কফি দিয়ে দালান বানাবেন কি

প্রক্রিয়াজাত কফি দিয়ে শক্তিশালী কংক্রিট তৈরি করছেন একদল প্রকৌশলীরয়টার্স

‘গুরু ঘর বানাইলা কী দিয়া’—নগরবাউল জেমসের এ প্রশ্নের উত্তর জানা না গেলেও এবার ঘর বানাতে কফি ব্যবহারের পরিকল্পনা করছেন অস্ট্রেলিয়ার একদল প্রকৌশলী। প্রক্রিয়াজাত কফি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রচলিত কংক্রিটের চেয়ে শক্তিশালী কংক্রিট তৈরিতে সাফল্য পেয়েছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, নতুন এ কংক্রিট প্রচলিত কংক্রিটের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি শক্তিশালী। কফির বীজ পুনর্ব্যবহারের কৌশলের অংশ হিসেবে আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এই উদ্ভাবন এরই মধ্যে বেশ সারা ফেলেছে। কফি বর্জ্যের বিকল্প এ ব্যবহার নিয়ে গবেষণাপত্রও প্রকাশ করেছে জার্নাল অব ক্লিনার প্রোডাকশন।

গবেষকেরা ব্যবহৃত কফিগুঁড়া প্রক্রিয়া করে বায়োচার তৈরি করছেন, যা অনেকটা কয়লার টুকরার মতো। কংক্রিট উৎপাদনে বালুর পরিবর্তনে মূলত এই কফিগুঁড়া ব্যবহার করা হচ্ছে। এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. শ্যানন কিলমার্টিন-লিঞ্চ। প্রকৌশলের জগতে বেশ নামডাক রয়েছে তাঁর। করোনা মহামারির সময় পিপিই দিয়ে শক্তিশালী কংক্রিট তৈরি করে নজর কেড়েছিলেন তিনি। প্রক্রিয়াজাত কফির মাধ্যমে শক্তিশালী কংক্রিট তৈরির বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন, ‘কর্মস্থলে কফির উচ্ছিষ্ট কমানোর লক্ষ্যে আমরা কাজ করছিলাম। ফেলে দেওয়া কফিগুঁড়া থেকেই উন্নত মানের এই কংক্রিট উদ্ভাবন করেছি। ব্যবহৃত কফিগুঁড়া পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা বিকল্পভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করছি। পুরো প্রক্রিয়া অক্সিজেনের অনুপস্থিতে করার পাশাপাশি কম কার্বন নিঃসরণের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। গ্রিনহাউস গ্যাস আমরা আর বাড়াতে চাই না।

ফেলনা জিনিস দিয়ে তৈরি এ উদ্ভাবনকে ‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’ ভাবসম্প্রসারণের বাস্তব উদাহরণ বলা যায়। প্রকৌশলীরা এখন স্থানীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রক্রিয়াজাত কফি দিয়ে তৈরি কংক্রিটের মাধ্যমে ফুটপাত তৈরির চেষ্টা করছেন। ফুটপাতে সাফল্যের পরে ভবন নির্মাণে কাজ শুরু করবেন তাঁরা। অস্ট্রেলিয়াতে খাদ্যের উচ্ছিষ্টের জন্য ৩ শতাংশ গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়। প্রতিবছর ৭৫ হাজার টন কফি বর্জ্য অস্ট্রেলিয়াতে জমা হয় বলে জানাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় খাদ্যবর্জ্য কৌশলপত্র।

পাইরোলিসিস নামে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত কফি গুঁড়া করার পুরো কাজটি করা হচ্ছে। এ জন্য প্রথমে কফির বর্জ্য ৩৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হয়। যদিও সাধারণ পাইরোলিসিস প্রক্রিয়াতে ৭০০-৯৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। কংক্রিটে যে পরিমাণ বালু ব্যবহার করা হয়, তার ১৫ শতাংশ কফিগুঁড়া ব্যবহার করছেন গবেষকেরা। এতে পুরো কংক্রিট কাঠামোর শক্তিমত্তা ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। বালুর বিকল্প হিসেবে কফিগুঁড়া বেশ কার্যকর বলে জানায় গবেষক দল।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান