পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে আসবে বিদ্যুৎশক্তি

আগ্নেয়গিরির গলিত অংশে টানেল খোঁড়ার পরিকল্পনা করছেন একদল বিজ্ঞানীছবি: রয়টার্স

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির (সায়েন্স ফিকশন) বিখ্যাত লেখক জুলভার্নের ‘এ জার্নি টু দ্য সেন্টার অব দ্য আর্থ’ বইটি পড়েছেন অনেকেই। সেই গল্পে আমরা দেখতে পাই, জার্মানির এক পাগল বিজ্ঞানী অটো লিডেনব্রক কীভাবে পৃথিবীর কেন্দ্রে ঘুরতে যান। ভূপৃষ্ঠের নিচের খাদ, সমুদ্র আর নানা ধরনের অদ্ভুত প্রাণীর দেখা মেলে সেই বইতে। কল্পকাহিনির সেই অভিযান আমাদের অনেক চমকের সামনে হাজির করে। সেই কল্পকাহিনি ছাপিয়ে এবার বাস্তবে পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে জিওথার্মাল বা ভূতাপীয় শক্তি সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছেন একদল বিজ্ঞানী। আগ্নেয়গিরির গলিত অংশ যেখানে থাকে সেই ‘ম্যাগমা’ চেম্বারে টানেল খোঁড়ার এক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা।

নতুন এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আইসল্যান্ডের উত্তর-পূর্বে ক্রাফলা আগ্নেয়গিরির গলিত অংশে টানেল খোঁড়া হবে। দ্বীপদেশটির ভূপৃষ্ঠতলের এক থেকে দুই মাইলের মধ্যে ম্যাগমা চেম্বারের অবস্থান। মূলত আইসল্যান্ডের অধিবাসীদের জন্য বিকল্প শক্তির উৎস খুঁজতে ভূতাপীয় শক্তির সন্ধান করছেন বিজ্ঞানীরা। এ পরিকল্পনা সফল হলে আগ্নেয়গিরির ম্যাগমা চেম্বার খনন করা প্রথম দেশ হিসেবে বৈজ্ঞানিক ইতিহাস তৈরি করবে আইসল্যান্ড।

আগ্নেয়গিরির ম্যাগমা চেম্বারের সাধারণ তাপমাত্রা ১ হাজার ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে থাকে। সেই তাপমাত্রা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। বৈজ্ঞানিক এই অনুসন্ধানের কারণে নতুন করে আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত ঘটবে না বলে দাবি করা হয়েছে। কর্মসূচির প্রকল্প ব্যবস্থাপক বোজন গউমুন্ডসন বলেন, ‘প্রথমবারের মতো পৃথিবীর কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। ২০২৬ সালে ক্রাফলা ম্যাগমা টেস্টবেড কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আগ্নেয়গিরির ম্যাগমা চেম্বারে একটি গর্ত খনন করা হবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস বিশ্ববিদ্যালয়ের আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ জন আইচেলবার্গার বলেন, ‘নিম্ন তাপমাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কঠিন একটি কাজ। আগ্নেয়গিরির ম্যাগমা চেম্বার থেকে উচ্চ তাপমাত্রায় শক্তিশালী শক্তি সরবরাহ করার সুযোগ রয়েছে।’

ক্রাফলা বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি অঞ্চল। মিড আটলান্টিক রিজ নামে একটি টেকটোনিক প্লেট সীমানার ওপরে অবস্থিত। যেখানে উত্তর আমেরিকান প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেট মিলিত হয়েছে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে নয়বার অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে এখানে। সিসমোমিটার ব্যবহার করে এরই মধ্যে আগ্নেয়গিরির ম্যাগমা চেম্বারের অবস্থান শনাক্ত করা গেছে।

সূত্র: ডেইলি মেইল