সাত লাখ বছর নীরব থাকার পর জেগে উঠছে এক আগ্নেয়গিরি
দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের একটি আগ্নেয়গিরি ভূপৃষ্ঠ গত ১০ মাসে প্রায় ৩ দশমিক ৫ ইঞ্চি বা ৯ সেন্টিমিটার ওপরে উঠে এসেছে। এই বৃদ্ধি সামান্য মনে হতে পারে কিন্তু এর তাৎপর্য অনেক। একটি নতুন গবেষণায় উপগ্রহের তথ্য ব্যবহার করে এই পরিবর্তন লক্ষ করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, সেখানে আগ্নেয়গিরির চূড়ার কাছাকাছি চাপ তৈরি হচ্ছে।
আগ্নেয়গিরিটির নাম তাফতান। মানুষের আবির্ভাবের পরের যে ইতিহাস, সেখানে এটি কখনো বিস্ফোরিত হয়নি। নতুন সংকেত বলছে, আগ্নেয়গিরির সিস্টেম সক্রিয় হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা ইনএসএআর পদ্ধতি ব্যবহার করে ভূমি পর্যবেক্ষণ করেছেন। এটি একটি রাডার–নির্ভর পদ্ধতি, যা মহাকাশ থেকে মাটির গতিবিধি পরিমাপ করে। তাঁরা সেন্টিনেল-১ উপগ্রহ ব্যবহার করেছেন তথ্য সংগ্রহের জন্য।
তাফতান আগ্নেয়গিরির উত্থান ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। উত্থানের কেন্দ্র ছিল চূড়ার কাছাকাছি। এই উত্থান আবার নিচে নেমে যায়নি বলে চাপ এখনো প্রশমিত হয়নি বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। স্প্যানিশ ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের ইনস্টিটিউট অব ন্যাচারাল প্রোডাক্টস অ্যান্ড অ্যাগ্রোবায়োলজির গবেষক পাবলো জে গঞ্জালেজ জানান, তাফতান একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। সেখানে ক্রমাগত জিপিএস রিসিভারের মতো স্থলভিত্তিক যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজের সুযোগ নেই। এ কারণে মহাকাশ রাডার দিয়ে নজর রাখা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা ভূপৃষ্ঠের মাত্র ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৭০ ফুট বা ৪৯০ থেকে ৬৩০ মিটার নিচে চাপের তথ্য পেয়েছেন। এই অগভীর স্তর থেকে জানা যায়, সেখানে একটি হাইড্রোথার্মাল সিস্টেমে আগ্নেয়গিরির নিচে গরম পানি ও গ্যাস সঞ্চালিত হয়ে ভেতরে চলাচল করছে ও জমা হচ্ছে। তাফতান আগ্নেয়গিরির গভীরে ম্যাগমা আধার অবস্থিত। এটি দুই মাইলের বেশি নিচে। সেখানে সম্ভবত তাজা ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে ওপরের গ্যাসের কারণে আসছে। এই প্যাটার্ন একটি ধীরগতির চাপের মতো দেখাচ্ছে। প্রথমে ভূমি ওপরে ওঠে আর এরপর নতুন ফাটল তৈরি হয়। এতে কিছু গ্যাস বের হওয়ার পথ খুঁজে পাওয়ায় উত্থানের গতি স্থির হয়ে গেছে।
তাফতান আগ্নেয়গিরি একটি ১২ হাজার ৯২৭ ফুট উচ্চতার স্ট্র্যাটোভলকানো। এটি লাভা ও ছাইয়ের স্তর দিয়ে গঠিত একটি খাড়া আগ্নেয়গিরি। এটি চূড়ার ফিউমারোল বা যেখান থেকে আগ্নেয় গ্যাস নির্গত হয়, সেই সিস্টেম এখনো সক্রিয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বিভিন্ন আগ্নেয়গিরি দীর্ঘ সময় ধরে নিষ্ক্রিয় থাকার পর কয়েক মাসের মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে। এ কারণেই বিজ্ঞানীরা শুধু ছাইয়ের মেঘকে প্রাথমিক সতর্কীকরণ চিহ্ন হিসেবে বিবেচনা করেন না। তাঁরা গ্যাস, তাপ ও মাটির গতিবিধির দিকেও মনোযোগ দেন।
তাফতান আগ্নেয়গিরির ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। গ্যাসের বিস্ফোরণ স্বল্প সময়ের জন্য নিচের দিকে বাতাস প্রবাহিত অঞ্চলের মানুষের চোখ, ফুসফুস ও ফসলের ক্ষতি করতে পারে। আগ্নেয়গিরির কাছের খোশ শহরটি প্রায় ৩১ মাইল। বাতাস অনুকূলে থাকলে সেখান থেকে গন্ধ পাওয়া যাবে। বিজ্ঞানী গঞ্জালেজ বলেন, ভবিষ্যতে এটি কোনো না কোনোভাবে বের হতে বাধ্য।
সূত্র: আর্থ ডটকম