সবুজ অ্যামোনিয়া নিয়ে কাড়াকাড়ি, কেন?

কার্বন ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ কমাতে সবুজ জ্বালানি সারের পেছনে ছুটছে বিশ্বছবি: রয়টার্স

আঠারো শতকে ইউরোপের একদল গবেষক পেরুর ইনকা সভ্যতার সাফল্যের রহস্য জানার জন্য একটি গবেষণা করেন। গবেষণায় দেখা যায়, ইনকা জনগোষ্ঠী পাখির বিষ্ঠা সার হিসেবে ব্যবহার করতেন নিজেদের জমিতে। সে সময় অ্যামোনিয়াসমৃদ্ধ বিষ্ঠা নানা কাজে কৃষিজমিতে ব্যবহার করা হতো। বিশ শতকের শুরুর দিকে সারের চাহিদা বেড়ে যায়। অন্য উপায় খুঁজতে জার্মান রসায়নবিদ ফ্রিৎস হেবার আরেক বিজ্ঞানী কার্ল বসের সঙ্গে যৌথভাবে অ্যামোনিয়া সংশ্লেষণের জন্য হ্যাবার-বস প্রক্রিয়া তৈরি করেন। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই পুরোনো প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে অ্যামোনিয়া সার তৈরি করা হচ্ছে। বিশ্বের জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান খাদ্যের চাহিদা মেটানো জন্য অ্যামোনিয়া সার গুরুত্বপূর্ণ। অ্যামোনিয়া তৈরির প্রক্রিয়ায় জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করা হয়। এই প্রক্রিয়া পরিবেশদূষণের জন্য বেশ আলোচিত। অ্যামোনিয়া উৎপাদনের জন্য বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রায় দুই শতাংশ কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি হয়। এসব কারণে সবুজ জ্বালানি সারের পেছনে ছুটছে বিশ্ব।

সবুজ জ্বালানি ও টেকসই ধারণাকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সবুজ অ্যামোনিয়া তৈরির কাজ শুরু করেছে। সবুজ অ্যামোনিয়া নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের স্টারফায়ার এনার্জির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জো বিচ বলেন, অ্যামোনিয়া গ্যাসের গন্ধের তীক্ষ্ণতা অনেক বেশি। কোনো কারণে অ্যামোনিয়া গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়লে দ্রুত টের পাওয়া যায়। অ্যামোনিয়া নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন ছাড়া আর কিছুই নয়। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বেশির ভাগ নাইট্রোজেনে পূর্ণ। আর পানি মানেই তো হাইড্রোজেন। তবে আমাদের তৈরি অ্যামোনিয়াতে কোনো গন্ধ নেই। আমরা ইলেকট্রোলাইজার ব্যবহার করে পানি থেকে হাইড্রোজেনকে বিভক্ত করছি। তারপর নাইট্রোজেনের সঙ্গে চুল্লিতে অ্যামোনিয়া তৈরি করছি। আমরা যন্ত্রের মাধ্যমে নাইট্রোজেনকে হাইড্রোজেনের সঙ্গে যুক্ত করছি। পরে প্রক্রিয়া শেষে তরল অ্যামোনিয়া সংগ্রহ করা হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়া তৈরি করতে দুই থেকে তিন দিন সময় লেগে যায়। আমরা মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে অ্যামোনিয়া তৈরি করছি। স্টারফায়ার এনার্জি বাণিজ্যিকভাবে ২০২৫ সালের মধ্যে উৎপাদনে যাবে। আপাতত প্রতিদিন এক টন অ্যামোনিয়া উৎপাদনের জন্য কাজ চলছে।

আইসল্যান্ডের আরেকটি প্রতিষ্ঠান অ্যাটমোনিয়া শিপিং কনটেইনারের আদলে ছোট আকারের অ্যামোনিয়া সার কারখানা তৈরির কাজ করছে। সংস্থার সহপ্রতিষ্ঠাতা হেলগা ফ্লোসাডোত্তির বলেন, সার উৎপাদন প্রক্রিয়াকে কার্বনহীন করা গুরুত্বপূর্ণ। অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ও জুপিটার আয়নিক্স নামের প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডগলাস ম্যাকফারলেন বলেন, জ্বালানি হিসেবে অ্যামোনিয়ার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। চাহিদা মেটাতে উল্লেখযোগ্যভাবে উৎপাদন বাড়াতে হবে।

সূত্র: বিবিসি