ভিনগ্রহের প্রাণীদের পাঠানো সংকেতের খোঁজে বিজ্ঞানীরা
মহাবিশ্বের অন্য কোনো প্রান্তে উন্নত কোনো সভ্যতা রয়েছে কি না, তা নিয়ে আমাদের জানার শেষ নেই। আমরা সাধারণত কল্পনা করি, ভিনগ্রহের কোনো প্রাণীরা হয়তো খুব শান্ত বা সুশৃঙ্খলভাবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করবে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় সেই ধারণা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ডেভিড কিপিং জানিয়েছেন, ‘ভিনগ্রহী সভ্যতার কাছ থেকে আমরা যে প্রথম সংকেতটি পাব তা অনেক বেশি জোরালো, বিশৃঙ্খল এবং কোলাহলপূর্ণ হতে পারে।’ ডেভিড কিপিং তাঁর গবেষণাপত্রে ‘এশতিয়ান হাইপোথিসিস’ নামের একটি ধারণার কথা উল্লেখ করেছেন। এই তত্ত্বের মূল বিষয় হচ্ছে, ‘আমরা মহাবিশ্বে প্রথম যে সভ্যতাটিকে শনাক্ত করব, তা সম্ভবত কোনো স্বাভাবিক বা স্থির অবস্থায় থাকা সভ্যতা হবে না। বরং সেটি হতে পারে এমন একটি সভ্যতা, যারা চরম সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।’
জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটি সাধারণ নিয়ম হলো, আমরা যখন কোনো কিছুর সন্ধান করি, তখন সবচেয়ে চরম ও উজ্জ্বল বস্তু আমাদের চোখে আগে পড়ে। প্রথম আবিষ্কৃত বহির্গ্রহ ছিল পালসার নক্ষত্রের চারপাশে, যা সাধারণ নক্ষত্রের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী সংকেত দেয়। একইভাবে, একটি ধসে পড়া বা সংকটাপন্ন সভ্যতা তাদের শেষ সময়ে যে পরিমাণ শক্তি বা তেজস্ক্রিয়তা বিকিরণ করবে, তা একটি সুস্থ-স্বাভাবিক সভ্যতার চেয়ে অনেক বেশি জোরালো ও শনাক্ত করা সহজ হবে। বিষয়টি বোঝার জন্য সুপারনোভা বা নক্ষত্রের বিস্ফোরণের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। একটি নক্ষত্র যখন তার জীবনের শেষ পর্যায়ে বিস্ফোরিত হয়, তখন তা সাময়িকভাবে একটি পুরো গ্যালাক্সির চেয়েও বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ঠিক তেমনি, কোনো সভ্যতা যখন বড় ধরনের সংকটে পড়বে, তখন তাদের প্রযুক্তিগত সিগন্যাল বা টেকনোসিগনেচার অনেক বেশি জোরালো হতে পারে, যা মহাকাশের সাধারণ শব্দের ভিড়ে সহজেই আলাদা করা যায়।
ভিনগ্রহের প্রাণীদের কাছে মানুষ নিজেদের একটি অস্থির সভ্যতা হিসেবে পরিচিত করে তুলছে কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজ্ঞানী ডেভিড কিপিং। তাঁর মতে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিপুল শক্তির ব্যবহার এমন সব সংকেত তৈরি করছে, যা ভিনগ্রহী প্রাণীদের কাছে পৃথিবীর অস্থিরতা বা সংকটের চিহ্ন হিসেবে ধরা দিতে পারে। আমরা নিজেরাই কি অজান্তে মহাবিশ্বে উচ্চ স্বরে আমাদের বিপদের কথা জানান দিচ্ছি?
সাধারণত বিজ্ঞানীরা মহাকাশে এমন সব রেডিও সিগন্যাল খোঁজেন, যা কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের কাছে পাঠিয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানী কিপিংয়ের মতে, ‘আমাদের উচিত এমন সব অসংগতি খোঁজা, যা সাধারণ কোনো প্রাকৃতিক কারণে ঘটে না। হঠাৎ কোনো নক্ষত্রের আলোর তীব্র পরিবর্তন বা অদ্ভুত কোনো গ্যাসীয় নিঃসরণ হচ্ছে কি না তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এশতিয়ান হাইপোথিসিস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মহাবিশ্বে আমাদের প্রথম আবিষ্কারটি হয়তো রোমাঞ্চকর হওয়ার পাশাপাশি ভীতিকরও হতে পারে।’
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া