৮ কোটি ৬০ লাখ বছরের পুরোনো ডাইনোসরের ডিমের সন্ধান

ডাইনোসরের ডিমহুবেই ইনস্টিটিউট অব জিওসায়েন্সেসের গবেষক বি ঝাও–এর তোলা ছবি

চীনের কিংলংশান জীবাশ্ম সংরক্ষণাগারে থাকা ২৮টি ডাইনোসরের ডিম প্রায় ৮ কোটি ৬০ লাখ বছর পুরোনো বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। অ্যাটমিক ক্লক পদ্ধতি ব্যবহার করে ডিমগুলোর বয়স অনুমান করা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, অতীতে চীনের ইউনইয়াং বেসিনে বসবাসকারী ডাইনোসর শীতল জলবায়ুর সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছিল। নতুন এ গবেষণার মাধ্যমে সে বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানা যাবে। ডিমের বয়স নির্ধারণে যে পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয়েছে, তার আনুষ্ঠানিক নাম কার্বনেট ইউরেনিয়াম-লেড ডেটিং। এটি কার্বনেট খনিজের বয়স নির্ধারণের একটি সাধারণ প্রক্রিয়া। এই খনিজে ইউরেনিয়াম উপস্থিত থাকে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সিসায় রূপান্তরিত হয়।

গবেষকেরা মাইক্রো-লেজার ব্যবহার করে জীবাশ্ম ডিমের খোসার নমুনা থেকে সূক্ষ্ম অংশ কেটে নেন। এরপর তাঁরা খনিজকে বাষ্পীভূত করে ইউরেনিয়াম ও সিসা পরমাণুর সংখ্যা গণনা করেন। ইউরেনিয়াম থেকে সিসার অনুপাত মূল্যায়ন করে তাঁরা ডিমের বয়স নির্ধারণ করতে সক্ষম হন। ফ্রন্টিয়ার্স ইন আর্থ সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা ফলাফলে বলা হয়েছে, জীবাশ্ম ডিমের খোসায় ক্যালসাইট বা ক্যালসিয়াম কার্বনেটের একটি রূপ শনাক্ত করা হয়েছে। এর ফলে ডিম ইউ-পিবি ডেটিংয়ের জন্য উপযুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই ডিমগুলো কিংলংশান জীবাশ্ম সংরক্ষণাগারের প্রথম নির্ভরযোগ্যভাবে চিহ্নিত জীবাশ্ম। এই সংরক্ষণাগারে তিনটি সাইটের তিন হাজারের বেশি ডিম রয়েছে।

ডিমগুলো কোন ডাইনোসর প্রজাতির, তা এখনো শনাক্ত করা যায়নি। ডিমগুলো সামান্য চ্যাপটা গোলাকার। যার দৈর্ঘ্য ৪.৭ থেকে ৬.৭ ইঞ্চি। খনিজ পদার্থ দিয়ে তৈরি ডিমগুলোর খোসা ২.৪ মিলিমিটারের বেশি পুরু নয়। ডিমগুলোর খোসা তুলনামূলকভাবে বেশি ছিদ্রযুক্ত। এই বৈশিষ্ট্য ক্রিটেশিয়াস পিরিয়ড বা ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর থেকে ১৪ কোটি ৫০ লাখ বছর আগের ডিমে দেখা যায়। তখন পৃথিবী শীতল হতে শুরু করেছিল।

জীবাশ্মবিদেরা প্রায়ই জৈব পদার্থ যে পলিতে সংরক্ষিত থাকে, তার ওপর ভিত্তি করে জীবাশ্মের বয়স অনুমান করেন। যদিও জীবাশ্ম আশপাশে থাকা শিলা, লাভা বা ছাইয়ের স্তরের কারণে বৈশিষ্ট্য হারাতে পারে। নতুন গবেষণাটি জীবাশ্ম ডিমের ক্যালসাইটে ইউ-পিবি ডেটিং পদ্ধতি পরীক্ষা করার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। চীনের হুবেই ইনস্টিটিউট অব জিওসায়েন্সেসের গবেষক বি ঝাও বলেন, ‘আমরা কিংলংশানের ডিমের ওপর নতুন পদ্ধতি পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এত ভালো ও নির্ভরযোগ্য ফলাফল আশা করিনি।’ কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ সায়েন্সেস বিভাগের বিজ্ঞানী হেরিবার্ট রোচিন-বানাগা বলেন, ‘ইউ-পিবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে শিলা ও খনিজগুলোর বয়স নির্ধারণের বিজ্ঞানকে জিওক্রোনোলজি বলে। ইউ-পিবি বিশ্লেষণ এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নির্ভুল গণনা কৌশল।’

গবেষক ঝাও বলেন, সাম্প্রতিক অগ্রগতির ফলে ইউ-পিবি ডেটিং এখন বেশ সহজলভ্য। যদিও এটি এখনো জীবাশ্ম বিশ্লেষণে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় না। এর জন্য বিভিন্ন নমুনাকে অন্য পদার্থের দূষণ থেকে রক্ষা করার জন্য খুব সাবধানে সংগ্রহ ও পরীক্ষা করতে হয়। বিশ্বজুড়ে ২০০টির বেশি ডাইনোসরের ডিমের সাইট রয়েছে। যার মধ্যে মাত্র কয়েকটি সঠিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইউ-পিবি ডেটিং পরীক্ষার মাধ্যমে ডাইনোসরদের ডিম পাড়ার অভ্যাস সম্পর্কে নতুন তথ্য জানা যাবে।

সূত্র: সিএনএন