আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের কৃষ্ণগহ্বর কখন জেগে উঠবে
মহাকাশ মানেই যে মহাবিস্ময়। আবিষ্কারের শেষ নেই সেখানে। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির (ছায়াপথ) একেবারে কেন্দ্রে একটি বিশাল কৃষ্ণগহ্বরে রয়েছে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। ‘স্যাজিটারিজ এ স্টার’ নামে পরিচিত বিশাল এই কৃষ্ণগহ্বরের ভর সূর্যের চেয়ে ৪৩ লাখ গুণ বেশি এবং ব্যাস প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ কিলোমিটার। বিশাল কৃষ্ণগহ্বরেটি সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, চিরদিন কৃষ্ণগহ্বরেটি এমন শান্ত আর সুপ্ত অবস্থায় থাকবে না। কৃষ্ণগহ্বরটির জেগে ওঠার সম্ভাব্য সময় সম্পর্কেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তারা।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, সাধারণভাবে একটি অতিবৃহৎ কৃষ্ণগহ্বর যখন তার চারপাশের ছায়াপথ থেকে বিপুল পরিমাণে গ্যাস ও ধুলো গ্রাস করতে শুরু করে তখন সক্রিয় হয়ে ওঠে। একটি কৃষ্ণগহ্বরকে সক্রিয় হওয়ার জন্য বিস্ময়কর পরিমাণ পদার্থ সরবরাহ করতে হবে। যখন লার্জ ম্যাগেলানিক ক্লাউড নামক একটি বামন ছায়াপথের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটবে, তখন মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থিত কৃষ্ণগহ্বরটি তার পরবর্তী খাদ্য গ্রহণের জন্য জেগে উঠবে। এখন থেকে প্রায় ২৪০ কোটি বছর পরে কৃষ্ণগহ্বরটি সক্রিয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, স্যাজিটারিজ এ স্টার যখন সক্রিয় হবে, তখন প্রচুর পরিমাণে ধুলো ও গ্যাস গ্যালাক্টিক কেন্দ্রে ছড়িয়ে পড়বে। পদার্থের এই আকস্মিক প্রবাহের ফলে স্যাজিটারিজ এ স্টার ৮ গুণ বড় হয়ে যাবে। এ বিষয়ে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী নাথালি ডেগেনার বলেন, কৃষ্ণগহ্বরের দিকে ঘুরতে গিয়ে সেখানকার তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। অতিবেগুনি, এক্স-রে ও ইনফ্রারেড তরঙ্গদৈর্ঘ্যে বিকিরণ করবে। পদার্থ গ্রহণকারী কৃষ্ণগহ্বর গ্যাস ও শক্তির বিশাল ধারা নির্গত করবে। আমরা এই কাঠামো জেট বলি। আপনি এসবকে একধরনের মহাজাগতিক অগ্নিকুণ্ড হিসেবে কল্পনা করতে পারেন। এই সব দ্রুততম জেট আলোর গতির একটি বিশাল অংশে ভ্রমণ করে। বিশাল শক্তির বিস্ফোরণ নির্গত করে যা আমরা পৃথিবীতে রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে দেখতে পারি। যখন এটি ঘটবে, তখন একটি কৃষ্ণগহ্বর সুপ্ত থেকে সক্রিয় হয়ে উঠবে।
স্যাজিটারিজ এ স্টার বর্তমানে সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। এটি খুব কম পদার্থ গ্রহণ করছে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী ক্রিস্টিন ডোন বলেন, কৃষ্ণগহ্বর সর্বাধিক পরিমাণে পদার্থ গ্রাস করতে পারে। একে এডিংটন সীমা বলে। একটি কৃষ্ণগহ্বর যত বড় হবে, এটি একবারে তত বেশি শোষণ করতে পারে। আমাদের ছায়াপথের কৃষ্ণগহ্বরটি তার এডিংটন সীমার নিচে পদার্থ গ্রহণ করছে।
সূত্র: ডেইলি মেইল