বরফশূন্য হওয়ার ঝুঁকিতে উত্তর মেরু

বরফ শূন্য হতে পারে আর্কটিক সাগরছবি: পিক্সাবে/সিসিজিরো পাবলিক ডোমেইন

আগামী এক দশকের মধ্যে উত্তর মেরু বরফশূন্য হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন সমীক্ষায় এমনটাই দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা। উত্তর মেরু বা আর্কটিক অঞ্চলে আগামী কয়েক বছরে কার্যত কোনো সামুদ্রিক বরফ গ্রীষ্মের সময় দেখা যাবে না।

নেচার রিভিউস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালে প্রকাশিত ফলাফলে এমন ভবিষদ্বাণী করা হয়েছে। উত্তর মেরু বা আর্কটিকের প্রথম বরফশূন্য দিনটি আগের অনুমানের চেয়ে ১০ বছর আগে পৃথিবীবাসী দেখতে পারে। সেই সময় মেরু অঞ্চলটি এক মাস বা তার বেশি সময়ের জন্য বরফমুক্ত থাকবে। পৃথিবীর কার্বন নির্গমণ পরিস্থিতির কারণে এমনটা দেখা যাবে। এই শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ আর্কটিক অঞ্চলে সম্ভবত সেপ্টেম্বরে, মানে গ্রীষ্মের সময় ভাসমান বরফ দেখা যাবে না। তখন এই অঞ্চলের সমুদ্রের বরফের পরিমাণ সবচেয়ে কম থাকবে। এই শতাব্দীর শেষ ভাগে উত্তর মেরুতে বরফমুক্ত ঋতু দেখা যাবে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে এবং কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেশি হলে আমাদের গ্রহের উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলে শীতের সময়েও ধারাবাহিকভাবে বরফশূন্যতা দেখা যাবে।

বিজ্ঞানীরা বরফশূন্য আর্কটিক, মানে পানিতে কোনো বরফ থাকবে না—এমনটা মনে করেন না। গবেষকেরা সমুদ্রে বরফের আকার এক লাখ বর্গকিলোমিটারের কম থাকলে তখন আর্কটিককে বরফমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা দেবেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর্কটিক মহাসাগরে ৩৩ লাখ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র বরফের ছিল। সেপ্টেম্বরে সর্বনিম্ন পরিমাণে বরফ দেখা যায়।

বিজ্ঞানী আলেকজান্দ্রা জাহান বলেন, আর্কটিক মহাসাগর ২০২০ থেকে ২০৩০ সালের দূষণের মাত্রার কারণে আগামী দশক থেকে প্রতিবছর আগস্টের শেষের দিকে বা সেপ্টেম্বরের শুরুতে প্রথমবারের মতো বরফশূন্য হতে থাকবে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণের কারণে সমুদ্রের বরফের ক্ষতি হচ্ছে। তুষার ও বরফের আচ্ছাদন হ্রাস পেলে সমুদ্র দ্বারা শোষিত সূর্যালোকের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ে। এতে আর্কটিকের বরফ গলে যায় আর উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। সমুদ্রের বরফ হ্রাস পেলে আর্কটিক প্রাণীদের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে। সিল ও মেরু ভালুকের জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে। সমুদ্র উষ্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু মাছ আর্কটিক মহাসাগরে চলে যেতে পারে।

সমুদ্রের বরফ হ্রাস পেলে উপকূলীয় অঞ্চলের কাছাকাছি বসবাসকারী প্রাণীদের জন্য ঝুঁকি তৈরি হবে। সমুদ্রের বরফ কমে যাওয়ার কারণে সমুদ্রের ঢেউ বড় হবে, ফলে উপকূলীয় এলাকার ক্ষয় হবে। কার্বন নির্গমণের মাত্রা যেভাবে বাড়ছে, সেই হারে ভবিষ্যতে আর্কটিক এলাকা কখনো না কখনো বরফশূন্য হবেই। এই শতাব্দীর শেষের দিকে উত্তর মেরু অঞ্চল বছরে ৯ মাস পর্যন্ত বরফশূন্য থাকতে পারে। সাদা আর্কটিক অঞ্চলের বদলে আমরা তখন নীল আর্কটিক অঞ্চল দেখতে পাব।

সূত্র: ফিজিস ডটঅর্গ