ফেলনা কফির বর্জ্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে চেয়ার

কফির বর্জ্য থেকে মেটার তৈরি করেছে এমন চেয়ারমেটার

সবকিছুতেই যেন এখন টেকসই না হলে চলছে না। আসবাবপত্র শিল্পে টেকসই প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে নানা কাজ দেখা যাচ্ছে। তবে এবারে এক অদ্ভুত উপকরণের খোঁজ মিলেছে। এসব উপকরণের মধ্যে আছে ফেলে দেওয়া কফির গুঁড়াও। কফি ও কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে চেয়ারও তৈরি করা হয়েছে।

গবেষক ও উদ্যোক্তা সেলিন স্যান্ডবার্গ আসবাবপত্রের জন্য সামুদ্রিক শৈবাল ব্যবহার করার কৌশল উদ্ভাবন করেছেন। চূর্ণ ঝিনুকের খোসা থেকে শুরু করে কৃষির বর্জ্য সেলিন স্যান্ডবার্গ আসবাবপত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য ব্যবহারে সাফল্য পেয়েছেন। সাধারণভাবে মূল্যহীন এমন সব বস্তুকে আসবাবের উপাদান হিসেবে ব্যবহারের পরীক্ষা করেছেন তিনি। আসবাবপত্র তৈরিতে পলিউরেথেন নামে পরিচিত প্লাস্টিকের পলিমারের ব্যবহার কমানোর জন্য কাজ করছেন তিনি। বালিশ, সোফা ও চেয়ারের কুশন তৈরির জন্য পরিবেশবান্ধব উপাদানের সন্ধান করছেন এই বিজ্ঞানী। নরওয়েতে এ কারণে তিনি অসলো-ভিত্তিক অ্যাগ্রোপিন নামের একটি উদ্যোগ চালু করেছেন। ঝিনুকের খোলস ব্যবহার করেও নানা পরীক্ষা করেন তিনি। খোলসের গুঁড়া দিয়ে কুশনের ফোম তৈরিতে সাফল্য পেয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়াও কৃষির বর্জ্য ও কাঠের ফাইবার দিয়ে বিকল্প উপায়ে আসবাব বানানোর পরীক্ষা করছেন তাঁরা।

সেলিন স্যান্ডবার্গ বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে পরীক্ষা করেছি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা অনমনীয় ফোম তৈরি করেছি। নমনীয় ফোম তৈরির কাজ বেশ কঠিন মনে হচ্ছিল আমাদের। অবশেষে আমরা সামুদ্রিক শৈবালকে পাউডারে রূপান্তরিত করে নতুন একটি উপায় বের করেছি। একটি বিশেষ চুলার মাধ্যমে ফোম ব্লক তৈরি করে ফোম উৎপাদন করেছি আমরা। এই ফোম যেকোনো চেয়ারের কুশন হিসেবে ব্যবহার করার জন্য যথেষ্ট নরম। এই ফোম শতভাগ বায়োডিগ্রেডেবল বা জৈব পচনশীল। আপনি যদি এই ফোমকে মাটিতে রেখে দেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবে আট মাসের মধ্যে নিজে থেকেই ক্ষয়প্রাপ্ত হবে।’

সাধারণভাবে কুশনের ফোমে পলিউরেথেন ব্যবহার করা হয়। এতে পলিয়েস্টার থাকে। আবার চামড়ার আসবাবপত্রে সারা বিশ্বে ভিনাইল মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। কানাডার অন্টারিওর ওয়াটারলু ইউনিভার্সিটির রাসায়নিক প্রকৌশলের সহকারী অধ্যাপক ক্রিশ্চিয়ান অয়লার বলেন, প্লাস্টিক সাধারণ হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। প্লাস্টিক খুব ভালোভাবে কাজ করে, প্লাস্টিক সাধারণভাবে উচ্চ মাত্রায় নমনীয়। একে ইচ্ছেমতো নরম বা শক্ত করা যায়। প্লাস্টিকের রাসায়নিক উপাদান তেল পরিশোধনের উপজাত পণ্য থেকে আসে। তাই এটি তৈরি করা বেশ সস্তা। সস্তা হলেও প্লাস্টিকের আসবাব ব্যবহারের পরিবেশগত খারাপ দিক রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সির হিসাবে ২০১৮ সালে ১ কোটি ২০ লাখ টন আসবাবপত্র ফেলে দেওয়া হয়। ২০০০ সালে ৮০ লাখ টন আসবাবপত্র ফেলে দেওয়া হয়। ২০১৮ সালে বাতিল হওয়া আসবাবের প্রায় ৮০ শতাংশ ভূবর্জ্য হিসেবে ফেলা হয়। এসব আসবাবের প্লাস্টিকের অংশ বিনাশ হতে কয়েক শ বছর সময় লাগবে। পলিউরেথেন ফোমের রাবার প্রতিবছর সাড়ে ১০ কোটি টন কার্বন ডাই–অক্সাইড নির্গমনের জন্য দায়ী।

গবেষক ও উদ্যোক্তা সেলিন স্যান্ডবার্গ (বাঁয়ে) আসবাবের জন্য সামুদ্রিক শৈবাল ব্যবহারের কৌশল উদ্ভাবন করেছেন
ছবি: অ্যাগ্রোপিন

এসব কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান বিকল্প উপকরণ খুঁজছে। ড্যানিশ ডিজাইন কোম্পানি মেটার বিশেষ ধরনের চেয়ার তৈরি করেছে। ফেলে দেওয়া কফি ও কাঠের গুঁড়ার মিশ্রণ থেকে এ চেয়ার তৈরি করা হয়েছে। এ চেয়ারের বাইরের অংশ সমুদ্রে ফেলে দেওয়া বর্জ্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কেটিল আরডাল বলেন, ‘আমরা উদ্ভাবনের সঙ্গে সৃজনশীলতার সংযুক্তি পছন্দ করি। এখন টেকসই আসবাব তৈরিতে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়।’

সামুদ্রিক শৈবাল ও ফেলনা কফি ছাড়াও বিশেষ ধরনের ছত্রাকের মাধ্যমে প্লাস্টিক প্রতিস্থাপন করার চেষ্টা চলছে। ছত্রাকের শিকড়-সদৃশ ও শাখা-প্রশাখার কাঠামো মাইসেলিয়াম দিয়ে বায়োনিট তৈরি করা হচ্ছে। এট একটি নতুন ধরনের টেক্সটাইল। যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসল আপন টাইন’স হাব ফর বায়োটেকনোলজি ইন দ্য বিল্ট এনভায়রনমেন্টের গবেষকেরা এই টেক্সটাইল পণ্য তৈরি করেছেন। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান জেন স্কট বলেন, অন্ধকার ও আর্দ্র পরিবেশে ছত্রাক চাষ করে মাইসেলিয়াম  সংগ্রহ করা হচ্ছে। বায়োনিট দিয়ে ইতিমধ্যে ডিজাইনাররা ল্যাম্পশেড তৈরি করেছেন। এ উপাদান ব্যবহারের অনেক সুবিধা আছে। জৈবভিত্তিক হওয়ায় এটি পচে যায়। কোনো আঠা ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না।

টেকসই বিষয় মাথায় রেখে বড় বড় আসবাব তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশবান্ধব বিকল্পের দিকে ঝুঁকছে। নেদারল্যান্ডসের আসবাব তৈরির প্রতিষ্ঠান আইকিয়া ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য ও পুনর্ব্যবহৃত উপকরণ ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছে।
সূত্র: বিবিসি