বিড়াল রেগে গেলে বুঝবেন যেভাবে

মানুষের মতোই রাগ-অভিমান প্রকাশ করতে পারে বিড়ালরয়টার্স

জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ গেয়েছেন ‘ও বিড়ালের ছানা/ গা রে গান গানা।’ বিড়ালছানা এই গান শুনে কেমন অভিব্যক্তি দিয়েছিল, তা এত দিন আমাদের অজানা ছিল। এখন বিড়ালের অভিব্যক্তি নিয়ে নতুন এক গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। জানা যাচ্ছে, বিড়াল মানুষের মতোই রাগ-অভিমান প্রকাশ করতে পারে।

গবেষণায় বিড়ালের কান থেকে শুরু করে চোখের মণির আকার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিড়াল প্রায় ৩০০ ধরনের মুখের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারে। বিড়ালেরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের সময় বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহার করে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করে। শুধু তা-ই নয়, ২৬ ভাবে মুখও নাড়াতে পারে। কুকুরের তুলনায় বিড়াল নিজেদের সূক্ষ্ম আচরণের মাধ্যমে ভাব প্রকাশ করে। শুধু একটি কানের ঝাঁকুনি বা চোখ কুঁচকেই নিজের রাগ প্রকাশ করতে পারে বিড়াল। এর আগে হাতে গোনা কয়েকটি গবেষণায় বিড়ালের রহস্যময় ও আবেগময় জীবন ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

গবেষকেরা দেখেছেন, বিড়াল একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য প্রায় ৩০০ ধরনের স্বতন্ত্র মুখের অভিব্যক্তি ব্যবহার করে। বিড়ালের যোগাযোগপদ্ধতি নিয়ে সম্প্রতি বিহেভিওরাল প্রসেসেস জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যের লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিচিকিৎসক ও আচরণবিদ ডেনিয়েল মিলস বলেন, ‘অনেকে এখনো বিড়ালকে ভুলভাবে অসামাজিক প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করে। অথচ দেখা যাচ্ছে, বিড়াল যোগাযোগের জন্য ডাক ছাড়াও নানান অভিব্যক্তি ব্যবহার করছে। আমাদের গবেষণা বলছে, বিড়ালের যোগাযোগপদ্ধতি আগের অনুমানের চেয়ে বেশি জটিল। এখন বন্য উপনিবেশে বসবাসকারী বিড়ালদের মুখের অভিব্যক্তি নিয়ে গবেষণার সুযোগ তৈরি হয়েছে আমাদের।’

বিড়ালের তথ্য সংগ্রহ করতে ইউনিভার্সিটি অব কানসাস মেডিকেল সেন্টারের গবেষক লরেন স্কট প্রায় এক বছর ধরে গবেষণা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে অবস্থিত একটি বিড়াল ক্যাফেতে ৫৩টি বিড়ালের কার্যক্রমের ভিডিওও ধারণ করেছেন এই গবেষক। প্রাপ্তবয়স্ক বিড়ালগুলো সবই ছিল ঘরোয়া ধরনের। ভিডিও থেকে বিড়ালদের মুখের সংকেত বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে ২৬টি মুখের অভিব্যক্তি খুঁজে পাওয়া গেছে। এরপরে আরও বিস্তারিত গবেষণা চালিয়ে ২৭৬টি অভিব্যক্তির সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে কানের অবস্থান পরিবর্তন, চোখ পিটপিট করা, নাক চাটা, নাক-মুখ কুঁচকে ফেলাসহ নানা ধরনের মুখের নড়াচড়া শনাক্ত করা হয়েছে। তুলনামূলকভাবে, মানুষ প্রায় ৪৪ রকমের মুখের নড়াচড়া করতে পারে। অন্যদিকে কুকুর ২৭ ধরনের মুখের নড়াচড়া প্রকাশ করতে পারে। বিড়ালের সব অভিব্যক্তির মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ বা ১২৬টিকে বন্ধুত্বপূর্ণ হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। আর ৩৭ শতাংশ আক্রমণাত্মক ও ১৮ শতাংশ ছিল অস্পষ্ট অভিব্যক্তি।

বিড়ালের মনের ভাব বুঝতে গবেষক দল বিড়ালের কান, চোখ ও গোঁফের দিকে ভালোভাবে তাকানোর পরামর্শ দিয়েছেন। এসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পর্যালোচনা করে বিড়াল ঝগড়া বা মারামারি করতে চাচ্ছে কি না, তা বোঝা সম্ভব।

বিড়ালের আবেগ ও আচরণের ওপর গবেষণা পরিচালনা করা হলেও গবেষকেরা এখনো প্রতিটি অভিব্যক্তির অর্থ সঠিকভাবে জানতে পারেননি। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, বিড়াল চ্যাপটা কান ও পিঠের লোমে কোঁকড়ানো ভাব দিয়ে নেতিবাচক আবেগ প্রদর্শন করে থাকে। বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের সময় বিড়াল তাদের কান ব্যবহার করে। অপছন্দের কোনো বিড়াল সামনে এলে নিজের কান সরিয়ে নেয়। প্রতিকূল পরিবেশ বা সংঘর্ষের সময় বিড়াল প্রায়ই তাদের চোখ ছোট করে ফেলে আর কান চ্যাপটা করে শোনার চেষ্টা করে।
সূত্র: স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন