বিশ্বের সবচেয়ে বড় হিমশৈল আঘাত হানতে পারে দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপে
রহস্যময় মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা। বরফে ঘেরা এই মহাদেশেই রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম হিমশৈল (আইসবার্গ)। ‘এ২৩এ’ নামের হিমশৈলটি আকারে যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের দ্বিগুণের বেশি বড়। বিশাল আকারের হিমশৈলটি বর্তমানে ধীরে ধীরে অ্যান্টার্কটিকার দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপের দিকে সরে যাচ্ছে। এর ফলে হিমশৈলটির আঘাতে পেঙ্গুইন ও সিলের বাস্তুতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, ১৯৮৬ সালে হিমশৈলটি অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তিন দশকের বেশি সময় ধরে স্থির থাকার পর ২০২০ সালের দিকে হিমশৈলটি অবস্থান পরিবর্তন করে উত্তর দিকে সরতে শুরু করে। এ বিষয়ে ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের বিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু মেইজার্স জানিয়েছেন, স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণ ইঙ্গিত করছে বড় আকারের এই হিমশৈল এখনো তার অখণ্ডতা বজায় রেখেছে। এর আগে দেখা গেছে, অনেক বড় হিমশৈল দক্ষিণ মহাসাগর অতিক্রম করার সময় ছোট ছোট টুকরা হয়ে ভেঙে যায়। তবে এই হিমশৈলটির গতিপথ আসলে কোন দিকে, তা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে না। অনুমান করা যায়, আগামী দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে দক্ষিণ জর্জিয়া এলাকায় পৌঁছাবে এই হিমশৈল। হিমশৈলটি ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের প্রায় ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত দক্ষিণ জর্জিয়াকে ধাক্কা দিয়ে সামনে চলে যেতে পারে। আবার ঢালু সমুদ্রতলের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে কয়েক মাস সেখানে আটকে থাকতে পারে। এমনকি এটি ভেঙে টুকরা টুকরাও হয়ে যেতে পারে। হিমশৈলটির আঘাতের কারণে দ্বীপের সিল ও পেঙ্গুইনের জন্য খাবারের সংকট দেখা দেওয়ার পাশাপাশি প্রাণীগুলোর প্রজননেও মারাত্মক প্রভাব দেখা যেতে পারে।
অতীতে যখনই স্থলভাগের সঙ্গে হিমশৈলের সংঘর্ষ হয়েছে তখনই অনেক পেঙ্গুইনছানা ও সিলশাবকের মৃত্যু হয়েছে। আর তাই এক লাখ টন ওজনের এই বিশাল হিমশৈল এখন অ্যান্টার্কটিক এলাকার আতঙ্ক। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সমুদ্রের জেট স্ট্রিম বা স্রোতের মধ্যে আছে হিমশৈল, যে কারণে আঘাতের মাত্রা অনেক বেশি হতে পারে।
হিমশৈলটির গতিপথ কিছুটা ভিন্ন হতে পারে বলে মনে করেন চিলির ইউনিভার্সিটি অব সান্তিয়াগো ও ন্যাশনাল এন্টার্কটিক রিসার্চ কমিটির বিজ্ঞানীরা। তাঁদের ধারণা, হিমশৈলটি সমুদ্র স্রোতের কারণে দক্ষিণ জর্জিয়াকে পাশ কাটিয়ে যাবে। দ্বীপটি সমুদ্রের স্রোতের ক্ষেত্রে একটি বাধা হিসেবে কাজ করে। আর এ কারণে দ্বীপটিতে হিমশৈলটির সরাসরি আঘাতের সম্ভাবনা বেশ কম।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া