আসছে চাঁদের মান সময়

চাঁদের মান সময় নির্ধারণ করার দায়িত্ব পেয়েছে নাসারয়টার্স

ছোটবেলায় বিজ্ঞান বইয়ের ভূগোল অধ্যায়ে পৃথিবীর নানা জায়গার নানা সময়ের কথা জেনেছি। গ্রিনিচের মান মন্দিরের হিসেবে গ্রিনিচ মিন টাইম (জিএমটি) বা মান সময় অনুসারে সারা বিশ্বে সময় গণনা করা হয়। এই যেমন বাংলাদেশ জিএমটি অনুসারে বাংলাদেশের সময় ৬ ঘণ্টা এগিয়ে থেকে। গ্রিনিচে যখন রাত ১২টা তখন ঢাকায় ভোর ৬টা। চলাচলের হিসাব বা যোগাযোগের সুবিধার জন্য ১৮৪৭ সালের দিকে এই সময় চালু করা হয়। এখন মানুষ যখন মঙ্গল গ্রহ বা চাঁদে বসবাসের চেষ্টা করছে, তখন যোগাযোগের জন্য সময়ের হিসাবের প্রয়োজন পড়ছে। গ্রিনিচ মান সময়ের মতো চাঁদের মান সময় নিয়ে কাজ করছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা—নাসা। চাঁদের কাজকর্ম চন্দ্রকেন্দ্রিক সময়ে করার চেষ্টাতেই কাঠামো নিয়ে কাজ করবে নাসা।

নাসাকে লুনার টাইম প্রতিষ্ঠার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউস চাঁদে কীভাবে সময়ের হিসাব করতে হবে, তা জানতে নাসাকে দায়িত্ব দিয়েছে। ইউএস অফিস অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি পলিসির (ওএসটিপি)  প্রধান এমনই একটি নোটিশ পাঠিয়েছে নাসাকে। চাঁদের জন্য নতুন এই রেফারেন্স সিস্টেম স্থাপনের জন্য অন্যান্য মার্কিন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। নতুন চাঁদের সময়কে কো–অর্ডিনেটেড লুনার টাইম (এলটিসি) বলা হচ্ছে। নাসার হাতে চাঁদের জন্য সময় গণনার হিসাব করতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।

পৃথিবীর সময় আর চাঁদের সময়ের হিসাব এক নয়। চাঁদে মাধ্যাকর্ষণ কম থাকায়, সেখানে সময় একটু বেশি দ্রুত চলে। এলটিসি চন্দ্রের খেয়াযান ও উপগ্রহের বিভিন্ন কাজের হিসাবে ব্যবহার করা হবে। নাসার শীর্ষ যোগাযোগ ও নেভিগেশন কর্মকর্তা কেভিন কগিন্স বলেন, চাঁদের একটি পারমাণবিক ঘড়ি পৃথিবীর একটি ঘড়ির চেয়ে ভিন্ন গতিতে সময় গণনা করবে। আপনি যখন চাঁদ বা মঙ্গল গ্রহের মতো অন্য গ্রহে যান সেখানকার সময় ভিন্নভাবে চলে। নাসা আর্টেমিস কর্মসূচির মাধ্যমে ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরে চন্দ্রপৃষ্ঠে মহাকাশচারী পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। কয়েক ডজন কোম্পানি এই কর্মসূচিতে যুক্ত।

নতুন সময় কাঠামো মহাকাশযানের মধ্যে তথ্যাদি স্থানান্তরের হিসাব রাখতে সহায়তা করবে। পৃথিবী ও চন্দ্রের যোগাযোগের হিসাবে সহযোগিতা করবে। কোন মান সময় না থাকার কারণে পৃথিবীর সঙ্গে সময়ের অসংগতির জন্য চাঁদে অবস্থান বা প্রদক্ষিণের সময় ত্রুটি দেখা দিতে পারে। আমরা নতুন শহরে গেলে ঘড়ির সময় স্থানীয় সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে না নিলে বিপদে পড়ি। চাঁদের সময় না থাকার কারণে এমন বিভ্রাট দেখা যেতে পারে।

পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকার ঘড়ি ও সময় অঞ্চলভেদে সর্বজনীন সমন্বিত সময় ইউটিসি বা জিএমটির হিসাবে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণ করা হয়। চাদের এলটিসি সময় কাঠামো হিসেবের জন্য চাঁদে পারমাণবিক ঘড়ি স্থাপনের প্রয়োজন হতে পারে। এলটিসি কীভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর্টেমিস কর্মসূচিতে ৩৬টি দেশ যুক্ত। মহাকাশ গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও রাশিয়া আর্টেমিস চুক্তিতে সই করেনি। সব মিলিয়ে একটি মান সময় চাঁদের জন্য প্রয়োজন বলে মনে করছেন জ্যোতির্বিদেরা।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) ইউটিসি সময় মানকে আন্তর্জাতিক মান হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে। আবার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন পৃথিবীর নিম্নকক্ষপথে থাকায় সেখানে ইউটিসি সময় ব্যবহার করা হয়। পৃথিবীর সময়ের কখনো গতি বাড়ে কখনো ধীর হয়, লিপ সেকেন্ডের প্রয়োজন হয়। পৃথিবীর বিপরীতে চাঁদের জন্য এসব কারণেই নতুন সময় কাঠামো প্রয়োজন। ২০২৬ সালের পরে চাঁদে নামলেই হাতের ঘড়ির সময় মিলিয়ে নিতে হবে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান