সমুদ্রের স্রোতের গতি কমে যাচ্ছে, বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের

সমুদ্রের স্রোতের গতি কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরারয়টার্স

ধীরগতির সমুদ্রস্রোতের কারণে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল শুকিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। এর ফলে আগামী কয়েক দশকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের কিছু আর্দ্র এলাকা নাটকীয়ভাবে শুকিয়ে যেতে পারে। এমনকি আমাজনের মতো জায়গায় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় অর্ধেক কমে যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ধীরগতির সমুদ্রের স্রোত নিয়ে গবেষণা করছেন। আটলান্টিক মেরিডিয়োনাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন বা অ্যামক নামের স্রোতের সামান্য ধীরগতি বা দুর্বলতার কারণে বিশ্বব্যাপী বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন তাঁরা। এতে বাস্তুতন্ত্রের স্বাভাবিক অবস্থা বিপন্ন হতে পারে। লাখ লাখ মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন।

বিজ্ঞানী পেদ্রো ডিনেজিও জানান, সমুদ্রের স্রোতের গতি কমে যাওয়ার কারণে ভবিষ্যতে আমাজন রেইনফরেস্টের কিছু অংশে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪০ ভাগ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। অ্যামক স্রোত একটি শক্তিশালী ব্যবস্থা। এই স্রোতের মাধ্যমে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল থেকে উত্তর আটলান্টিকে উষ্ণ ও লবণাক্ত পানির সঞ্চালন হয়। এই প্রবাহ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এই স্রোত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বৃষ্টির বলয়কে ধরে রাখে। বিষুবরেখার কাছে এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়। মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা কারণে সমুদ্রের স্রোত ধীর হচ্ছে। উষ্ণায়নের কারণে বৃষ্টি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমুদ্রের পৃষ্ঠের পানিতে কম লবণাক্ত ও কম ঘন হয়ে যেতে পারে। এই পরিবর্তন অ্যামক স্রোতকে ধীর করে দিতে পারে। আমরা প্রায় ২০ বছর ধরে সরাসরি এই স্রোত পর্যবেক্ষণ করে আসছি। স্রোত পরিবর্তনের প্রাথমিক লক্ষণ ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে।

সমুদ্রের স্রোতের গতি কমে যাওয়ার কারণে ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে, তা আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানী ডিনেজিও বলেন, কয়েক বছর আগে পর্যবেক্ষণের সময় স্রোতের গতি হ্রাস রেকর্ড করা হয়েছে। এখন আবার ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। প্রায় ১৭ হাজার বছর আগে প্রাকৃতিক অ্যামক স্রোত ধীর হয়ে গিয়েছিল। সেই ঘটনা বিভিন্ন হ্রদের তল ও সমুদ্রের পলি পরীক্ষা করে জানা যায়। অতীতের সেই ঘটনার সঙ্গে বর্তমানের তথ্য জলবায়ু মডেলের মাধ্যমে তুলনা করা হচ্ছে। অ্যামক দুর্বল হয়ে পড়লে উত্তর আটলান্টিক ঠান্ডা হয়ে যায়। সেই শীতলতা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আটলান্টিক ও ক্যারিবিয়ানের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক তাপমাত্রার সঙ্গে মিলিত হয়ে সেই স্রোত মধ্য আমেরিকা, আমাজন ও পশ্চিম আফ্রিকায় বৃষ্টির তীব্রতা হ্রাস করে।

বিজ্ঞানী ডিনেজিও বলেন, স্রোত ধীর হওয়ার একটি খারাপ খবর। আমাদের আমাজনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্র রয়েছে। আমাজন প্রায় দুই বছরের সমান বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া কার্বন নির্গমণকে সঞ্চয় করে। এই অঞ্চলে খরা দেখা গেলে বিপুল পরিমাণে কার্বন বায়ুমণ্ডলে চলে যেতে পারে। এতে একটি ভয়াবহ চক্র তৈরি হতে পারে। তখন দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন হতে পারে।

সূত্র: আর্থ ডটকম