রাতের তাপমাত্রা ব্যবহার করে তৈরি হবে বিদ্যুৎ
রাতের আকাশ মানেই তারার ঝলক। রাত মানেই যেন পৃথিবীর বিশ্রাম। পরিষ্কার রাতে পৃথিবী নিঃশব্দে দিনের বেলা গ্রহণ করা সূর্যের তাপ মহাকাশে নির্গত করে। যুক্তরাষ্ট্রে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, ডেভিস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীরা পৃথিবীর স্বাভাবিক শীতল হওয়ার প্রক্রিয়া থেকে স্থিতিশীল শক্তি প্রবাহ তৈরি করার পরীক্ষায় সাফল্য পেয়েছেন। তাদের তৈরি করা একটি ছোট আউটডোর ইঞ্জিন রাতের আকাশকে একটি ঠান্ডা জলাধার হিসেবে ব্যবহার করে। যন্ত্রটি সারারাত ধরে উষ্ণ ও শীতল অংশের মধ্যে তাপমাত্রার একটি শক্তিশালী পার্থক্য বজায় রাখতে পারে। সেখান থেকে একটি ছোট পাখা চালানোর মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়।
এই যুগান্তকারী কাজের নেতৃত্ব দেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, ডেভিসের বিজ্ঞানী জেরেমি ম্যান্ডে। সায়েন্স অ্যাডভান্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সাধারণভাবে রাতে বায়ুমণ্ডলের মধ্যে দিয়ে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের একটি স্বচ্ছ ব্যান্ড বরাবর তাপ মহাকাশে লিক হতে থাকে। এই ব্যান্ডটিকে প্রায়শই বায়ুমণ্ডলীয় জানালা বলা হয়। সেখানে বাতাস সবচেয়ে স্বচ্ছ থাকে। বিজ্ঞানীদের তৈরি যন্ত্রের নিচের প্লেটটি মাটির উষ্ণতাকে অনুসরণ করে।
যন্ত্রটিতে কয়েকটি প্লেট আছে। উষ্ণ ও শীতল প্লেটের মধ্যে প্রায় ১৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা মাইনাস ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের একটি স্থির তাপমাত্রার পার্থক্য দীর্ঘ সময়ের জন্য থাকলে ইঞ্জিনটি প্রতি সেকেন্ডে প্রায় একবার ঘোরে। এতে উন্নত উপাদান ব্যবহার করে প্রতি বর্গমিটারে বেশ কয়েক ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। একটি পরীক্ষায় দেখা যায়, যন্ত্রটি সরাসরি একটি পাখা ঘোরাতে পারে। এ ছাড়া একটি ছোট মোটর যুক্ত করে পরিমিত বৈদ্যুতিক প্রবাহও তৈরি করতে পারে যন্ত্রটি। বিজ্ঞানী ম্যান্ডে বলেন, এই ইঞ্জিন খুব কার্যকর হয় যখন শুধু তাপমাত্রার পার্থক্য থাকে। যদি আপনি এটিকে কোন টেবিলের ওপর রাখেন, তবে এটি নিজে থেকে কোনো শক্তি উৎপাদন করবে না।
এই প্রযুক্তির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে স্টার্লিং ইঞ্জিন নামের একটি যন্ত্র। এটি বাহ্যিক তাপ ইঞ্জিন, যা আবদ্ধ গ্যাস ব্যবহার করে তাপমাত্রার পার্থক্যকে গতিতে রূপান্তরিত করে। দুটি পিস্টন ও একটি তাপ সঞ্চয়কারী রিজেনারেটর ব্যবহার করে উষ্ণ ও শীতল অঞ্চলের মধ্যে গ্যাস আদান-প্রদান করা হয় যন্ত্রটিতে। এর ফলে গ্যাস প্রসারিত হয়, তারপর সংকুচিত হয়। তখন ফ্লাইহুইল নামের বিশেষ চাকা ঘুরিয়ে শক্তি উৎপাদিত হয়। ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তি গ্রিনহাউস বা ভবনে রাতের বেলা স্থিতিশীল বায়ু চলাচলের মতো গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা পূরণে ব্যবহার করতে আগ্রহী।
সূত্র: আর্থ