আপনিও নোবেল পুরস্কার জিততে পারেন, যদি

নোবেল পুরস্কাররয়টার্স

পাঠকদের মধ্যে যাঁদের নামের অক্ষর ইংরেজি ‘জে’ ও ‘এ’ অক্ষর দিয়ে শুরু হয়েছে, তাঁদের সবাইকে অভিনন্দন। বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত নোবেল পুরস্কার আপনিও পেতে পারেন ভবিষ্যতে। প্রতিবছর পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। তবে চাইলেই নোবেল পুরস্কার পাওয়া সম্ভব নয়।

বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ‘নেচার’ এখন পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্রে ৬৪৬ জন নোবেল বিজয়ীর তথ্য বিশ্লেষণ করে কীভাবে নোবেল পুরস্কার জেতা যায়, তার একটি নির্দেশনা তৈরি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে ৬৯ জনের নাম শুরু হয়েছে ইংরেজি ‘জে’ অক্ষর দিয়ে। আর ৬২ জনের নাম ‘এ’ অক্ষর দিয়ে শুরু হয়েছে। আর তাই আপনার নাম যদি ইংরেজি ‘জে’ ও ‘এ’ অক্ষর দিয়ে শুরু হয়, তাহলে আপনারও ভবিষ্যতে নোবেল পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা রয়েছে।

১৯০১ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছরই নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। কয়েক বছর যুদ্ধের কারণে বাদ ছিল। নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের গড় বয়স ৫৮ বছর হলেও পুরস্কার জেতার সেরা সময় হচ্ছে ৫৪ বছর। এখন পর্যন্ত ২৪ জন ৫৪ বছর বয়সে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। আর তাই যাঁদের বয়স বর্তমানে ৪০–এর ঘরে, তাঁদের আরও বেশ কয়েক বছর সময় আছে নোবেল পুরস্কার জেতার।

সবচেয়ে কম বয়সী নোবেল বিজয়ী হলেন লরেন্স ব্র্যাগ। তিনি ১৯১৫ সালে ২৫ বছর বয়সে তাঁর বাবা উইলিয়াম ব্র্যাগের সঙ্গে মিলে এক্স-রে ব্যবহার করে স্ফটিক কাঠামো বিশ্লেষণের কাজের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। সবচেয়ে বেশি বয়সী বিজয়ী হলেন জন বি গুডএনাফ। তিনি ২০১৯ সালে ৯৭ বছর বয়সে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি তৈরির জন্য আরও দুজনের সঙ্গে পেয়েছেন রসায়নে নোবেল পুরস্কার।

আরও পড়ুন

কিছুটা বৈষম্যমূলক হলেও নেচারের তথ্য বলছে, নোবেল পুরস্কার জেতার সেরা সুযোগ থাকে যদি আপনি পুরুষ হন। তবে যদি আপনি নারী হন, তবে পুরস্কার জেতার জন্য চিকিৎসাশাস্ত্র আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো ক্ষেত্র। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নারী বিজয়ীদের সংখ্যা বেড়েছে। বিংশ শতাব্দীতে মোট ১১ নারী নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নারীরা পেয়েছেন আরও ১৫টি পুরস্কার।

নেচার সাময়িকীর তথ্যমতে, নোবেল পুরস্কার পাওয়ার উপযোগী কাজ করার পরও পুরস্কারের জন্য আপনাকে প্রায় দুই দশক অপেক্ষা করতে হবে। সেই হিসাবে গড়ে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে আপনার বড় ধরনের প্রকল্প শুরু করা উচিত। সময় যত গড়িয়েছে, ততই বিজ্ঞানীদের কাজ ও পুরস্কারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান বেড়েছে।

১৯৬০ সালের আগে যাঁরা পুরস্কৃত হয়েছেন, তাঁরা গড়ে ১৪ বছর অপেক্ষা করেছেন পুরস্কারের জন্য। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, পুরস্কার ভাগাভাগি করার মানসিকতা থাকতে হবে। চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল বিজয়ীরা সবচেয়ে বেশি পুরস্কার ভাগ করে নেন। এ বিষয়ে প্রায় ৬৫ শতাংশ পুরস্কার দুজন বা তিনজন বিজয়ীর মধ্যে ভাগ করা হয়েছে। রসায়নে ৫৫ শতাংশ পুরস্কার একজন বিজয়ীকে দেওয়া হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে একক বিজয়ীর সংখ্যা কমে গেছে।

আরও পড়ুন

পুরস্কারপ্রত্যাশীদের জন্য ভৌগোলিক অবস্থানও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। নোবেল পুরস্কার জেতার সেরা সুযোগ পেতে হলে আপনাকে উত্তর আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করতে হবে। কারণ, এখন পর্যন্ত নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের প্রায় ৫৪ শতাংশই উত্তর আমেরিকায় জন্মেছেন। যদি আপনি অন্য কোথাও জন্মগ্রহণ করেন তবে নোবেল জেতার জন্য এখন পর্যন্ত সেরা বিকল্প হলো যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়া। কারণ, এখন পর্যন্ত স্বল্প ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ থেকে মাত্র দশজন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।

আরও পড়ুন

নোবেল পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা আপনি ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারেন যদি আপনি এমন কোনো বিজ্ঞানীর পরীক্ষাগারে কাজ করেন যিনি এরই মধ্যে নোবেল জিতেছেন বা ভবিষ্যতে জিতবেন। পুরস্কার বিজয়ীরা প্রায়ই অন্য বিজয়ীদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পান বা তাঁদের পরীক্ষাগার কাজ করেন।

বিজ্ঞানী জন ডব্লিউ স্ট্রাট ১৯০৪ সালে গ্যাসের বৈশিষ্ট্য নিয়ে কাজের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল জিতেছিলেন। তাঁর ২২৮ জন একাডেমিক বংশধর (ছাত্র বা ছাত্রের ছাত্র) নোবেল জিতেছেন। জন ডব্লিউ স্ট্রাটের কাছ থেকে সরাসরি প্রশিক্ষণ নিয়ে ১৯০৬ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বিজ্ঞানী জোসেফ থমসন। এরপর থমসনও অনেক বিজ্ঞানীকে প্রশিক্ষণ দেন যাঁদের মধ্যে পদার্থবিজ্ঞানে নয়জন ও রসায়নে দুজন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে পুরস্কার জেতা ৭৩৬ জনের মধ্যে অবিশ্বাস্যভাবে ৭০২ জন একই একাডেমিক পরিবারের অংশ ছিলেন।

সূত্র: নেচার ডটকম

আরও পড়ুন