সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ কমছে না কেন

সমুদ্রে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলার কারণে পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরি হচ্ছেরয়টার্স

বিশ্বের বিভিন্ন সাগর ও মহাসাগরে লাখ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য ভেসে বেড়াচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব বর্জ্য বিভিন্ন উপায়ে পরিষ্কারের চেষ্টা করা হলেও সুফল মিলছে কম। অনেক বিজ্ঞানীর মতে, এসব বর্জ্য ও ময়লা পরিষ্কারের আগে আমাদের দুবার চিন্তা করা উচিত। সমুদ্রের আবর্জনা পরিষ্কারের যত পদ্ধতি রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে যান্ত্রিক পদ্ধতি দুশ্চিন্তা তৈরি করছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে।

যুক্তরাজ্যের প্লাইমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রিচার্ড থম্পসনের মতে, সমুদ্রে প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রবাহ কমাতে মনোযোগ দিতে হবে। এ জন্য পরিষ্কারের চেয়ে প্লাস্টিক বর্জ্য যেন সমুদ্রে না ফেলা হয়, সে চেষ্টা করতে হবে। প্লাস্টিক বর্জ্যের নানা ধ্বংসাবশেষ অনেক দ্রুত সমুদ্রে প্রবেশ করছে। পরিচ্ছন্নতার ওপর নজর দিলে প্রকৃত অগ্রাধিকার থেকে মনোযোগ সরে যেতে পারে। এ বিষয়ে জার্মানির আলফ্রেড ওয়েজেনার ইনস্টিটিউটের সামুদ্রিক পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানী মেলানি বার্গম্যান বলেন, বাথটাব ভরে পানি নিচে পড়লে তা পরিষ্কারের আগে কল বন্ধ করতে হয়। ঠিক একইভাবে সমুদ্রে যেন বর্জ্য না যায়, সেই বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়া যাবে না।

বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৩৩ বিলিয়ন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে ফেলা হচ্ছে। এসব প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে বছরে ১০ কোটির বেশি সামুদ্রিক প্রাণী মারা যাচ্ছে। ২০২৩ সালের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে বিভিন্ন সমুদ্রে ১৭১ ট্রিলিয়ন টুকরা প্লাস্টিক বর্জ্য ভাসছে। সমুদ্রে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলছে ভারত (১২৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন কেজি) ও চীন (৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন কেজি)। ওয়ান আর্থ জার্নালে এ বিষয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।

আরও পড়ুন

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ২০৬০ সালের মধ্যে প্লাস্টিকের উৎপাদন তিন গুণ বাড়বে সারা বিশ্বে। আর তাই দূষণ রোধ করার সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও কার্যকর উপায় হলো প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার হ্রাস করা। প্লাস্টিকবিরোধী চুক্তি সারা বিশ্বে প্লাস্টিক উৎপাদন কমাতে আইনগতভাবে সহায়ক হবে। সমুদ্রে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলার কারণে পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। প্লাস্টিক অপসারণের জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার করা হলেও সেগুলো পরিবেশের জন্য উপযোগী নয়। আর তাই যান্ত্রিক উপায়ে এসব বর্জ্য পরিষ্কার করা যাবে না।

সমুদ্রের প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কারে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রযুক্তি মাছ, সামুদ্রিক শৈবালসহ বিভিন্ন প্রাণীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যদিও বিজ্ঞানীদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে সমুদ্রে আবর্জনা পরিষ্কার করা অলাভজনক সংস্থা ‘ওশান ক্লিনআপ’। এ বিষয়ে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংস্থাটি জানিয়েছে, সমুদ্রের প্লাস্টিক দূষণ বন্ধের জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। সমুদ্রের বর্জ্য স্থলের বর্জ্যের মতো অপসারণ করা যায় না। সমুদ্রে প্লাস্টিক না ফেললেও প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ হবে না। প্লাস্টিক দূষণ কয়েক দশক ধরে স্থায়ী হয়। প্লাস্টিক সমুদ্রে যত বেশি সময় থাকে, তত বেশি ক্ষতিকারক হয়। ২০৪০ সালের মধ্যে সমুদ্রের ভাসমান প্লাস্টিক দূষণ ৯০ শতাংশ কমানোর জন্য আমরা কাজ করছি।

সূত্র: ইউএসএ টুডে