দৈত্যাকার চিংড়ির সন্ধান

ত্রিমাত্রিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে তৈরি দৈত্যাকার চিংড়ির নকশাদ্য ইনডিপেনডেন্ট

অনেক আমেরিকান মনে করেন, চীনারাই আঠারো শতকের মাঝামাঝি চিংড়ি মাছ নিয়ে আসে। অভিবাসনের জন্য তখন চীনারা চিংড়িসহ অনেক মাছ নিয়ে আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ে ভিড় জমান বলেই এমনটা মনে করতেন আমেরিকানরা।

পুরো পৃথিবীর হিসাবে বলতে গেলে, চিংড়ি মাছ আরও পুরোনো বাসিন্দা। প্রায় ৫০ কোটি বছর আগের চিংড়ির ফসিলের সন্ধান মিলেছে। সেই হিসাবে চিংড়ি ডাইনোসরদেরও বয়োজ্যেষ্ঠ। চিংড়ি পোকা না মাছ, এই নিয়ে ক্লাসে অনেকে তর্ক-বিতর্কের কথা শুনেছেন। কোটি বছর আগের চিংড়ি নিয়ে ভিন্ন একটি গবেষণার ফলাফল জানলে আপনার চোখ কপালে উঠে যেতে পারে।

কোটি কোটি বছর আগে চিংড়ি পোকা ছিল না। আবার মাছের মতোও ছিল না, রীতিমতো দৈত্যাকার ছিল। ক্যামব্রিয়ান সময়কালে সামুদ্রিক চিংড়ি ছিল দৈত্যাকার ও দেখতে ভয়ানক। গবেষকেরা জানান, সেই দৈত্যাকার প্রাণীর দৈর্ঘ্য ছিল তিন ফুটের মতো। অদ্ভুতদর্শন এই সামুদ্রিক দৈত্যের নাম অ্যানোমালোক্যারিস ক্যানাডেনিসিস, যার অর্থ হলো, কানাডা থেকে আসা অদ্ভুতাকার চিংড়ি মাছ। এই প্রাণীর পেছনের দিকে লেজের মতো অংশ ছিল বলে গবেষকেরা মনে করেন।

চিংড়ির মতো দেখতে এই প্রাণীর নখ এখনকার হাতির শুঁড়ের মতো কাজে ব্যবহার করত। হাতি যেমন শুঁড় দিয়ে ফল ধরে খায়, সেই বিশালাকার চিংড়িও অন্য শিকারকে ধরে তেমনই করে খেয়ে ফেলত।  এই প্রাণীর বিশাল নখ ছিল, যা শিকারকে ধরতে ব্যবহৃত হতো। চোয়াল ও চোখের অবস্থান সত্যি সত্যি ভয়ানক ছিল বলে জানান গবেষকেরা। এতক্ষণ যা চিংড়ি মাছ হিসেবে জানলেন, তা আসলে হাঙর।

অ্যানোমালোক্যারিসরা ছিল সেই সময়কার সবচেয়ে বড় সাদা হাঙর। দেখতে ভয়ানক হলেও ছোটখাটো প্রাণী শিকার করত এই চিংড়িরূপী হাঙর। শরীরের জোরের চেয়ে গতিই ছিল এই প্রাণীর টিকে থাকার রহস্য। আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির গবেষক রাসেল বিকনেল জানান, দেখতে ভয়ানক হলেও অ্যানোমালোক্যারিসরা ছোট প্রাণী শিকারে অভিজ্ঞ ছিল। নখ ও শরীরের আকার বড় হলেও খাদ্যশৃঙ্খলে সরল অবস্থান ছিল এদের।

প্রায় ৫৩ কোটি ৮০ লাখ বছর আগে ক্যামব্রিয়ান সময়কাল শুরু হয়। সে সময় প্রথম জটিল প্রকৃতির সামুদ্রিক প্রাণের বিকাশ ঘটে। সেই সময়কার সামুদ্রিক প্রাণীদের সামনের অংশে বিশালাকার নখ দেখা যায়। সেই নখ দিয়ে শিকার ধরে নিজেদের মতো ভেঙেচুরে খাবার হিসেবে গ্রহণের প্রবণতা ছিল তাদের মধ্যে। গবেষকেরা ত্রিমাত্রিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে অ্যানোমালোক্যারিসের শারীরিক অবস্থার নকশা তৈরি করেন। কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডায়নামিকস ব্যবহার করে চিংড়ি মাছের নকশা করেন গবেষকেরা। কানাডার বার্জেস শেল এলাকায় পাওয়া ফসিল গবেষণা করে এ তথ্য প্রকাশ করেন তাঁরা। যুক্তরাজ্যের দ্য রয়েল সোসাইটির গবেষণাপত্রে একটি নিবন্ধে চিংড়ির বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে। এই প্রজাতির প্রথম ফসিল শনাক্ত হয় ১৮৮৬ সালে। কানাডার জিওলজিক্যাল সার্ভের গবেষক রিচার্ড ম্যাককনেল প্রথম মাউন্ট স্টিফেন পর্বত এলাকা থেকে এসব ফসিলের সন্ধান পান।

এদের হাঙর মনে করা হলেও প্রকৃত হাঙর পৃথিবীতে আসে আরও পরে। ৩৮ কোটি বছর আগে ক্ল্যাডোশেলাশে নামের প্রকৃত হাঙরদের প্রকৃতিতে দেখা যায়। এদের ৭টি ফুলকা ছিল। আধুনিক হাঙরের চেয়ে বিশালাকার ছিল সেই সময়ের হাঙরগুলো।

সূত্র: দ্য ইনডিপেনডেন্ট