সর্বোচ্চ উচ্চতায় ওড়া পাঁচ পাখি
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের যে স্তরে বাণিজ্যিক বিমান চলাচল করে, সেই ৩০ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায় কিছু পাখি দেখা যায়। অক্সিজেন খুবই কম আর তাপমাত্রা জমাট বাঁধা শীতল হলেও অনেক উঁচুতে কিছু পাখি দেখা যায়। চরম পরিবেশে টিকে থাকার জন্য এসব পাখির দেহে রয়েছে অবিশ্বাস্য অভিযোজনক্ষমতা। উচ্চতম উচ্চতায় উড্ডয়নের রেকর্ডধারী এমন পাঁচটি অসাধারণ পাখিকে নিয়ে পড়ুন।
রুপেলস শকুন
উচ্চতম উড্ডয়নের বিশ্ব রেকর্ড রয়েছে আফ্রিকার বিশাল শিকারি পাখি রুপেলস শকুনের দখলে। রুপেলস শকুনের উড্ডয়নের সর্বোচ্চ রেকর্ডটি বিশ্বাস করা হয় ৩৭ হাজার ফুট বা ১১ হাজার ৩০০ মিটার। ১৯৭৩ সালে আইভরি কোস্টের আকাশে একটি বিমান ইঞ্জিনে আঘাত হানার পর সেই ইঞ্জিনের মধ্যে মৃত অবস্থায় একটি রুপেলস শকুনকে পাওয়া গিয়েছিল। বিমানটি তখন ৩৭ হাজার ফুট উচ্চতায় ছিল। এই উচ্চতা প্রমাণ করে পাখিটি বিমান চলাচলের সাধারণ সীমা অতিক্রম করে উড়ছিল। এসব শকুন তাদের শক্তিশালী দৃষ্টিশক্তি ব্যবহার করে বিস্তীর্ণ এলাকা পর্যবেক্ষণ করে খাদ্য সন্ধানের জন্য এত ওপরে ওঠে।
সারস
অন্যান্য লম্বা পায়ে হাঁটা পাখির মতো না হলেও, কমন ক্রেইন বা সাধারণ সারস পরিযানের সময় অবিশ্বাস্য উচ্চতায় উড়তে পারে। বৈমানিকদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব পাখি প্রায় ৩৩ হাজার ফুট বা প্রায় ১০ হাজার মিটার উচ্চতায় পরিযানে দেখা যায়। এদের উড্ডয়নের উচ্চতা প্রায়ই হিমালয়ের মতো উঁচু পর্বতমালা অতিক্রম করার সময় প্রয়োজন হয়। এই উচ্চতা তাদেরকে তাদের যাত্রাপথের সবচেয়ে বিপজ্জনক অঞ্চল এড়িয়ে যেতে সাহায্য করে।
বার-হেডেড গুজ
বার-হেডেড গুজকে প্রায়ই হিমালয়ের রাজহাঁস বলা হয়। এদের শারীরিক ক্ষমতা জীববিজ্ঞানের জন্য একটি ধাঁধা বলা যায়। এরা এমন উচ্চতায় ওড়ে, যেখানে অক্সিজেন খুবই কম। এই পাখিরা নিয়মিতভাবে ২০ হাজার ফুট বা ৬ হাজার মিটারের বেশি উচ্চতায় ওড়ে। কিছু রেকর্ড অনুসারে, তারা ২৯ হাজার ফুট বা ৮ হাজার ৮০০ মিটার উচ্চতায়ও পৌঁছাতে পারে। এদের রক্তে বিশেষ ধরনের হিমোগ্লোবিন থাকে, যা বায়ুমণ্ডলের কম চাপে অক্সিজেনকে অত্যন্ত কার্যকরভাবে শোষণ করতে পারে। এই ব্যতিক্রমী শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্য তাদের পর্বতমালাজুড়ে সফলভাবে পরিযান করতে সাহায্য করে।
হুপার সোয়ান
উত্তর ইউরোপ ও এশিয়ার এই রাজহাঁস তাদের পরিযানের সময় অত্যন্ত উঁচুতে ওঠার জন্য পরিচিত। বিশ্বাস করা হয় হুপিং সোয়ান প্রায় ২৭ হাজার ফুট বা ৮ হাজার ২০০ মিটার উচ্চতায় উড়তে পারে। সাধারণত শীতকালে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ অঞ্চলে পরিযান করার সময় তারা অনেক উঁচুতে চলে যায়। এই উচ্চতা তাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য প্রতিকূল বাতাসের স্তর এড়িয়ে মসৃণভাবে উড়তে সাহায্য করে।
আলপাইন চোঘ
অন্যান্য বৃহত্তর পাখিদের তুলনায় আলপাইন চোঘ আকারে ছোট হলেও, তারা উড্ডয়নের উচ্চতায় চ্যাম্পিয়ন বলা যায়। এই পাখি কেবল উঁচুতে ওড়েই না, বরং একবারে ছয় মাস পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে উড়তে পারে। তাদের সর্বোচ্চ রেকর্ডকৃত উড্ডয়ন উচ্চতা হলো ২১ হাজার ফুট বা ৬ হাজার ৪০০ মিটার। এদের প্রায় পুরো জীবনটা আকাশে কাটে। তারা উড়ন্ত অবস্থায় ঘুমায়, খায় এবং এমনকি প্রজননও করে বলে জানা যায়।
সূত্র: বার্ডস্পট