আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সঙ্গে রোগের বিস্তারের কোনো সম্পর্ক আছে কি

আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফাইল ছবিরয়টার্স

চতুর্দশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ব্ল্যাক ডেথ নামে পরিচিত বিউবনিক প্লেগের প্রাদুর্ভাবে ইউরোপে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। ইউরোপে প্লেগ রোগের বিস্তার কীভাবে হয়েছিল, তা নিয়ে ইতিহাসবিদ ও বিজ্ঞানীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক রয়েছে। কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সাময়িকীতে প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত অপ্রত্যাশিতভাবে মহামারির মতো কিছু ঘটনাপ্রবাহের জন্ম দিতে পারে। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারি হিসেবে পরিচিত ব্ল্যাক ডেথকে ইউরোপের উপকূলে নিয়ে আসার পেছনে আগ্নেয়গিরির প্রভাবের তথ্য পাওয়া গেছে।

নতুন এ গবেষণায় স্পেনের পাইরেনিস পর্বতমালার গাছের গুঁড়িতে থাকা ঘন বৃত্ত বা ট্রি রিং পর্যালোচনা করে বলা হয়েছে, ১৩৪৫ থেকে ১৩৪৭ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ ইউরোপ অস্বাভাবিক ঠান্ডা ছিল। গ্রীষ্মকালে আর্দ্রতা ছিল বেশি। সম্ভবত ১৩৪৫ সালে এক বা একাধিক আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পরে সূর্যের আলো কম পৌঁছানোয় তাপমাত্রা কমে গিয়েছিল। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খাদ্যসংকট ও দুর্ভিক্ষের সূচনা হয়েছিল।

এ বিষয়ে জার্মানির লাইবনিৎস ইনস্টিটিউট ফর দ্য হিস্টরি অ্যান্ড কালচার অব ইস্টার্ন ইউরোপের ইতিহাসবিদ মার্টিন বাউচ বলেন, খাদ্যসংকটের কারণে তখন অবস্থা বদলে গিয়েছিল। তখন ভূমধ্যসাগর ও কৃষ্ণসাগরজুড়ে দীর্ঘ দূরত্বের বাণিজ্যপথ স্থাপনের কারণে কিছুটা অনাহার প্রতিরোধ করা সম্ভব হলেও শেষ পর্যন্ত বড় বিপর্যয় ঘটেছিল। শস্যবাহী জাহাজের মাধ্যমেই ইউরোপে প্লেগ সৃষ্টিকারী ইঁদুর প্রবেশ করেছিল। এসব ইঁদুর ব্যাকটেরিয়া ইয়েরসিনিয়া পেস্টিসে সংক্রমিত মাছি বহন করত।

গবেষকদের তথ্যমতে, যদিও এ ঘটনার সঙ্গে প্রাকৃতিক, জনসংখ্যাগত, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ঘটনাবলি জড়িত; তবু শেষ পর্যন্ত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতই ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ বিপর্যয়ের পথ প্রশস্ত করেছিল। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী উল্ফ বুন্টজেন বলেন, ব্ল্যাক ডেথের পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জুনোটিক বা প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে সংক্রামক রোগের উত্থান ঘটে।

সূত্র: এনডিটিভি