মহাবিশ্বের অন্তিম পরিণতি যেমন হতে পারে

মহাবিশ্বছবি: রয়টার্স

মহাবিশ্বের শেষ পরিণতি কেমন হবে? মহাবিশ্ব কি অনন্তকাল ধরে প্রসারিত হতে থাকবে নাকি একদিন সবকিছু ধ্বংস হবে? মহাবিশ্বের অন্তিম পরিণতি কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার একদল বিজ্ঞানী সম্প্রতি ভিন্ন ধরনের তথ্য জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, রহস্যময় ডার্ক এনার্জি বা অন্ধকার শক্তির প্রভাবে মহাবিশ্বের সমাপ্তি হতে পারে এক মহাপ্রলয়ের মাধ্যমে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই সম্ভাব্য পরিণতিকে বলছেন বিগ ক্রাঞ্চ বা মহা সংকোচন।

গত কয়েক দশক ধরে ধারণা করা হচ্ছে, বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে মহাবিশ্বের যে প্রসারণ শুরু হয়েছিল, ডার্ক এনার্জির কারণে তা চিরকাল ত্বরান্বিত হতে থাকবে। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলের ইয়নসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়াং উক লি ও তার দলের নতুন বিশ্লেষণ এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। ১৯৯৮ সালের বিখ্যাত সুপারনোভার তথ্য পুনরায় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ডার্ক এনার্জি আসলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল হয়ে পড়ে। যদি ডার্ক এনার্জি সত্যিই দুর্বল হয়ে যায় তবে একসময় মহাকর্ষ বল শক্তিশালী হবে। তখন মহাবিশ্বের প্রসারণ থেমে গিয়ে উল্টো প্রক্রিয়া শুরু হবে। সেই সময় গ্যালাক্সি একে অপরের থেকে দূরে সরে যাওয়ার বদলে আবার কাছাকাছি আসতে শুরু করবে। এ বিষয়ে অধ্যাপক লি বলেন, ডার্ক এনার্জির এই পরিবর্তন মহাবিশ্বের ভাগ্য পুরোপুরি বদলে দিতে পারে।

আরও পড়ুন

এই বছরের শুরুতে অ্যারিজোনা মরুভূমির একটি টেলিস্কোপে স্থাপিত ডার্ক এনার্জি স্পেকট্রোস্কোপিক ইনস্ট্রুমেন্ট থেকেও কিছু আশ্চর্যজনক তথ্য পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক ওফার লাহাভ জানান, এই তথ্য ইঙ্গিত দিচ্ছে গ্যালাক্সির গতিবৃদ্ধির হার সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। তিনি বলেন, ডার্ক এনার্জির এই হ্রাস-বৃদ্ধি পদার্থবিজ্ঞানের পুরো কাঠামোকেই নাড়িয়ে দিতে পারে।

যদি বিগ ক্রাঞ্চ সত্যি হয়, তবে পৃথিবীতে থাকা মানুষের জন্য প্রথম সংকেত হবে রাতের আকাশ। টেলিস্কোপে দেখা যাবে তখন দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলো আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। মহাকাশে গ্যালাক্সির পুঞ্জীভূত জটলা তৈরি হবে ও বিভিন্ন নক্ষত্র একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে। তখন সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো তাপমাত্রার পরিবর্তন। বর্তমানে মহাকাশের গড় তাপমাত্রা পরম শূন্যের খুব কাছাকাছি। কিন্তু সংকোচনের ফলে কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড বা মহাজাগতিক বিকিরণ উত্তপ্ত হতে শুরু করবে। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ও নাসার তথ্যমতে, এই তাপমাত্রা কয়েক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে।

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চ তাপমাত্রায় হাইড্রোজেন পরমাণু প্রোটন ও ইলেকট্রনে বিভক্ত হয়ে পড়বে। ফলে মহাবিশ্বের সব আন্তগ্যালাকটিক পদার্থ নক্ষত্র এবং গ্রহের সঙ্গে মিশে এক জ্বলন্ত পিণ্ডে পরিণত হবে। শেষ পর্যন্ত পুরো মহাবিশ্ব একটি বিশাল অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হবে। তখন সময় ও স্থান সবকিছুর অস্তিত্বই মুছে যাবে।

এই নতুন তত্ত্ব নিয়ে অবশ্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে তীব্র মতভেদ দেখা যাচ্ছে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক জর্জ এফস্তাথিউ এই তত্ত্বকে দুর্বল বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, সুপারনোভার তথ্যের জটিলতা বা ত্রুটির কারণে এমন ফলাফল আসতে পারে। মূলধারার বিজ্ঞানীদের একটি বড় অংশ এখনো বিশ্বাস করেন যে মহাবিশ্বের প্রসারণ অব্যাহত থাকবে। বিগ রিপ বা ছিঁড়ে যাওয়ার মাধ্যমেই এর সমাপ্তি ঘটবে।
সূত্র: ডেইলি মেইল