রহস্যময় ভুতুড়ে কণার সন্ধানে বিজ্ঞানীরা

ভুতুড়ে কণা শনাক্তে নতুন উপায় খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরাছবি: রয়টার্স

পদার্থবিজ্ঞানীদের ধারণা, আমাদের চারপাশে রহস্যময় ভুতুড়ে কণা রয়েছে। এই কণা শনাক্ত করা গেলে মহাবিশ্বের অজানা অনেক রহস্য সম্পর্কে জানা যাবে। দীর্ঘদিন চেষ্টার পর ভুতুড়ে কণা আসলেই আছে কি না তা জানতে একটি উপায় খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। ভুতুড়ে কণার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য নতুন একটি পরীক্ষা চালানোর অনুমোদনও দিয়েছে ইউরোপের বৈজ্ঞানিক গবেষণার অন্যতম কেন্দ্র সার্ন।

কণা পদার্থবিদ্যার বর্তমান তত্ত্বকে স্ট্যান্ডার্ড বা আদর্শ মডেল বলা হয়। এই ধারণা অনুসারে মহাবিশ্বের সবকিছু ১৭টি কণার একটি পরিবার নিয়ে গঠিত। ইলেকট্রন ও হিগস বোসনসহ কম পরিচিত কিন্তু আশ্চর্য কণা চার্ম কোয়ার্ক, টাউ নিউট্রিনো ও গ্লুওন এই পরিবারের সদস্য। কোনো কোনো কণা বিভিন্নভাবে যুক্ত হয়ে গোষ্ঠীবদ্ধভাবে কাজ করে। অবিশ্বাস্যভাবে এখনো অনেক ছোট কণা আছে, যা আমাদের পৃথিবী ও মহাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।

রহস্যময় ভুতুড়ে কণা শনাক্ত করা সত্যিই কঠিন। কারণ, ভূতের মতোই এসব কণা সবকিছুর মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারে। ফলে কোনো যন্ত্র দিয়ে কণাগুলো শনাক্ত করা যায় না। কিন্তু নতুন তত্ত্ব অনুসারে ভুতুড়ে কণা স্ট্যান্ডার্ড মডেলের কণায় বিভক্ত হতে পারে। ফলে তখন তা শনাক্ত করা যেতে পারে। নতুন এ গবেষণায় কণাগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটানোর পরিবর্তে একটি বড় ব্লকে বিধ্বস্ত করা হবে।

এ বিষয়ে বিজ্ঞানী যুক্তরাজ্যের ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক আন্দ্রে গোলুটভিন বলেন, এই পরীক্ষা লুকানো কণার সন্ধানে একটি নতুন যুগের সূচনা করবে। শিপ নামের এই পরীক্ষার মাধ্যমে কণা পদার্থবিজ্ঞানের বেশ কয়েকটি প্রধান সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের এমন কণা আবিষ্কারের সম্ভাবনা রয়েছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। ভুতুড়ে কণার সন্ধানের জন্য বিশেষভাবে তৈরি সরঞ্জাম প্রয়োজন। সাধারণ পরীক্ষার জন্য লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার ব্যবহার করা হয়। এই যন্ত্রের মাধ্যমে সংঘর্ষ থেকে এক মিটার পর্যন্ত নতুন কণা শনাক্ত করা যায়। কিন্তু ভুতুড়ে কণা অদৃশ্য থাকতে পারে। এসব কণা বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে ১০ মিটার থেকে কয়েক শ মিটার ভ্রমণ করে থাকে। এ জন্য শিপ পরীক্ষায় ডিটেক্টর যন্ত্র অনেক দূরে স্থাপন করা হবে।

ইমপেরিয়াল কলেজের বিজ্ঞানী মিতেশ প্যাটেল বলেন, ‘নতুন পদ্ধতি বেশ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে প্রয়োগ করা হবে। এসব ভুতুড়ে কণা আমাদের সামনেই আছে। আমরা কখনোই তাদের দেখতে পারি না। আমরা অনুসন্ধানকারী। আমরা বিশ্বাস করি, নতুন আকর্ষণীয় কিছু দেখতে পাব। সার্নের পদার্থবিদ ক্লডিয়া আহদিদার বলেন, সার্নের বিদ্যমান সুবিধার মধ্যে নতুন শনাক্তকারী যন্ত্র তৈরি করা হবে। নতুন পরীক্ষা ২০৩০ সালে করা হবে। নতুন কণার সন্ধান শুরু করতে ১০ কোটি পাউন্ডের মতো খরচ পড়বে।
সূত্র: বিবিসি