অ্যান্টার্কটিকা জয় করল বোয়িং বিমান

নর্স আটলান্টিক এয়ারওয়েজের পরিচালনায় বোয়িংয়ের ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমান প্রথমবারের মতো অ্যান্টার্কটিকার বুকে অবতরণ করেছেসংগৃহীত

রহস্যময় মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা। এই মহাদেশের মালিক বলা হয় পেঙ্গুইনদের। ১৮ প্রজাতির কোটি কোটি পেঙ্গুইনের বাস এখানে। মানুষ বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য মাঝেমধ্যে সেখানে গেলেও চরম আবহাওয়া মানুষের স্থায়ী উপনিবেশ স্থাপনে বাধা দেয়। সেই সব চ্যালেঞ্জকে পাশে রেখেই বিশালাকার বোয়িং বিমান প্রথমবারের মতো অ্যান্টার্কটিকায় অবতরণ করেছে।

নর্স আটলান্টিক এয়ারওয়েজের পরিচালনায় বোয়িংয়ের ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানটি প্রথমবারের মতো অ্যান্টার্কটিকার বুকে নামল। অ্যান্টার্কটিকায় বোয়িং নামিয়ে প্রথম এয়ারলাইন সংস্থা হিসেবে বিমান চলাচলের ইতিহাসে নাম লেখাল নর্স আটলান্টিক এয়ারওয়েজ। এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বরে একটি এয়ারবাস এ৩৪০ বিমান প্রথমবারের মতো অ্যান্টার্কটিকায় অবতরণ করেছিল। সেবার হাই–ফ্লাই নামের একটি বিমান পরিবহন সংস্থা বিমানটি অবতরণ করায়।

ড্রিমলাইনার বিমান যাত্রা শুরু করে নরওয়ের রাজধানী অসলো থেকে। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে লেওভার করে সরাসরি ছুটে যায় অ্যান্টার্কটিকার কুইন মড ল্যান্ডের ট্রল এয়ারফিল্ডে। ঐতিহাসিক এই ফ্লাইটে গবেষণার জন্য ১২ টন প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পরিবহন করা হয়। এ ছাড়া নরওয়েজিয়ান পোলার ইনস্টিটিউটের ৪৫ গবেষকও যাত্রী হিসেবে নরওয়ে থেকে অ্যান্টার্কটিকা বিমানে ভ্রমণ করেন। এ সফরের মাধ্যমে বোয়িং ৭৮৭ বিমান প্রতিটি মহাদেশে সফলভাবে ফ্লাইট পরিচালনার বিরল গৌরব অর্জন করল।

বরফ আর তুষারের দুনিয়ায় অ্যান্টার্কটিকার বুকে তিন হাজার মিটার লম্বা নীল বরফের রানওয়েতে নামে বোয়িং। ট্রল এয়ারফিল্ডকে বলা হয় অ্যান্টার্কটিকার সঙ্গে বিশ্বের সংযোগ সেতু। ড্রোনিং মড ল্যান্ড এয়ার নেটওয়ার্ক প্রকল্পের অংশ হিসেবে এয়ারফিল্ডটি তৈরি করা হয়। এই প্রকল্পে নরওয়ে, বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, ভারতসহ ১১টি দেশ যুক্ত। নরওয়ে থেকে কুইন মড ল্যান্ডের ভৌগোলিক দূরত্ব অনেক। ১৯৩৯ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত অ্যান্টার্কটিকার বিভিন্ন অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব ও মালিকানা দাবি করত স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ নরওয়ে। এখন অ্যান্টার্কটিকার মালিকানা কেউ দাবি করতে পারে না। ১৯৬১ সালে সই করা অ্যান্টার্কটিক চুক্তি অনুসারে এই ভূখণ্ডের মালিকানা কেউ দাবি করতে পারে না।

নর্স আটলান্টিক এয়ারওয়েজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বজর্ন টোরে লারসেন বলেন, ‘এই ভ্রমণ আমাদের জন্য বড় একটি অর্জন। প্রথমবারের মতো ড্রিমলাইনার অবতরণের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাফল্য পেয়েছি। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অনন্য অভিযানে যুক্ত হতে পেরে আমরা গর্বিত। আমাদের উচ্চপ্রশিক্ষিত দক্ষ পাইলট ও ক্রুরা দারুণ কাজ করেছেন। ড্রিমলাইনারের মতো বড় কার্গো ধারণক্ষমতার বিমানের কারণে অ্যান্টার্কটিকায় দ্রুত ও বেশি পরিমাণ মালপত্র পরিবহনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ছোট বিমানের মাধ্যমে ঘন ঘন ফ্লাইটের সংখ্যা এখন কমে যাবে বলে গবেষকেরা মনে করছেন। অ্যান্টার্কটিকার মতো পরিবেশে বিমান চালানো পরিবেশের ওপর চাপ তৈরি করে।’

বোয়িংয়ের বিশেষজ্ঞ পল এরল্যান্ডসন বলেন, ড্রিমলাইনারের জ্বালানি ধারণক্ষমতা অনেক। এই বিমানে অ্যান্টার্কটিকা থেকে কেপটাউনে যাওয়া-আসা একবার জ্বালানি নেওয়ার মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়েছে।

নরওয়েজিয়ান পোলার ইনস্টিটিউটের পরিচালক ক্যামিলা ব্রেককে বলেন, অ্যান্টার্কটিকায় বড় বিমান চালানো বড় একটা চ্যালেঞ্জও বটে। বড় ও আধুনিক বিমান ব্যবহার করার পরিবেশগত সুবিধা আছে। বড় আকারের বিমান পরিচালনার মাধ্যমে কার্বনের সামগ্রিক নিঃসরণ ও অ্যান্টার্কটিকায় পরিবেশগত চাপ কমানোর সুযোগ তৈরি হলো। এ ধরনের একটি বড় বিমান অবতরণের মাধ্যমে নতুন সম্ভাবনা উন্মুক্ত হলো।
অ্যান্টার্কটিকায় বড় বিমানের পরিচালনার জন্য উপযুক্ত রানওয়ে তৈরি করাও বেশ বড় চ্যালেঞ্জ। অ্যান্টার্কটিকার চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে বরফের রানওয়ে তৈরি ও সংরক্ষণ করা কঠিন। একই সঙ্গে কুয়াশা ও বাতাসের মতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় সবাইকে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস তুলনামূলক উষ্ণ। এ সময় বরফ গলতে শুরু করলে রানওয়ে পিচ্ছিল হয়ে যায়। তখন পুরোপুরি বিমান অবতরণের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে যায় রানওয়ে। এসব কারণে সারা বছর বিমান পরিচালনা করা কঠিন।

সূত্র: ইউরো এশিয়ান টাইমস