প্যাঁচা কতটা বুদ্ধিমান

বছর বয়সী এক প্যাঁচা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির মিলিংটন থেকে তোলাছবি: রয়টার্স

প্যাঁচাকে বেশ এক রহস্যময় কিন্তু আকর্ষণীয় পাখি হিসেবে দেখা হয়। বিভিন্ন সভ্যতায় প্রাচীনকাল থেকেই প্যাঁচাকে প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গ্রিক পুরাণের দেবী অ্যাথেনার প্রতীকে প্যাঁচাকে দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা প্যাঁচার বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা করেছেন। ফলাফলে দেখা যায়, প্যাঁচা অন্য অনেক চতুর পাখির তুলনায় কিছুটা ভিন্ন।

প্যাঁচা ততটা জ্ঞানী বলার চেয়ে কার্যকর বলা যায়। প্যাঁচার মস্তিষ্কের আকার তাদের শরীরের আকারের তুলনায় বেশ ছোট। তাদের মাথার খুলির একটি বিশাল অংশ দখল করে আছে তাদের বিশাল চোখ ও শ্রবণশক্তির জন্য বিশেষ কাঠামো। এদের কর্টেক্স বা মস্তিষ্কের যে অংশ উচ্চতর চিন্তা প্রক্রিয়াকরণের জন্য কাজ করে, তার জন্য অপেক্ষাকৃত কম জায়গা থাকে। প্যাঁচা মূলত বিশেষজ্ঞ শিকারি। তাদের মস্তিষ্ক শিকার ধরার জন্য প্রয়োজনীয় সংবেদনশীল তথ্য প্রক্রিয়াকরণে বিশেষভাবে পারদর্শী। তাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা মূলত নিবদ্ধ থাকে অসাধারণ দৃষ্টিশক্তি ও অতি-সংবেদনশীল শ্রবণশক্তি প্রক্রিয়াকরণের ওপর। প্যাঁচা নিখুঁতভাবে শিকারের অবস্থান নির্ণয় করতে পারে।

বিজ্ঞানীরা যখন প্যাঁচাকে অন্যান্য পাখির সঙ্গে তুলনা করেন, তখন দেখা যায় প্যাঁচা সাধারণ জ্ঞানীয় বা কগনেটিভ পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করে না। কাক ও টিয়াপাখির মতো পাখিরা অনেক বুদ্ধিমান। এসব পাখি রীতিমতো সরঞ্জাম তৈরি করতে পারে, জটিল সমস্যা সমাধান করতে পারে এবং মানুষের ভাষার অনুকরণ করতে পারে। তাদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি ও কার্যকারণ বোঝার মতো ক্ষমতা দেখা যায়।

প্যাঁচার মধ্যে এই ধরনের অভিযোজন বা নমনীয় আচরণ তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়। তারা মূলত তাদের অভ্যন্তরীণ প্রবৃত্তি ও শিকারের দক্ষতার ওপর নির্ভর করে চলে। নতুন পরিবেশে দ্রুত সাড়া দেওয়ার বা নতুন কৌশল উদ্ভাবনের ক্ষমতা তাদের কম। প্যাঁচার খাদ্য লুকানো বা জটিল ধাঁধা সমাধানের মতো কাজে দক্ষতা দেখাতে আগ্রহ দেখা যায় না।

প্যাঁচার দক্ষতা দেখা যায় তার অন্য সব আচরণে। প্যাঁচার পালক এমনভাবে তৈরি যে তারা প্রায় শব্দহীনভাবে উড়তে পারে, যা তাদের শিকারের কাছাকাছি যাওয়ার সময় শব্দ কমাতে সাহায্য করে। এটি পরিবেশগত সমস্যার সমাধান করার চেয়ে বরং একটি শারীরিক অভিযোজন। প্যাঁচার কান মাথার খুলিতে অপ্রতিসমভাবে অবস্থিত। এই গঠন তাদের শব্দ শোনার সামান্যতম পার্থক্য ধরতে সাহায্য করে। ফলে তারা তুষারের নিচে লুকিয়ে থাকা একটি ইঁদুরের অবস্থানও নিখুঁতভাবে চিহ্নিত করতে পারে। এ ধরনের সংবেদনশীল তথ্য প্রক্রিয়াকরণ প্যাঁচাকে তার শিকার ধরার ক্ষেত্রে অন্যান্য পাখির চেয়ে অনেক এগিয়ে রাখে।

সূত্র: নিউ সায়েন্টিস্ট