জেলিফিশের একটি প্রজাতির অমরত্বের রহস্য কী
যেকোনো প্রাণীর মৃত্যুর কোনো বিকল্প নেই। এই চিরাচরিত ধারণা বদলে দিয়েছে টারিটোপসিস ডোরনি নামের বিশেষ প্রজাতির জেলিফিশ। স্বাভাবিক অবস্থায় এই প্রজাতির জীবনচক্র অন্যান্য জেলিফিশের মতো হলেও তাদের শরীরে বয়সের ছাপ পড়ে না। বিজ্ঞানীদের মতে, এই প্রজাতির জেলিফিশ তার জীবনচক্রকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে মৃত্যুকে এড়াতে সক্ষম। আর তাই সমুদ্রের এই বিস্ময়কর প্রাণীটি নিয়ে নানা রহস্য তৈরি হচ্ছে।
টারিটোপসিস ডোরনি প্রজাতির জেলিফিশ আকারে খুবই ছোট, লম্বা ও চওড়ায় মাত্র ৪ দশমিক ৫ মিলিমিটার। ফলে এটি মানুষের কনিষ্ঠ আঙুলের নখের চেয়েও ছোট। ১৮৮৩ সালে টারিটোপসিস ডোরনি প্রজাতির জেলিফিশ আবিষ্কৃত হলেও এটির অলৌকিক ক্ষমতার কথা বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন প্রায় ১০০ বছর পর। বিজ্ঞানীদের তথ্য মতে, প্রতিকূল পরিবেশ বা শারীরিক আঘাতের সম্মুখীন হলে এই জেলিফিশ মারা যাওয়ার পরিবর্তে নিজের বয়স কমিয়ে শৈশব অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। হাইড্রোজোয়ান পরিবারের সদস্য প্রাণীটির শারীরিক গঠন সাধারণ জেলিফিশের মতো মনে হলেও কিছুটা ভিন্ন।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক ক্রিস্টিন স্নিটজলার জানান, জেলিফিশের কোষের এক বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। এটি অনাহার বা পরিবেশগত সংকটে পড়লে এর পূর্ণবয়স্ক কোষকে রূপান্তরিত করে টিস্যুর একটি পিণ্ডে পরিণত করে। সেই পিণ্ড থেকে পুনরায় শৈশব অবস্থা তৈরি হয়। তখন জীবনচক্র একেবারে নতুন করে শুরু হয়। একজন বৃদ্ধ মানুষ যেন পুনরায় শিশু হয়ে বেঁচে উঠলেন, এমন অবস্থা দেখা যাচ্ছে!
যুক্তরাষ্ট্রের লিহাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল লেডেন মনে করেন, এই জেলিফিশের ওপর গবেষণা মানবজাতির দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের রহস্য উন্মোচনে সহায়ক হতে পারে। এই গবেষণা মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পুনর্গঠনের নতুন পথ দেখাতে পারে। গবেষণাগারে এই জেলিফিশ পালন করা তুলনামূলক সস্তা বলে বায়োমেডিক্যাল গবেষণায় এটি বড় ধরনের বিপ্লব আনতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি