সৌরজগতের বাইরে থাকা বিরল পাথুরে গ্রহে বায়ুমণ্ডলের সন্ধান পেয়েছে নাসা
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের ধারণ করা তথ্য পর্যালোচনা করে আমাদের সৌরজগতের বাইরে থাকা গ্রহ বা বহির্গ্রহে বায়ুমণ্ডলের সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। নাসার তথ্যমতে, এবারই প্রথম সৌরজগতের বাইরে থাকা কোনো পাথুরে গ্রহে বায়ুমণ্ডল থাকার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ পাওয়া গেছে। এত দিন বিশ্বাস করা হতো, খুব ছোট ও বেশি উত্তপ্ত গ্রহ গ্যাসের ঘন স্তর ধরে রাখতে পারে না। টিওআই-৫৬১ বি নামের গ্রহটিকে আলট্রা-শর্ট-পিরিয়ড বা অত্যন্ত স্বল্প মেয়াদের একটি বিরল শ্রেণির বহির্গ্রহ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গ্রহটি পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ১ দশমিক ৪ গুণ বড়। মাত্র ১১ ঘণ্টারও কম সময়ে নিজ নক্ষত্রকে একবার প্রদক্ষিণ করছে গ্রহটি।
টিওআই-৫৬১ বি গ্রহটি নিজ নক্ষত্রের মাত্র ১০ লাখ মাইলের মধ্যে অবস্থান করছে। গ্রহটির এক পাশ সব সময় নক্ষত্রের দিকে থাকে, অর্থাৎ এক পাশে দিন হয়। নক্ষত্রটি সূর্যের চেয়ে কিছুটা ছোট ও কম উত্তপ্ত হলেও কাছাকাছি অবস্থানের কারণে গ্রহটির এক পাশ এতই উত্তপ্ত থাকে যে, পাথর গলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গ্রহটির পৃষ্ঠজুড়ে সম্ভবত ম্যাগমা বা গলিত লাভার মহাসাগর রয়েছে। বিজ্ঞানী জোহানা টেসকের মতে, টিওআই-৫৬১ বি অস্বাভাবিক কম ঘনত্বের একটি গ্রহ। গ্রহটি হালকা বা সুপার-পাফ গ্রহের মতো অতটা হালকা না হলেও পৃথিবীর মতো উপাদানে গঠিত গ্রহের তুলনায় ঘনত্ব অনেক কম।
গ্রহটি হালকা হওয়ার একটি সম্ভাব্য কারণ হচ্ছে গ্রহটির লোহার কেন্দ্র তুলনামূলকভাবে ছোট ও এর পাথুরে ভূত্বক পৃথিবীর চেয়ে কম ঘন। টিওআই-৫৬১ বি একটি অত্যন্ত প্রাচীন ও স্বল্প লোহার নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে। এই নক্ষত্রটি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ‘থিক ডিস্ক’ অঞ্চলে অবস্থিত। ধারণা করা হয়, মহাবিশ্বের প্রাথমিক যুগে যখন রাসায়নিক পরিবেশ আজকের চেয়ে ভিন্ন ছিল, তখনই এই গ্রহটি গঠিত হয়েছিল।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, টিওআই-৫৬১ বি গ্রহের চারপাশে ঘন বায়ুমণ্ডল থাকতে পারে। গ্রহটিতে যদি বায়ুমণ্ডল না থাকত, তবে সেখানে দিনের বেলার তাপমাত্রা হওয়া উচিত ছিল প্রায় ৪ হাজার ৯০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। ওয়েব টেলিস্কোপের তথ্যমতে, সেখানকার তাপমাত্রা প্রায় ৩ হাজার ২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এই তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি হলেও প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। কোনো একটি প্রক্রিয়ায় গ্রহটির তাপমাত্রা তুলনামূলক কম থাকে, যা এখনো অজানা।
গ্রহটির বিষয়ে বিজ্ঞানী অঞ্জলি পিয়েত জানান, গ্রহটিতে তাপ পরিবহনের জন্য শক্তিশালী বাতাস দায়ী হতে পারে। জলীয় বাষ্পের মতো গ্যাস কিছু তাপ শোষণ করে নেয়, ফলে দূর থেকে গ্রহটিকে শীতল দেখায়। এ ছাড়া সিলিকেট কণা দিয়ে তৈরি উজ্জ্বল মেঘ তারার আলো প্রতিফলিত করে বায়ুমণ্ডলকে শীতল রাখতে সাহায্য করতে পারে।
আরেক বিজ্ঞানী টিম লিচেনবার্গের মতে, টিওআই-৫৬১ বি গ্রহে পৃথিবীর তুলনায় অনেক বেশি উদ্বায়ী উপাদান রয়েছে। গ্রহটিকে একটি ভেজা লাভার গোলক হিসেবে বর্ণনা করা যায়।
সূত্র: এনডিটিভি