকারিতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। তিন ধরণের সাবান ব্যবহারের ফলে মশার মৃত্যুহার ৩০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

ক্যামেরুন ইউনিভার্সিটি অফ ইয়াউন্ডের গবেষণা দলের সদস্য বিজ্ঞানী আশু ফ্রেড বলেন, আমরা পাইরেথ্রয়েড নামে পরিচিত এক শ্রেণীর কীটনাশকে সাবান যোগ করার পরীক্ষাও চালিয়েছে। যদিও এইক্ষেত্রে কোন বিশেষ কার্যকারিতা খেয়াল করা যায়নি। আমরা কীটনাশক কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য ঠিক কতটা সাবানের প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করতে চেষ্টা করছি।  আমরা একটি সাবান-কীটনাশক ফর্মুলেশন তৈরি করতে চাই। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে খুব সহজে যেন ব্যবহার করা যেতে পারে সেই বিষয়টি খেয়াল রাখছি।
সূত্র: ফিজিস ডট অর্গ