শহর হয়ে উঠবে পোকামাকড়ের ঘরবসতি

সবুজায়ন করতে পারলে শহরে পোকামাকড়ের উপস্থিতি বাড়ে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষকসংগৃহীত

‘হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে/ তুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে!’—এভাবেই ‘হায় চিল’ কবিতায় ১৯৫৪ সালে জীবনানন্দ দাশ সোনালি ডানার চিলকে ডেকেছিলেন। কলকাতা শহরে বসে বরিশালের ধানসিড়ি নদী আর চিলকে খুঁজছিলেন কি কবি? কবির মতোই আমরা শহরে সেই প্রাণের সন্ধান করি। কিন্তু আমাদের শহরায়ণের নেশায় সব যেন হারিয়ে যাচ্ছে। শহরায়ণের অনেক সংকট। সবুজ গাছ কমে যায়, পাখির কলকাকলি কমে আসে, সন্ধ্যার পরে শোনা যায় না ঝিঁঝির ডাক বা দেখা যায় না জোনাকি পোকা। শহরে সবুজায়ন কীভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় একদল গবেষক অনেক বছর ধরে কাজ করছে। এটা খুব স্বাভাবিক যে গাছের সংখ্যা বাড়লে প্রাণের বসতি বাড়ে। বিজ্ঞান আসলে কী বলে, তা নিয়েই গবেষণা করছে অস্ট্রেলিয়ার গবেষক দল।

নতুন গবেষণা বলছে, কার্যকরভাবে সবুজায়ন করতে পারলে শহরে পোকামাকড়ের উপস্থিতি বাড়ে। ছোট আকারের সবুজ গাছ থাকলেও পরিবর্তন চোখে পড়ে। অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় তিন বছর আগে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় স্থানীয় প্রজাতির গাছ লাগানো হয়। তিন বছর পরে দেখা যায়, সেই এলাকায় পোকামাকড়ের সংখ্যা বেড়ে গেছে সাত গুণ পর্যন্ত। গবেষকেরা জানান, ‘আগে ধারণা ছিল, শহরে গাছ লাগালে প্রাণের আবাস হয়। সেই ধারণার বৈজ্ঞানিক আঙ্গিক খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি আমরা। আমরা দেখেছি, কিছুটা সবুজ বাড়াতে পারলেই সাত গুণ পর্যন্ত পোকামাকড়ের উপস্থিতি বাড়ে।

মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লুইস মাতা জানান, ‘আগের গবেষণাগুলো ছিল পর্যবেক্ষণনির্ভর। এবার আমরা ১৯৫ বর্গমিটার জমিতে মেলবোর্নে রাস্তার পাশে পুরো পরীক্ষা চালিয়েছি। ঘনবসতিপূর্ণ একটি এলাকা আমরা পুরো বিষয়টিকে পরীক্ষার স্থান হিসেবে নির্বাচন করেছি। শহরে যা যা থাকে; যেমন ব্যস্ত রাস্তা, উঁচু ভবন, যানজট—সবই ছিল এই স্থানজুড়ে।’

গবেষকেরা প্রথমে ১২ ধরনের স্থানীয় প্রজাতির গাছ লাগান। গাছ লাগানোর আগে সেই এলাকার পোকামাকড়ের সংখ্যাও গণনা করেন তাঁরা। গাছ লাগানোর কয়েক মাস পর পোকামাকড়ের সংখ্যা বেড়েছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। গবেষকেরা গবেষণাপত্রে লিখেছেন, ৩ বছরের গবেষণা শেষে ৯৪ ধরনের পোকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৯১টি স্থানীয়। এ সময় মাত্র ৯ ধরনের গাছ ব্যস্ত শহরে টিকে ছিল। কিন্তু পোকামাকড় বেড়েছে ৭.৩ গুণ পর্যন্ত। গবেষণা শেষে শিকারি পোকামাকড় ও  পরজীবী মাকড় আলাদা করে সন্ধান করেন তাঁরা।

গবেষক দলের প্রধান মাতা জানান, ‘আমরা দুটি দলের মধ্যে পার্থক্য করে বোঝার চেষ্টা করছি। সাধারণত দেখা যায়, শহরে কোনো একধরনের পোকামাকড়রের সংখ্যা বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে আমরা শিকারি ও পরজীবী—দুটি দলের মধ্যে সমান উপস্থিতি দেখছি। আমরা স্থানীয় গাছপালা রোপণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য অনেক বিদেশি গাছ স্থাপন করা হয়, যা অনেক সময় প্রাণের বিকাশে তেমন আকর্ষণীয় নয়।’

ম্যাকুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কারা থ্রেফাল বলেন, ক্ষুদ্র আকারের সবুজের প্রভাব শহরে বড় আকারে দেখা যায়। বিশেষ করে পাখি প্রজাতি শহরমুখী হতে চায় না। এগুলোর জন্য সবুজের উপস্থিতি ভীষণ জরুরি। গত বছরের কোপ১৫ সম্মেলনে শহরাঞ্চলে সবুজ বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই বিষয়কে কীভাবে গুরুত্ব দেওয়া যায়, তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। ইকোলজিক্যাল সলিউশনস অ্যান্ড এভিডেন্স সাময়িকীতে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান