প্লাস্টিক বর্জ্যের খোঁজ দিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

সমুদ্রে থাকা প্লাস্টিক শনাক্ত করতে সক্ষম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) মডেল তৈরি করেছেন গবেষকেরারয়টার্স

প্রতিদিন লাখ লাখ টন প্লাস্টিক আবর্জনা সমুদ্রে যাচ্ছে। কোনোভাবেই যেন এই সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না। আবর্জনা সমুদ্রে ভেসে ভেসে একসময় ডুবে যাচ্ছে। গবেষকেরা একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) মডেল তৈরি করেছেন, যা সমুদ্রে থাকা প্লাস্টিক শনাক্ত করতে পারে। স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের চিত্র বিশ্লেষণ করে উপকূল অঞ্চল ও সমুদ্রে জমে থাকা প্লাস্টিকের আবর্জনা শনাক্ত করে এআই মডেলটি। শুধু তা–ই নয়, এটি আগের তুলনায় উপগ্রহের ছবি দ্রুত ও কার্যকর উপায়ে বিশ্লেষণ করতে পারে। ফলে সহজেই ভাসমান প্লাস্টিক নির্ভুলভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। স্যাটেলাইটের ছবিতে আংশিক মেঘ থাকলে বা খারাপ আবহাওয়ার কারণে ছবি ঝাপসা হলেও নির্ভুল তথ্য জানাতে পারে মডেলটি।

বর্তমানে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বাড়ার কারণে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ছে, ভবিষ্যতে যা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে শঙ্কা রয়েছে। সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা বা পুনর্ব্যবহার না করার কারণে নদী, হ্রদ বা সমুদ্রে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হচ্ছে। নেদারল্যান্ডসের ওয়েজেনিনঞ্জেন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইকোল পলিটেকনিক ফেডারেল দ্য লুজানের গবেষকেরা এআইভিত্তিক মডেলটি নিয়ে গবেষণা করছেন। এআইভিত্তিক মডেলটির গবেষণাপত্র আইসায়েন্স নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

আরও পড়ুন

গবেষণাপত্রের তথ্যমতে, এআই থেকে পাওয়া তথ্যের কারণে বর্জ্য পরিষ্কারকারী জাহাজের মাধ্যমে সমুদ্র থেকে প্লাস্টিকের আবর্জনা অপসারণের নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেন্টিনেল ২ স্যাটেলাইটের ছবি বিশ্লেষণ করে সামুদ্রিক বর্জ্যের খোঁজ মিলছে। এই স্যাটেলাইট সারা বিশ্বের উপকূলীয় অঞ্চলের ছবি তুলে থাকে। এসব ছবি সংরক্ষণের জন্য কয়েক শত টেরাবাইট জায়গা প্রয়োজন হয়, যা মানুষের পক্ষে দ্রুত বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। নিউরাল নেটওয়ার্কের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেলটির মাধ্যমে এসব তথ্যও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

বিজ্ঞানী মার্ক রুবওয়ার্ম বলেন, ‘নতুন এই মডেল সমুদ্রবিজ্ঞানীদের পাশাপাশি মহাকাশ বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে শিখছে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন স্থানের কয়েক হাজার ছবি প্রতিদিনই ধারণ করছে সেন্টিনেল স্যাটেলাইট। নতুন এআই মডেল বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পেয়েছে। এখন শতভাগ কার্যকর উপায়ে এই মডেল প্লাস্টিকের ধ্বংসাবশেষ চিনতে পারছে। শুধু প্লাস্টিক বর্জ্য নয়, সামুদ্রিক ধ্বংসাবশেষও খুঁজে বের করতে পারে এই মডেল। একটি কম্পিউটার ভিশন অ্যালগরিদমের নকশার ওপর ভিত্তি করে এআই মডেলটি কাজ করছে। এই টুলের সাহায্যে সমুদ্রবিজ্ঞানীরা হারিয়ে যাওয়া জাহাজ কিংবা রিমোট সেন্সিং বিশেষজ্ঞরা গভীর মহাসাগরের তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারবেন।

বিজ্ঞানী মার্ক আরও বলেন, এআই মডেলটি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতেও নির্ভুল তথ্য দিতে পারে। মেঘের উপস্থিতি কিংবা কুয়াশা থাকলেও সামুদ্রিক বর্জ্য বা ধ্বংসাবশেষকে সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারে এই মডেল। ২০১৯ সালের দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে বন্যার পরে প্লাস্টিকের বর্জ্য সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়ে। ভারত মহাসাগরে ছড়িয়ে পড়া সেই প্লাস্টিক বর্জ্য কোথায় অবস্থান করছে, তা জানা যাচ্ছে এই এআই মডেল থেকে।

সূত্র: ফিজিস ডট অর্গ