মহাকাশে প্রথম সেলফি

মহাকাশে স্পেসওয়াকের সময় প্রথম সেলফি তোলেন বাজ অলড্রিনছবি: সংগৃহীত

মহাকাশ অনুসন্ধানের ইতিহাসে এমন কিছু মুহূর্ত আছে, যা কেবল বৈজ্ঞানিক সাফল্য নয়, মানব ইতিহাসের মাইলফলক হিসেবেও চিহ্নিত হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো মহাকাশে তোলা প্রথম সেলফি। এমন একসময় মহাকাশে সেলফি তোলার ঘটনা জানা যায়, যখন ‘সেলফি’ শব্দটির কোনো অস্তিত্ব ছিল না।

১৯৬৬ সালের একটি আনুষ্ঠানিক ফটোগ্রাফকে কখনো কখনো মহাকাশের প্রথম সেলফি হিসেবে দাবি করা হয়। খোলা মহাকাশে কোনো মহাকাশচারীর নিজের তোলা প্রথম সেলফি ক্যামেরাবন্দী করেন কিংবদন্তী নভোচারী এডউইন ই বাজ অলড্রিন জুনিয়র। সেই ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিল জেমিনি-১২ মহাকাশ অভিযানে। মহাকাশযানের ডকিং কৌশল পরীক্ষা করার লক্ষ্যে ১৯৬৬ সালের ১১ নভেম্বর সেই মিশন উৎক্ষেপণ করা হয়। অভিযানের কমান্ডার ছিলেন জেমস এ লভেল জুনিয়র ও পাইলট ছিলেন বাজ অলড্রিন।

১৯৬৬ সালের ১৩ নভেম্বর অলড্রিন তার তিনটি স্পেসওয়াকের মধ্যে দ্বিতীয়টি শুরু করেন। এটি ছিল একটি ২ ঘণ্টা ৬ মিনিটের তারযুক্ত টিথারড স্পেসওয়াক। এই স্পেসওয়াক চলাকালীন তাঁর মূল কাজ ছিল দৃশ্যমান তারকাক্ষেত্রের ছবি তোলা। কাজের ফাঁকেই অলড্রিন একটি স্বতঃস্ফূর্ত ও ঐতিহাসিক মুহূর্ত তৈরি করেন। তিনি স্পেসস্যুটে থাকা অবস্থায় নিজের একটি ছবি তোলেন। সেই ছবিকেই বলা হয় পৃথিবীর বাইরের প্রথম সেলফি। ছবিতে বাজ অলড্রিনকে মহাকাশের গভীর পটভূমিতে তার স্পেসস্যুট এবং হেলমেটের সম্মুখ অংশসহ দেখা যায়। যদিও ছবিতে মহাকাশযানের কিছু অংশ ও পৃথিবীকে প্রতিফলিত হতে দেখা যায়।

সেলফিতে বাজ অলড্রিন
ছবি: সংগৃহীত

পরবর্তী সময়ে অ্যাপোলো–১১ অভিযানে চন্দ্রভ্রমণ করেন নভোচারী বাজ অলড্রিন। তিনি জানান, তাঁর ঝুলিতে একটি প্রথম কীর্তি রয়েছে। বাজ অলড্রিনের সেই ছবি ১৯৬৬ সালের জেমিনি–১২ অভিযানে দিনের বেলায় তোলা হয়। তিনি একটি আলট্রাভায়োলেট (ইউভি) ক্যামেরা ব্যবহার করছিলেন ছবি তোলার সময়। ছবিতে অলড্রিনকে দেখা যায় তাঁর ব্যবহৃত ইউভি ক্যামেরার পাশে। সেই ক্যামেরা যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নভোচারী কার্ল হেনাইজের মস্তিষ্কপ্রসূত যন্ত্র ছিল। আলট্রাভায়োলেট বিকিরণ তারা শোষিত ও নির্গত বিভিন্ন ধরনের বিকিরণের মধ্যে একটি। ইউভি বিকিরণ ভিন্ন একধরনের রঙের পরিসর, যা আমরা দেখতে পাই না।

জেমিনি ১২ যানে ব্যবহৃত ইউভি ক্যামেরা দেখতে সাধারণ ক্যামেরার মতোই ছিল। সেখানে একটি বিশেষ ইউভি লেন্স ও ফিল্টার ব্যবহার করা হয়, যেন ক্যামেরায় পৌঁছানো ইউভি রশ্মি ছাড়া অন্য সব বিকিরণ ফিল্টার হয়ে যায়। এই ইউভি রশ্মিকে একটি প্রিজমের মাধ্যমে পাঠানো হয়, যেন আলট্রাভায়োলেট আলোর বর্ণালি তৈরি হয়। মিশনে ব্যবহৃত আসল ক্যামেরাটি বর্তমানে স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল এয়ার অ্যান্ড স্পেস মিউজিয়ামের সংগ্রহে রয়েছে।

সূত্র: অ্যামেচার ফটোগ্রাফার