সুখের রহস্য কোথায় লুকিয়ে আছে

জীবনে সুখে থাকার বেশ কিছু উপায় রয়েছেফাইল ছবি

জীবনে সুখে বা আনন্দে থাকার বিষয়টি বিজ্ঞান নানাভাবে বিশ্লেষণ করে। আর তাই তো সুখের রহস্য উন্মোচনে শত শত বছর ধরে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানী ও দার্শনিকেরা। আর্থার সি ব্রুকস হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের একজন অধ্যাপক। তিনি ২০২৩ সালে মার্কিন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, অভিনেত্রী, সঞ্চালক ও বক্তা অপরাহ উইনফ্রের সঙ্গে যৌথভাবে ‘বিল্ড দ্য লাইফ ইউ ওয়ান্ট: দ্য আর্ট অ্যান্ড সায়েন্স অব গেটিং হ্যাপিয়ার’ নামের একটি বই লিখেছেন। আলোচিত এ বইটিতে তিনি সুখে থাকার জন্য কিছু বৈজ্ঞানিক উপায়ের কথা জানিয়েছেন।

গবেষক আর্থার সি ব্রুকস বলেন, ‘আপনি কার সঙ্গে যুদ্ধ করবেন, তা আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব ও মেজাজ পরিমাপে ব্যবহৃত পিএএনএএস স্কেল ব্যবহার করতে পারেন। এই স্কেল থেকে মানুষ কতটা অনুপ্রাণিত বা কিসে ভয় পান, তার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। অসুখী থাকার বিষয়টি আসলে নেতিবাচক কোনো বিষয় নয়। যেসব কারণে আপনি অসুখী, তা জেনে রাখা ভালো। জীবনে কখনই শতভাগ আনন্দে থাকা সম্ভব নয়। কোনো দিন যদি সব কারণ বা সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, তা হবে বড় একটা ভুল। জীবনযাপনের অন্যতম বড় রহস্য হলো নিজের অস্বস্তি বা অসুখী বিষয়কে গ্রহণ করে ফেলা।’

জীবনে লক্ষ্য অর্জনের জন্য নাবিকদের একটি কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে। এ বিষয়ে আর্থার সি ব্রুকস বলেন, ‘নাবিকেরা যখন তীরে নৌকা ভেড়ান, তখন তাঁরা একটি রম্বস লাইন কল্পনা করেন। আড়াআড়ি নৌকাকে তীরে নিয়ে আসেন নাবিকেরা। আমাদের জীবনের লক্ষ্য এমনই রম্বস লাইনের সামনে রাখতে পরামর্শ দেন তিনি। রম্বস একটি সামান্তরিক, যার বাহু পরস্পর সমান, দেখতে অনেক হীরার মতো। রম্বসের চারটি বাহুর দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান আর কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমকোণে সমদ্বিখণ্ডিত করে।’ তিনি বলেন, ‘আপনি সোজা ছুটবেন একদিকে, কিন্তু লক্ষ্য অর্জিত হবে পরিকল্পনা অনুসারে।

বইটিতে বিজ্ঞানী আর্থার একটি গবেষণার ফল প্রকাশ করেন। তিনটি দলে ভাগ করা মানুষকে নিয়ে এ গবেষণা পরিচালনা করেন তিনি। একটি দলকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অন্য ব্যক্তির উপকার করতে বলা হয়। আরেকটি দলকে অন্য ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সম্পর্কে ইতিবাচক উপায়ে চিন্তা করতে বলা হয়। অপর দলকে নিজের জন্য একটি ইতিবাচক কাজ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। ১০ দিনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা যায় সব দলের সদস্যরা স্বাভাবিকভাবে সন্তুষ্ট বোধ করেছে।’

নিজেকে ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন কিছু কাজ অন্যের জন্য নিঃস্বার্থভাবে করার পরামর্শ দিয়েছেন আর্থার সি ব্রুকস। আশাবাদী হওয়ার বদলে আশার পথ বেছে নিতে পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আশাবাদ এক রকমের ভবিষ্যদ্বাণী ছাড়া আর কিছু নয়। যেমন আমরা বলি সব ঠিক হয়ে যাবে, আসলেই কি সব ঠিক হয়? বিকল্পভাবে বলা যায়, আশার পথে পা রেখে চললে ধীরে ধীরে জীবনের নানা সমস্যা আস্তে আস্তে সমাধান করা যায়। ছোট ছোট কাজ করতে থাকলে বিশাল পাহাড় কাটতে বেশি সময় লাগে না।

বিজ্ঞানী আর্থার ভালোবাসাকে জীবনে বেঁচে থাকার অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে মনে করেন। ভালোবাসার খোঁজ করতে থাকা, সুখের জন্য সাধনা করা সব সময়ই জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই পথচলা অসম্পূর্ণ হলেও দারুণ ও সৃজনশীল হতে পারে। পরিপূর্ণতা খোঁজার পরিবর্তে আনন্দের নানা উপলক্ষে জীবনকে ব্যস্ত রাখতে হবে।’
সূত্র: ভোগ