মুরগির ভ্রূণে যাচ্ছে ন্যানো প্লাস্টিক

মুরগির খামারফাইল ছবি

অতিক্ষুদ্র ন্যানো প্লাস্টিকের ক্ষতি নিয়ে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময় শঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন। ১ থেকে ১ হাজার ন্যানোমিটার আকারের প্লাস্টিক কণা ন্যানো প্লাস্টিক হিসেবে মানবশরীর ও প্রকৃতির ওপরে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করছে। নতুন একটি গবেষণায় মুরগির ভ্রূণের হৃদ্‌যন্ত্রেও ন্যানো প্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ন্যানো প্লাস্টিক ভ্রূণের রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করার পর ভ্রূণের হৃদ্‌যন্ত্রে পৌঁছে যাচ্ছে।

বিভিন্ন ন্যানো প্লাস্টিক কণা ভ্রূণের হৃদ্‌যন্ত্রে জমা হয়। এসব কণা থেকে বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। যুক্তরাজ্যের লিডেন বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞানী মেইরু ওয়াং ন্যানো প্লাস্টিক কীভাবে মুরগির ভ্রূণের ওপর প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘গবেষণার সময় পরীক্ষামূলকভাবে পলিস্টাইরিন ন্যানো পার্টিকেল মুরগির ভ্রূণে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করাই আমরা। ন্যানো পার্টিকেল অতিক্ষুদ্র। এতটাই ক্ষুদ্র যে এসব কণাকে সাধারণ কোনো অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখা যায় না। এসব কণাকে ফ্লুরোসেন্ট মার্কার বা ইউরোপিয়াম দিয়ে চিহ্নিত করা হয়।’

এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে ন্যানো প্লাস্টিকের অবস্থা নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, বিভিন্ন ন্যানো কণা রক্তনালির দেয়াল অতিক্রম করতে পারে। হৃৎপিণ্ড ও যকৃতে উচ্চমাত্রায় জমা হতে পারে। কিছু ন্যানো প্লাস্টিক কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। ন্যানো প্লাস্টিক এমন একধরনের হার্ট টিস্যুতেও পাওয়া গেছে, যেখানে রক্তনালি নেই, যা ‘অ্যাভাসকুলার হার্ট কুশন’ নামে পরিচিত।

বিজ্ঞানী ওয়াং বলেন, ন্যানো প্লাস্টিক হৃদ্‌যন্ত্রে প্রবেশ করতে পারে। হৃৎপিণ্ডের টিস্যুর মধ্যে প্রবেশ করে হৃৎপিণ্ডের গঠন ও পুনর্নির্মাণে ভূমিকা পালন করে। মানুষের সঙ্গে মুরগির জিনগত মিল রয়েছে। প্রায় ৬০ শতাংশ মুরগির প্রোটিন-কোডিং জিনে অন্তত মানুষের জিনের মতো অর্থলোগ বা বিশেষ জিন দেখা যায়। অর্থলোগ এমন জিন, যা পূর্বপুরুষের জিন থেকে বিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু তারা বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে একই রকম কাজ করে। মুরগির ভ্রূণ মানুষের টিস্যুর মতোই। ভ্রূণ মায়ের জরায়ুর ভেতরে থাকে, যা এক্সট্রাইমব্রায়োনিক ঝিল্লিতে বেষ্টিত। সেখানে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। কিন্তু মায়ের রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে ন্যানো প্লাস্টিক ইনজেকশন প্লাসেন্টাল বাধা অতিক্রম করতে পারে।

ন্যানো প্লাস্টিক আজকাল সর্বত্র দেখা যায়। সমুদ্র–মাটি থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাদ্যশৃঙ্খলে ন্যানো প্লাস্টিক দেখা যায়। ওয়াং বলেন, ‘ভয়ংকর কথা হচ্ছে, মানুষের প্লাসেন্টায় ন্যানো প্লাস্টিক পাওয়ার খবর আছে। আমরা এখনকার গবেষণায় দেখছি, ন্যানো প্লাস্টিকের উচ্চ ঘনত্বের কারণে মুরগির ভ্রূণের হৃদ্‌যন্ত্র, চোখ ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকৃতি ঘটতে পারে। ন্যানো প্লাস্টিকের বিষাক্ততা সম্পর্কে আরও জানতে হবে।

শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত থেকে কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে, সে সম্পর্কে আরও তথ্যের প্রয়োজন আছে। ন্যানো প্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়ার কারণ জানতে পারলে আমরা স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নিয়ে গবেষণা শুরু করব। ন্যানো পার্টিকেল হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত বলে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে।’

সূত্র: ফিজিস ডট অর্গ